ষােড়শ মহাজনপদ প্রথম পর্ব
SET BY - MANAS ADHIKARY
ষােড়শ মহাজনপদ প্রথম পর্ব। 16 Mahajanapad MCQ 1st Part.
ষােড়শ মহাজনপদ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর। Mahajanapad 1st part| 16 Mahajanapad MCQ| 16 Mahajanapad.
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো প্রাচীন ভারতের ষােড়শ মহাজনপদ প্রথম পর্ব। এই পর্বে থাকছে এই টপিক থেকে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও ৬২ টি MCQ প্রশ্নোত্তর। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
ষোড়শ মাহাজনপদ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর প্রথম পর্ব । Short Question and Answer on Sixteenth Mahajanpada.
খ্রিস্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতে কোনাে কেন্দ্রীয় রাজশক্তি ছিল না। ভারতে কোনাে অখন্ড সর্বভারতীয় রাষ্ট্র এযুগে ছিল না। একটা অখন্ড রাষ্ট্রের পরিবর্তে ছিল ষােলটি রাজ্য বা ষােড়শ মহাজনপদ। পানিনীর রচনা থেকে জানা যায় এই সময় উত্তরভারতে ৩০ টি জনপদ বা রাজ্য ছিল৷ বৌদ্ধধর্মগ্রন্থ অনুসারে কোনাে ক্ষুদ্র রাজ্যের নাম না থাকলেও ষােড়শ মহাজনপদের উল্লেখ আছে। | প্রাচীন ইন্দো-আর্য রাজনৈতিক গঠনের সুত্রপাত হতে শুরু করে ‘জন’ অর্থ প্ৰজা নামীয় অর্ধ যাযাবর গােত্রসমুহের মাধ্যমে। আর্যদের বিভিন্ন জন বা গােত্রের কথা পাওয়া যায়, যারা অর্ধযাযাবর গােত্রীয় কাঠামােতে বসবাস করত এবং নিজেদের ও অন্যান্য অনার্যদের সাথে গরু, ভেড়া ও সবুজ তৃণভূমি নিয়ে মারামারি করত। এই সুচনালগ্নের বৈদিক ‘জন’ নিয়ে মহাকাব্যয়ী যুগের জনপদ গঠিত হয়। মহাজন পদের আভিধানিক অর্থ বিশাল সাম্রাজ্য। এই মহাজনপদের উল্লেখ বৌদ্ধগ্রন্থে বেশ কয়েকবার পাওয়া যায়। বৌদ্ধ গ্রন্থ অঙ্গুত্তরানিকায় এবং মহাবস্তুতে ১৬ টি মহাজনপদের উল্লেখ পাওয়া যায়, যা বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তারের পুর্বে ভারতের উত্তর ও উত্তরপশ্চিমাংশে উখিত ও বিস্তৃত হয়। এই মহাজনপদগুলির অধিকাংশ রাজতান্ত্রিক হলেও দু-একটি রাজ্যে (যেমন-বৃজি ও মল্ল) প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল। রাজনৈতিক প্রাধান্য বিস্তারের জন্য রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বন্দ্ব ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা লেগেই থাকতাে। ক্রমে চারটি রাজ্য (মগধ, কোশল, অবন্তি ও বৎস্য) অপর রাজ্য গুলিকে গ্রাস করে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তারপর সাম্রাজ্য গঠনের জন্য ঐ চারটি রাজ্য যুদ্ধে লিপ্ত হয়। অবশেষে মগধ এই যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ভারতে প্রথম একটি ঐক্যবদ্ধ সাম্রাজ্য স্থাপন করে। নীচে এই ১৬ টি মহাজনপদকে নিয়ে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল
১) অঙ্গঃ
