মাষ্টারদা সূর্য সেন
Set by- Manas Adhikary
মাষ্টারদা সূর্য সেন প্রথম পর্ব। Surya Sen– I
সূর্য সেন। মাষ্টারদা। ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। কল্পনা দত্ত। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন। জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধ। দিপালী সংঘ।
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই, আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো মাষ্টারদা সূর্য সেন। এই পর্বে থাকছে মাষ্টারদা সূর্য সেন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পরবর্তী পর্বে এই টপিক থেকে কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করা হবে। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
মাষ্টারদা সূর্য সেন সংক্ষিপ্ত আলোচনা। About Master Da Surya Sen.
মাষ্টারদা সূর্য সেন ছিলেন এমনই একজন ব্যক্তি যিনি সংসারের মায়াজালে নিজেকে বন্দি না রেখে দেশমাতার উদ্দেশ্যে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। বাংলা তথা ভারতের বিপ্লববাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক ছিলেন চট্টগ্রাম বিদ্রোহের মুখ্য নায়ক 'মাষ্টারদা' সূর্য সেন। আইন অমান্য আন্দোলনের সময় সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বিদ্রোহের ঘটনা সমগ্র ভারতবর্ষে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
1894 সালের 22 মার্চ চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মেছিলেন সূর্যকুমার সেন। পিতা রাজমনি সেন ও মাতা শশীবালা সেনের চতুর্থ সন্তান ছিলেন তিনি। ডাকনাম ছিল কালু। সূর্য সেন চট্টগ্রাম কলেজে আই এ -তে ভর্তি হন। এখানেই তিনি যুক্ত হন বৈপ্লবিক সংগঠন 'অনুশীলন সমিতি' এর সাথে। এরপর পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বি এ পাশ করে 'ন্যাশানাল ওরিয়েন্টাল স্কুলে' শিক্ষকতার কাজে যোগদান করেন। এজন্যই তাঁকে মাষ্টারদা নামে ডাকা হয়। বাংলাদেশে বিপ্লবীরা তখন অনুশীলন ও যুগান্তর এই দুই দলে বিভক্ত ছিলেন। বহরমপুর থেকে ফিরে সূর্য সেন যুগান্তর দলে যোগদান করেন এবং বিবাদমান দলদুটিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। 1919 সালে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে আয়োজিত সভায় সূর্যসেন তাঁর বক্তৃতায় ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হন। 1923 সালে 14 ডিসেম্বর চট্টগ্রাম শহরের বাটালি পাহাড় এলাকায় বিপ্লবীরা সরকারি রেলের 70 হাজার টাকা লুট করে অস্ত্র কেনার জন্য কোলকাতায় টাকা পাঠিয়ে দেন। এই লুটের ঘটনায় যুক্ত ছিলেন অনন্ত সিং, দেবেন দে ও নির্মল সেন। এই ঘটনার পর পুলিশ 24 ডিসেম্বর সুলুকবাহার এলাকায় বিপ্লবীদের সদর দপ্তর হানা দেয়। সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও নগরকানা পাহাড়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। সেখানে ধরা পড়া নিশ্চিত বুঝতে পেরে মাস্টারদা সূর্য সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী ও রাজেন দাস পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন কিন্তু পটাশিয়াম সায়ানাইডের মেয়াদ উত্তীর্ন থাকার জন্য সেগুলির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায় ফলে এই তীব্র বিষ খেয়েও তাঁরা বেঁচে গিয়েছিলেন। প্রায় সাড়ে নমাস কারাবন্দি থাকার পর মুক্তি পান মাষ্টারদা সূর্য সেন। এই মামলায় বিপ্লবীদের হয়ে ওকালতি করেন যতীন্দ্র মোহন।
এই সময় বাংলায় বেশ কয়েকটি বৈপ্লবিক কর্মকান্ড ঘটে যায়। কলকাতার কুখ্যাত পুলিশ কমিশনার চালর্স টেগার্ডকে হত্যার চেষ্টা করেন গোপীনাথ সাহা নামক এক বিপ্লবী। কিন্তু তিনি ভুলবশত টেগার্টের মত দেখতে আর একজন ইংরেজ আর্নেস্ট ডে কে হত্যা করেন। এই অপরাধে তাঁর ফাঁসি হয়। কিছুদিন পর দক্ষিনেশ্বর বোমা মামলায় অভিযুক্ত একদল বিপ্লবী জেলখানায় গোয়েন্দা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মচারী রায়বাহাদুর ভূপেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হত্যা করলে অনন্তহরি মিত্র ও প্রমোদরঞ্জন চৌধুরীর প্রানদন্ড দেওয়া হয়।