এই রাজ্যটি ছিল বিহারের ভাগলপুর ও মুঙ্গের জেলা নিয়ে গঠিত, অর্থাৎ পূর্ব বিহার। মহাভারতে অঙ্গ রাজ্যের নাম পাওয়া যায়। কর্ণ ছিলেন এখানকার অধিপতি। চম্পা ও গঙ্গা এই দুই নদী অঙ্গ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছিল। | এর রাজধানী ছিল চম্পা বা মালিনী। বৌদ্ধ সাহিত্যে ভারতের প্রধান ছয় নগরের মধ্যে অন্যতম রাজ্য হিসাবে অঙ্গকে উল্লেখ করা হয়েছে৷ মগধের সঙ্গে অঙ্গের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। পরবর্তীকালে মগধ, অঙ্গ রাজ্যটিকে দখল করে নিয়েছিল।
২. মগধঃ
মগধ ছিল বর্তমান গয়া ও পাটনা জেলা নিয়ে গঠিত। এর আদি রাজধানী ছিল রাজগৃহ বা রাজগীর বা গিরিব্রজ। মগধের মধ্য দিয়েও গঙ্গা প্রবাহিত ছিল | বৌদ্ধ সাহিত্যের মতে খ্রিস্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতকে মগধে হর্ষঙ্ক বংশ রাজত্ব করেছিল। শেষ পর্যন্ত মগধকে কেন্দ্র করে এক সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে।
৩, কাশী
কাশী ছিল ষােড়শ মহাজনপদের এক সমৃদ্ধশালী রাজ্য। এর রাজধানী বারানসী ছিল এক প্রাচীন নগরী। বরুনা ও অসি নামে গঙ্গার দুই শাখা নদী এই নগরকে দুইদিকে থেকে বেষ্টন করেছিল বলে এর নাম বারানসী। কাশীর সাথে কোশল ও অঙ্গ রাজ্যের বিবাদের কথা জাতকে পাওয়া যায়। গৌতম বুদ্ধের সময় কাশী রাজ্যের পতন ঘটে। কোশল, কাশী রাজ্য অধিকার করে।
৪. কোশল
কোশল ছিল কাশী রাজ্যের এক বৃহৎ প্রতিবেশী রাজ্য। উত্তরপ্রদেশের অযােধ্যা অঞ্চল নিয়ে কোশল রাজ্য গঠিত হয়েছিল। অযােধ্যা, সাকেত, শ্রাবস্তী প্রভৃতি বিখ্যাত নগর এই রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। কোশল রাজ্যের চারদিকে ছিল সাদানীর বা গন্ডক নদী। কোশলের রাজধানী ছিল শ্রাবস্তী বা কুশবতী। কোশলরাজ মহাকোশল ছিলেন ইক্ষাকু বংশের সন্তান। মহাকোশলের পর কোশলের সিংহাসনে বসেন প্রসেনজিৎ। তিনি ছিলেন ভগবান বুদ্ধের গুনমুগ্ধ ভক্ত। প্রসেজিতের পর তার পুত্র বিদ্দাহ কোশলের সিংহাসনে বসেন। শেষ পর্যন্ত কোশল রাজ্য মগধ অধিকার করে নেয়।
৫. বৃজি বা বজ্জি
- আটটি গােষ্ঠীর সংঘ নিয়ে নিয়ে বৃজি বা বজ্জি গঠিত হয়েছিল। এটি ছিল একটি স্বয়ংশাসিত প্রজাতান্ত্রিক রাজ্য। এর মধ্যে ছিল লিচ্ছবি, বিদেহ, জ্ঞাতিক, শাক্য প্রভৃতি। শাক্যকূলে জন্মগ্রহন করেন ভগবান বুদ্ধ। জ্ঞাতিক কূলে মাহবীর জন্মগ্রহন করেন। মিথিলা ছিল বিদেহ রাজ্যের রাজধানী। বৈশানী ছিল লিচ্ছবিদের রাজধানী। বৃজির রাজধানী ছিল বৈশালী। মগধের সঙ্গে লিচ্ছবির দ্বন্ধকে উপলক্ষ করে বৃজি মগধের বিরুদ্ধে পক্ষে যােগ দেয়। দীর্ঘযুদ্ধের পর প্রজাতন্ত্ররাজ্য বৃজির পতন ঘটে।
৬. মল্ল
মল্ল রাজ্য ছিল উত্তরপ্রদেশে গােরক্ষপুর জেলায়। এর রাজধানীর নাম ছিল কুশীনগর। এই রাজ্যের অপর নগরের নাম ছিল পাবা৷ মল্ল রাজ্যের অন্যতম নদীর নাম ছিল কাকুথা। কুশীনগর অবস্থিত ছিল হিরন্যবতী নদীর তীরে। ভগবান বুদ্ধ মল্লর কুশীনগরে দেহত্যাগ করেন এবং মহাবীর দেহত্যাগ করেন পাবাপুরীতে। খ্রিস্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতকে মল রাজ্যে প্রজাতান্ত্রিক শাসন প্রচলিত ছিল।
৭. চেদি
চেদি রাজ্য বুন্দেলখন্ড নিয়ে গঠিত। কলিঙ্গরাজ খরবেলের হাতিগুম্ফা লিপি থেকে জানা যায় যে চেদি বংশের একটি শাখা কলিঙ্গ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। চেদির রাজধানী ছিল সুক্তিমতি। পরে মৎস্য চেদির অন্তর্ভুক্ত হয়।
৮. বৎস
বৎস রাজ্য ছিল উত্তরপ্রদেশের গাঙ্গেয় ভূমিতে অবস্থিত। এলাহবাদের কাছে যমুনা নদীর তীরে কোণাধী নগর ছিল এর রাজধানী। বৎস কৃষিতে খুব উন্নত ছিল। তুলা ও তুলাজাত দ্রব উৎপাদন ছিল বৎস রাজ্যের প্রধান শিল্প। বৈদিক যুগে কুরু ও ভরতগােষ্ঠী বৎস রাজ্যে বাস করত বলে জানা যায়। এজন্য বৎসর মানুষজন নিজেদেরকে খুব উন্নত ও সভ্য বলে দাবী করত। বৎস রাজা উদয়ন ছিলেন এ যুগের এক নাটকীয় ব্যক্তিত্ব। হাতি ধরা ছিল তার নেশা। তাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন নাটক রচিত হয় যাদের মধ্যে মহাকবি ভাসের ‘স্বপ্ন বাসবদত্তা, হর্ষবর্ধনের রত্নাবলী ও প্রিয়দর্শিকা উল্লেখযােগ্য। উদয়ন প্রথম বৌদ্ধধর্মের ঘাের বিরােধী ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছিলেন বলে জানা যায়। বৎস রাজ্য শেষপর্যন্ত অবন্তী রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
৯. কুরু
কুরু রাজ্য ছিল বর্তমানে দিল্লীর নিকটে। মহাভারতে ধৃতরাষ্ট্রের বংশ কুরু বংশ নামে পরিচিত। কুরু বংশের সঙ্গে যাদবদের সম্পর্ক ছিল। কুরুর রাজধানী ছিল ইন্দ্রপ্রস্থ। মহাভারতের যুগে হস্তিনাপুর ছিল কুরু রাজ্যের রাজধানী। মায়ের দিক থেকে ভােজ ও পাঞ্চালদের সঙ্গে কুরুদের সম্পর্ক ছিল। পরবর্তকালে কুরু রাজ্য মগধের অধিকারে চলে যায়।
১০. পাঞ্চাল
উত্তরপ্রদেশের গঙ্গাযমুনা ও দোয়াবের কিছু অংশ ও রােহিলাখন্ড নিয়ে পাঞ্চাল রাজ্য গঠিত ছিল। পাঞ্চালের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছিল গঙ্গা ও ভাগীরথী। পাঞ্চাল রাজ্য দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল- উত্তর পাঞ্চাল ও দক্ষিন পাঞ্চাল৷ উত্তরের রাজধানী ছিল অহিছিত্র এবং দক্ষিনের রাজধানী ছিল কাস্পিল্য। পাঞ্চালের রাজা ব্ৰহ্মদত্তের নাম উল্লেখ আছে রামায়ণে। খ্রিস্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতকে কুরু ও পাঞ্চালের মধ্যে প্রায় সর্বদাই যুদ্ধ বিগ্রহ লেগে থাকত।
১১. মৎস
মৎস্য ছিল বর্তমান রাজপুতনার জয়পুর, ভরতপুর ও আলােয়া রাজ্য নিয়ে গঠিত। মহাভারতের খ্যাতিমান বিরাট রাজা ছিলেন এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। মৎস্যের রাজধানী বিরাটনগর। পরবর্তীকালে মৎস্যরাজ্য চেদি-র অন্তর্ভুক্ত হয়।
১২. সুরসেন
সুরসেন ছিল উত্তরপ্রদেশের মথুরা অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। সুরসেনের রাজধানী ছিল মথুরা। মহাভারতের যুগে এ রাজ্যে রাজত্ব করত যদুরা। খ্রিস্ট পূর্ব চতুর্থ শতকে মেগাস্থিনিস এখানে হেরাক্কেল বা কৃষ্ণের উপাসনা কেন্দ্র দেখেছিলেন। সুরসেনের রাজা অবন্তীপুত্র ছিলেন বুদ্ধের অন্যতম প্রধান শিষ্য।
১৩. অস্মক