এই সময় সবচেয়ে বড় বৈপ্লবিক সশস্ত্র অভ্যুত্থান ঘটে চট্টগ্রামে 1930 সালে। বিপ্লবীরা মাষ্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি নাম একটি দল গঠন করে। 1930 সালে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও কল্পনা দত্ত মাষ্টারদার বিপ্লবী বাহিনীর সাথে পুর্নেন্দু দস্তিদারের মারফত যুক্ত হন। 1930 সালের 18 ই এপ্রিল 65 জন যোদ্ধা নিয়ে মাষ্টারদা রাত দশটার দিকে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করেন। এইসময় তাঁরা টেলিফোনের লাইন কেটে দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে ছিলেন। এই আক্রমনের ফলে সার্জেন্ট ব্ল্যাদকবার্ন, কলোন, সার্জেন্ট মেজর ফেরেল সহ অনেক অফিসার মারা যান। এই আক্রমনের পর রাতের অন্ধকারে অনন্ত সিং, গনেশ ঘোষ, আনন্দ গুপ্ত, জীবন ঘোষ মূল দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বাকি সদস্যদের নিয়ে মাষ্টারদা সুলুক পাহাড়ে আশ্রয় নেন। 19 এপ্রিল সারাদিন এই পাহাড়ে থেকে পরে প্রথমে ফতেহবাদে পরে জালালাবাদ পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। 22 শে এপ্রিল বিকালে ব্রিটিশ বাহিনী জালালাবাদ পাহাড় অভিযান করেন। ব্রিটিশ সৈন্যরা জালালাবাদ পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে, সূর্যসেন তাঁর দলবল নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন এবং এই যুদ্ধের অধিনায়ক হিসাবে লোকনাথকে নিয়োগ করেন। এই আক্রমনে ব্রিটিশ সৈন্যরা প্রথমে পিছু হঠলেও পরে আবার আক্রমন করে। এই জালালাবদের যুদ্ধে মোট 11 জন বিপ্লবী শহীদ হন। তাঁদের মধ্যে 14 বছর বয়সী হরিগোপাল বল (টেগরা বল) সহ নরেশ রায়, ত্রিপুরা সেন, বিধু ভট্টাচার্য, মতি কানুনগো, প্রভাষ বল, শশাঙ্ক দত্ত, নির্মল লালা, জিতেন দাস, মধু দত্ত ও পুলিন ঘোষ মারা যান। এই সময় আহত বিনোদবিহারী চৌধুরী ও বিনোদ দত্ত ও অন্যান্যদের সাথে নিয়ে সূর্যসেন রাতের অন্ধকারে পাহাড় ত্যাগ করে কোয়েপাড়ার বিনয়সেনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। 1931 সালের এপ্রিল মাসে সূর্যসেন মাইন ব্যবহার করে জেলের প্রাচীর উড়িয়ে দিয়ে 32 জন বন্দীকে উদ্ধার করে আদালত ভবন ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেন তিনি। কিন্তু মাইন বসানোর সময় পুলিশের নজরে পড়ে যাওয়ার ফলে পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়। একই বছরের 13 জুন পটিয়ার ধলঘাটে সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে বিপ্লবীরা মিলিত হন। সেখানে আচম্বিত গুর্খা বাহিনী নিয়ে হান দেয় ক্যাপ্টেন কামরুন। এই গুলি সংঘর্ষে নির্মল সেনে গুলিতে ক্যামরুন নিহত হন। পরে শহীদ হয়েছিলেন নির্মল সেন ও অপূর্ব সেন (ভোলা)। প্রীতিলতা ও সূর্যসেন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। জুলাই মাসে সূর্যসেনকে ধরে দেওয়ার জন্য 10000 টাকা পুরস্কার ঘোষনা করেন ব্রিটিশ সরকার।
1932 সালের 24 সেপ্টেম্বর ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমন করে ফেরার পথে প্রীতিলতা এক ইংরেজের গুলিতে আহত হন! ধরা দেবেন না বলে তিনি সাথে রাখা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মৃত্যুবরন করেন। ভারতের মুক্তি সংগ্রামের প্রথম নারী শহীদের নাম প্রীতিলতা।
1933 সালের 2 ফেব্রুয়ারি সুর্য সেন গৈরালা গ্রামে ক্ষিরোদাপ্রভা বিশ্বাসের ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বিপ্লবী ব্রজেন সেনের ভাই বিশ্বাসঘাতক নেত্র সেন ক্যাপ্টেন ওয়ামসলীর হাতে সূর্য সেনকে ধরিয়ে দেয়। 1934 সালের 12 জানুয়ারি তাঁর ফাঁসী হয়।
দিপালী সংঘ
বিশ শতকের গোড়ার দিকে জাতীয় আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গড়া ওঠা নারী সংসঠনগুলির মধ্যে দীপালি সংঘ উল্লেখযোগ্য। 1925 সালে লীলা নাগ ঢাকাতে দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন।
দীপালি সংঘের উদ্যোগে প্রথমে দীপালি বিদ্যালয় এবং 12 টি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। এছাড়া ঢাকার নারীশিক্ষা মন্দির শিক্ষাভবন এবং মুসলিম মহিলাদের জন্য কামারুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়। মাষ্টার সূর্য সেনের সংস্পর্শে দীপালি সংঘ একটি সক্রিয় গুপ্ত সমিতিতে পরিনত হয়। সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে কলকাতায় মহিলা সত্যাগ্রহ সমিতি প্রতিষ্ঠিত হলে তাতে দীপালি সংঘের সদস্যারা যোগদান করেন। দীপালি সংঘ সার্বিক দিকে দ্বৈত ভুমিকা গ্রহন করে। যেমন একদিকে মহিলাদের শিক্ষিত ও আধুনিক করে তোলে তেমনি অন্যদিকে তাদের মধ্যে বিপ্লবী ভাবাদর্শ উদ্ভাসিত করে।
মাষ্টারদা সূর্য সেন দ্বিতীয় পর্ব (অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর )>>>>
বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত, দীনেশ গুপ্ত>>>>
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া Telegram গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
টেলিগ্রাম গ্রুপ এ যোগদান করার জন্য - Click Here
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
ইউরোপের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here
সূর্য সেন। মাষ্টারদা। ইন্ডিয়ান
রিপাবলিকান আর্মি। প্রীতিলতা
ওয়াদ্দেদার। কল্পনা
দত্ত। চট্টগ্রাম
অস্ত্রাগার লুণ্ঠন। জালালাবাদ
পাহাড়ের যুদ্ধ। দিপালী সংঘ।