অস্মক রাজ্যের সঠিক অবস্থান জানা যায় নি। এর রাজধানীর নাম ছিল পােটানাটীকা বা পােজালি। অস্মক রাজ্য গােদাবরী নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। অর্থশাস্ত্রের টিকাকার তটুমিনের মতে আধুনিক মহারাষ্ট্রের প্রাচীন নাম ছিল অস্মক। এই রাজ্যে ইক্ষাকু বংশের রাজারা রাজত্ব করত। এই বংশের উল্লেখযােগ্য রাজা ছিলেন অরুন।
১৪. অবন্তী
অবন্তী ছিল মালব ও মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। এই রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছিল ‘বেত্রবতী’। এই নদী অবন্তী রাজ্যকে উত্তর ও দক্ষিনে দুই ভাগেভাগ করেছিল। উত্তরের রাজধানী ছিল উজ্জয়িনী, দক্ষিনের রাজধানী ছিল মাহিষ্মতী। রাজগৃহ থেকে প্রতিষ্ঠানপুর পর্যন্ত যে রাজপথ ছিল, এই দুই নগর তার উপর অবস্থিত ছিল। ‘পালী’ গ্রন্থ অনুসারে অবন্তীর রাজা ছিলেন চন্ডপ্রদ্যোত। বৎস, কোশল ও মগধের সঙ্গে সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি লিপ্ত হন। খ্রিস্ট পূর্ব চতুর্থ শতকে অবন্তী মগধের অন্তর্ভুক্ত হয়৷
১৫. গান্ধার
মহাভারতের ধৃতরাষ্ট্রের পত্নী ছিলেন গান্ধার দেশের রাজকন্যা। গান্ধার রাজ্য বলতে সিন্ধুনদের পশ্চিমতীরের পাঞ্জাবকে বােঝায়। বর্তমান পাকিস্তানের পেশােয়ার ও রাওয়ালপিন্ডি নিয়ে গান্ধার রাজ্য গঠিত ছিল। খ্রিস্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতকে গান্ধারের রাজা ছিলেন পুকুমাতা। তিনি মগধ রাজা বিম্বিসারের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন এবং তার রাজসভায় দূত পাঠান। খ্রিস্টপউর্ব যষ্ঠ শতকের শেষ দিকে পারসিক রাজা রায়স গান্ধার রাজ্য জয় করেন। গ্রিক | লেখক হেরােডােটাস এবং হেকটায়াসের বিবরন থেকে জানা যায় জে গ্রিকরা গান্ধারকে ‘গান্ডামি’ বলতাে। গান্ধার রাজ্যের রাজধানী ছিল তক্ষশীলা। বাহিতান শিলালিপিতে গান্ধার রাজ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়।
১৬. কম্বােজ
কম্বােজ রাজ্য ছিল ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল বর্তমানে পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমের সীমান্ত প্রদেশের কিছু অংশ, হাজারাে জেলার অন্তর্গত ছিল। কম্বােজের রাজধানী ছিল রাজপুর এবং হাতক। হিউয়েন-সাঙ রাজপুরের কথা উল্লেখ করেছিলেন। আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমনের সময় কম্বােজ রাজ্য ভেঙে গিয়ে সেখানে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় ছােট এবং দুর্বল রাজ্যগুলাে শক্তিশালী রাজ্যের সাথে মিশে গিয়েছিল, না হলে সেগুলি ভেঙে গিয়েছিল। ভগবান বুদ্ধের জীবদ্দশায় যােলােটি মহাজনপদের মধ্যে চারটে রাজ্যের অস্তিত্ব টিকেছিল। যথা- বৎস্য, অবন্তী, কোশল এবং মগধ
মহাজনপদগুলি ছন্দের মাধ্যমে মনে রাখার কৌশলঃ
মল্ল কুরু কাশিতে
অবন্তী তার বৎস,
চেদি বৃজি গান্ধারে
শুরসেন মৎস্য
কম্বােজ অস্মক মগধের অঙ্গ
পাঞ্চাল কোশল ষােলজন সঙ্গ।
যে শব্দগুলির নীচে দাগ দেওয়া আছে সেগুলি হল মহাজনপদ।
ষােড়শ মহাজনপদ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর। Mahajanapad 1st part| 16 Mahajanapad MCQ| 16 Mahajanapad.
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১) খ্রিস্টপূর্ব কত শতকে ভারতের ষােড়শ মহাজনপদের উদ্ভব ঘটে?
- যষ্ঠ
২) মহাজন কথার অর্থ কী?
- বৃহৎ রাজা
৩) ষােড়শ মহাজনপদ কাকে বলা হত?
- খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে সমগ্র ভারতে যে ১৬টি আঞ্চলিক রাজ্যের উদ্ভব হয় তাদেরকে ষােড়শ মহাজনপদ বলা হয়।
৪) কোথা থেকে ষােড়শ মহাজনপদ সম্পর্কে আমরা ভালােভাবে বর্ননা পাই?
- আঙ্গুত্তরনিকায়া
৫) বৈদিক কোন গ্রন্থ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের যুদ্ধের ইঙ্গিত পাওয়া যায়?
- ঐতরেয় ব্রাহ্মন
৬) ষােড়শ মহাজনপদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী মহাজনপদ কোনটি ছিল?
-মগধ
৭) ষােড়শ মহজনপদগুলির মধ্যে কোন মহাজনপদ কালক্রমে সাম্রাজ্যে পরিনত হয়?
- মগধ
৮) পারস্পরিক প্রতিদ্বন্ধীতায় শেষ পর্যন্ত কোন জনপদ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে?
-মগধ
৯) কোন মহাজনপদের প্রথম রাজা ছিলেন বিম্বিসার?
- মগধ
১০) ষােড়শ জনপদগুলির বর্তমান নাম ও রাজধানীর নাম লেখাে?
মহাজনপদ |
বর্তমান নাম |
রাজধানী |
অঙ্গ |
পূর্ববিহার |
চম্পা |
অবন্তী |
মালয় |
উজ্জয়িনী, মহিষ্মতি |
অস্মক |
গােদাবরীর দক্ষিনতীর |
পােটানা/পােটালি |
কম্বােজ |
দক্ষিন-পশ্চিম কাশ্মীর |
রাজপুর |
কাশী |
বারানসী |
বারানসী |
কুরু |
থানেশ্বর; দিল্লী, মিরাট |
ইন্দ্রপ্রস্থ |
কোশল |
অযােধ্যা |
শ্রাবস্তী বা কুশবতী |
গান্ধার |
পেশােয়ার ও রাওয়ালপিন্ডি |
তক্ষশীলা |
চেদি |
যমুনা ও নর্মদার মধ্যবর্তীস্থান |
সুক্তিমতি |
পাঞ্চাল |
বেরিলি, বদায়ুন, ফারাক্কাবাদ |
অহিছিত্র, কাস্পিল্য |
বৎস |
এলাহবাদ |
কৌশাম্বী |
বৃজি |
মজঃফরপুর (উত্তর বিহার) |
বৈশালী |
মগধ |
দক্ষিন বিহার/পাটনা ও গয়া |
রাজগৃহ/পাটলিপুত্র |
মৎস্য |
জয়পুর, আলােয়ার ও ভরতপুর |
বিরাটনগর |
মল্ল |
গােরক্ষপুর |
কুশিনগর/পাবাপুরী |
সুরসেন |
মথুরা |
মথুরা |
১১) ষােড়শ মহাজনপদ গুলির মধ্যে কোন রাজ্যটি আটটি উপজাতীয় গােষ্ঠির সমন্বয়ে তৈরী ছিল?
- বৃজি।
১২) ষােড়শ মহাজনপদ এর মধ্যে মৎস্য রাজ্যটি বর্তমানে ভারতের কোন রাজ্যে অবস্থিত?
- রাজস্থান ।
১৩) যােড়শ মহাজনপদগুলির মধ্যে পাঞ্চাল রাজ্যের দক্ষিনের রাজধানীর নাম কী?
- কামবিল্লা
১৪) উত্তর পাঞ্চালের রাজধানী কি ছিল?
- অহিচ্ছত্র
১৫) ষােড়শ মহাজনপদগুলির মধ্যে মগধ রাজ্যের উল্লেখ প্রথম কোন গ্রন্থে পাওয়া গেছে?
- অথর্ববেদে ।
১৬) ষােড়শ মহাজনপদগুলির মধ্যে দক্ষিনভারতের একমাত্র মহাজনপদটির নাম কী?
- আস্মক
১৭) বৌদ্ধদের কোন গ্রন্থ থেকে যােড়শ মহাজনপদ এর কথা জানা যায়?
- অঙ্গুত্তরানিকায় ও জাতক
১৮) জৈনদের কোন গ্রন্থ থেকে ষােড়শ মহাজনপদের কথা জানা যায়?
- ভগবতী সুত্র
১৯) হিন্দুদের কোন গ্রন্থ থেকে ষােড়শ মহাজনপদের কথা জানা যায়?
-পুরান
২০) ষােড়শ মহাজনপদ এর মধ্যে কোনটি কালক্রমে সাম্রাজ্যে পরিনত হয়
- মগধ।
২১) উত্তরভারতে কয়টি মহাজনপদ গঠিত হয়েছিল?
- ১৫ টি। আস্মক ছিল কেবলমাত্র একটি মহাজনপদ যেটি দক্ষিনভারতে গঠিত হয়েছিল।
22) জনপদীয় যুগে এলাহবাদ কি নামে পরিচিত ছিল?
- বৎস্য
২৩) ষােড়শ মহাজনপদের কোন জনপদটি শিশুনাগ বংশ দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল?
- অবন্তী
২৪) ষােড়শমহাজনপদগুলি প্রধানত ভারতবর্ষের কোন এলাকায় গড়ে উঠেছিল?
- উত্তরপরদেশ, বিহার ও মধ্যপ্রদেশ ।
২৫) ষােড়শ মহাজনপদগুলির মধ্যে কোনগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য ছিল?
- কোশল, অবন্তী, বৎস্য, ও মগধ।
২৬) কোন মহাজনপদে গৌতম বুদ্ধ মারা যান?
- মল্ল।
২৭) আম্রপালি নটী কোন নগরের গনিকা ছিলেন?
- বৈশালী
২৮) মহাসমঘিকা বিদালয়টি নিম্নলিখিত জায়গাগুলির মধ্যে কোনটিতে উখিত হয়েছিল?
- বৈশালী
২৯) ষােড়শ মহাজনপদের বৎস এর রাজা উদয়নকে কেন্দ্র করে কোন সাহিত্য রচিত হয়েছিল?
- ভাসের স্বপ্নবাসদত্তা এবং হর্ষবর্ধনের রত্নাবলী ও প্রিয়দশকিা।
৩০) ভারত আক্রমনকারী প্রথম বিদেশী কে ছিলেন?
- দারিয়াস-1।
৩১) উত্তর ও দক্ষিনাপথের সংযােগস্থলে কোন শহরটি অবস্থিত?
- মথুরা
৩২) মৎস্য মহাজনপদের রাজধানী বিরাটনগর এর বর্তমান নাম কী?
- জয়পুর।
৩৩) রাজা প্রসেনজিত ছিলেন গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক ও বন্ধু। তিনি কোথাকর রাজা ছিলেন?
- কোশল রাজ্যের।
৩৪) তক্ষশিলার দুইপাশে কোন নদী দুটি প্রবাহিত হয়েছে?
- সিন্ধু ও ঝিলম
৩৫) কোন শহরটি প্রাচীন ভারতে অবন্তী নামে পরিচিত ছিল?
- উজ্জয়িনী
৩৬) পূর্বভারতে কোন জনপদটি ছিল?
- কোন জনপদ পূর্ব ভারতে ছিল না। মতান্তরে অঙ্গ (ভাগলপুর) নামক মহাজনপদটি পূর্বভারতে ছিল।
৩৭) ষােড়শ মহাজনপদের মধ্যে কোন কোন মহাজনপদে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল?
- বৃজি ও মল্ল
৩৮) ষােড়শ মহাজনপদের গনতান্ত্রিক রাজ্য কোনটি?
- মল্ল ( বৃজি ছিল প্রজাতান্ত্রিক)
৩৯) মনুসংহিতায় মল্লদের কী বলে অভিহিত করা হয়েছে?
- ব্রাত্যক্ষত্রিয়
৪০) গ্রিকদের বর্ণনায় আম্মকদের কী বলা হয়েছে?
- অস্মকেনেস
১) চন্ডপ্রদ্যোৎ কাকে বলা হয়?
- অবন্তীর রাজা প্রদ্যোতকে
৪২) ষােড়শ মহাজনপদগুলির মধ্যে কতগুলি ছিল রাজতান্ত্রিক?
- ১৪ টি
৪৩) ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে কোন মহাজনপদ গড়ে উঠেছে
- গান্ধার ও কম্বােজ
৪৪) দক্ষিন ভারতে গড়ে ওঠা মহাজনপদের নাম কী?
- অস্মক
৪৫) বৎস্যরাজ উদয়নকে কেন্দ্র করে কোন সাহিত্য রচিত হয়েছে
- ভাসের স্বপ্নবাসবদত্তা এবং হর্ষবর্ধনের রত্নাবলী ও প্রিয়দর্শিকা
৪৬) ষােড়শ মহাজনপদের কোনটি রাষ্ট্রসংঘ নামে পরিচিত?
- বৃজি ( ৩৬ টি গনরাজ্য মিলে বৃজি, অজাতশত্রর লড়াই করেছিল। যদিও পরাজিত হয়। তাই বৃজি রাষ্ট্রসংঘ নামে পরিচিত।
৪৭) প্রসেনজিত কোন ষােড়শ মহাজনপদের রাজা ছিলেন?
- কোশল
৪৮) ষােড়শ মহাজনপদের আমলে কৃষিজ ফসলগুলি কী ছিল?
- ধান, গম, আখ, যব।।
৪৯) ষােড়শ মহাজনপদের আমলে বস্ত্রশিল্প কেন্দ্র হিসাবে কোনটি বিখ্যাত ছিল?
- বারানসী
৫০) দক্ষিন ভারতে লােহার জিনসপত্র দিয়ে কৃষিকাজ শুরু হয় কোন সময়ে?
-ষােড়শ মহাজনপদের সময়।
৫১) ষােড়শ মহাজনপদের আমলে উত্তর ভারতে কয়েকটি পরিচিত জীবিকার নাম লেখাে।
- ধােপা, নাপিত, চিকিৎসক প্রভৃতি
৫২) প্রাচীন ভারতের বেশিরভাগ মহাজনপদ কোথায় অবস্থিত ছিল?
- গঙ্গায়ে উপত্যাকায়।
৫৩) ষােড়শ মহাজনপদের আমলে মদ্য গঙ্গী উপত্যাকায় কী পাওয়া গেছে?
-আকরিক লােহা
৫৪) সুদর্শন হ্রদ কোথায় অবস্থিত ছিল?
- কাথিয়াবাড়ে।
৫৫) প্রাচীন ভারতে ‘জন বলতে কী বােঝানাে হতাে?
- প্রাচীন ভারতে গ্রামের থেকে বড়াে অঞ্চলকে জন বলা হয়।
৫৬) প্রাচীন ভারতে কাকে কেন্দ্র করে রাজ্য গড়ে ওঠে?
- প্রাচীন ভারতে ‘জন কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে রাজ্য।
৫৭) কত খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় উপমহাদেশে ‘জনপদ এর সন্ধান পাওয়া যায়?
-খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে
৫৮) জনপদগুলি কীসে পরিনত হয়?
- মহাজনপদে
৫৯) মহাজনপদের সংখ্যা কয়টি?
- মহাজনপদের সংখ্যা ১৬ টি।
৬০) মহাজনপদগুলি কোথায় গড়ে উঠেছিল?
- গঙ্গা-যমুনা উপত্যকাকে ভিত্তি করে বেশীরভাগ মহাজনপদ গড়ে উঠেছিল।
৬১) মগধ মহাজনপদে কোন তিনটি রাজবংশ শাসন করেছিল?
- হর্ষঙ্ক, শিশুনাগ এবং নন্দ রাজবংশ।
৬২) খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের প্রধান ধর্ম দুটির নাম করাে?
- জৈনধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম
ষােড়শ মহাজনপদ দ্বিতিয় পর্ব >>>>
ষােড়শ মহাজনপদ তৃতীয় পর্ব >>>>
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here
ষােড়শ মহাজনপদ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর। Mahajanapad 1st part| 16 Mahajanapad MCQ| 16 Mahajanapad.