যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় [Bagha Jatin]
Set by- Manas Adhikary
যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রথম পর্ব। Bagha Jatin– I
যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। বাঘা যতীন। রজ অ্যান্ড কোম্পনী লুঠ। মাভেরিক জাহাজ। বালেশ্বর অভিযান। বুড়িবালামের যুদ্ধ।
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই, আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। এই পর্বে থাকছে বাঘা যতীন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পরবর্তী পর্বে কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলচনা করা হবে। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
বাঘা যতীন সংক্ষিপ্তরূপ । About Jatindranath Mukherjee.
সালটা ছিল 1907। অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন জলপাইগুড়ি রেল স্টেশানে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়া এক সহযাত্রীর জন্য দৌড়ে দৌড়ে জল আনার সময় অজান্তেই এক ব্রিটিশ ক্যাপ্টেনকে ধাক্কা মারেন এক বাঙালি যুবক। রাগের চোটে ওই যুবককে চরম অশালীন ভাষা প্রয়োগ করে বেত্রাঘাত করে ওই ক্যাপ্টেন। সেই সময় যুবকটি জল নিয়ে চলে গেলেও কিছুক্ষন পরে ফিরে আসে এবং ক্যাপ্টেনকে প্রশ্ন করেন, তার এহেন ভারতীয়দের প্রতি বিচদ্বেষমূলক আচরনের কারন কী। ক্যাপ্টেন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তার আশেপাশে চলে আসে আরও তিন জওয়ান। চারজন মিলে ওই যুবককে আক্রমন করতে উদ্যত হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঐ চারজনের চোয়াল ভেঙে চারজনকেই প্ল্যাটফর্মে ধরাশায়ী করেছিলেন ওই যুবক। এই অপরাধে তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। আদালত উল্টে তীব্র ভৎসনা করে ঐ ব্রিটিশ সেনাদেরকে। বিপুল সমালোচনার মুখে সরকার চাপে পড়ে মামলা প্রত্যাহার করে নেন এবং আদালতে কক্ষে সেনাদেরকে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
সেই যুবক আর কেউই না, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম অগ্রনী ভুমিকা নেওয়া বীর বাঙালি যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, বিশ্ব যাকে বাঘা যতীন নামে চেনে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবের নায়ক।
বীর বিপ্লবী বাঘা যতীন বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়ায় 1879 সালের 7 ডিসেম্বর জন্মগ্রহন করেন। খুব ছোটবেলায় তাঁর বাবা উমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় মারা যান। ছোটবেলা থেকেই বাঘা যতীনকে সাহসী করে তোলার পেছনে ছিলেন তাঁর মা শরৎশশী, যিনি ছিলেন একজন স্বভাবকবি ও নিবেদিত সমাজসেবিকা।
শৈশব থেকে শারীরিক শক্তির জন্য বিখ্যাত ছিলেন যতীন্দ্রনাথ। সেইসঙ্গে প্রচন্ড ডাকাবুকো বলেও নামডাক ছিল। মামার বাড়িতে গিয়ে তিনি কেবলমাত্র একটি ভোজালির সাহায্যে একটা পূর্নাঙ্গ বাঘ মেরেছিলেন। বাঘের আক্রমনে ক্ষতবিক্ষত ভাগনাকে মামা ফনিবাবু তখনকার কলকাতার সেরা চিকিৎসক ডাক্তার সুরেশপ্রসাদের কাছে নিয়ে যান। ছেলেটির বীরত্বের স্বীকৃতি হিসাবে ডঃ সুরেশপ্রসাদ তাঁর নাম দেন 'বাঘা যতীন'।
ছাত্রাবস্থায় যতীন্দ্রনাথ সিস্টার নিবেদিতার আয়োজিত একটি ত্রান শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন। সেইসুত্রে তাঁর পরিচয় হয় বিবেকানন্দের সাথে। স্বামী বিবেকানন্দই যতীন্দ্রনাথকে নির্দেশ দিয়েছিলেন 'লোহার পেশী' এবং 'ইস্পাতের স্নায়ু’ সহ নিবেদিত যুবকদের একত্রিত করতে যাঁরা মাতৃভূমির সেবায় নিবেদিত থাকবেন। পরবর্তীকালে, ঋষি অরবিন্দ তাঁকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিপ্লবের জন্য নিবেদিত যুবকদের প্রশিক্ষনের জন্য একটি 'গোপন সমাজ' তৈরীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই গোপন সমাজ পরবর্তীকালে যুগান্তর দল নামে পরিচিতি লাভ করে এব্য বাঘা যতীন এর সর্বাধিনায়ক হয়েছিলেন।
1908 সাল। তখন যতীন আপাদমস্তক বিপ্লবী। এসময় যতীনসহ কয়েকজন বিপ্লবীকে আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িত করা হয়। কিন্তু সাক্ষ্য প্রমানের অভাবে যতীন এবং নরেনকে (মানবেন্দ্র নাথ রায়) অব্যাহতি দেওয়া হয়।
কর্মসূত্রে তিনি ছিলেন বাংলার গভর্নরের ব্যক্তিগত নির্বাহী। তবে বেশিদিন তিনি দুদিক সামলাতে পারেন নি। যতীনের পরিকল্পনায় বিপ্লবীদের হাতে অকালেই মারা পড়তে হয় গভর্নরকে। ঐতিহাসিক হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হন যতীন। প্রলোভনের পাশাপাশি চলে নিষ্ফল তুমুল অত্যাচার। উপযুক্ত প্রমানের অভাবে গ্রেপ্তারের এক বছর পর ছেড়ে দিতে হয় যতীনকে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে দিদি, বৌ-বাচ্ছাসহ ফিরে আদিনিবাস ঝিনাইদহ ফিরে ব্যবসায় মন দেন। ব্রিটিশ সরকার ভাবে যতীন শুধরে গেছে। কিন্তু যতীনের ভাবনা তখন সমগ্র ভারত নিয়ে। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রস্তাবিত কাঠামোর বিরোধিতা করে পূর্ন স্বাধীনতা অর্জনের জন্য নিবেদিত এক প্রান হয়ে উঠেন বাঘা যতীন। 1912 সালে কলকাতা সফরকালে জার্মান যুবরাজের সঙ্গে দেখা করেছিলেন যতীন এবং তাঁকে ভারতে বিপ্লবের জন্য অস্ত্র সরবরাহের জন্য অনুরোধ করেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ইউরোপে অবস্থানরত ভারতীয় বিপ্লবীরা ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি গঠনের উদ্দেশ্যে বার্লিনে সমবেত হন এবং তারা এতে জার্মানির সাহায্য কামনা করলে জার্মান সরকার সম্মত হয়। যতীনকে বালেশ্বরে গোপন জায়গায় রেখে নরেন বাটাভিয়া যান এবং সেখানে জার্মান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জাহাজে অস্ত্র পাঠানো ও অর্থনৈতিক সাহায্য বিষয়ে আলোচনা করেন। যতীন ও তাঁর সহযোগীরা জার্মান থেকে আসা অস্ত্রের চালান গ্রহনের জন্য বালেশ্বরের নিকট ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার কাপ্তিপদা গ্রামে অবস্থান নেন। ব্রিটিশ সরকারের কাছে এ তথ্য পৌঁছে গেলে তারা দেরি না করে অভিযানে নেমে পড়ে। ব্রিটিশ অভিযানের খবর এসে পৌঁছায় বিপ্লবীদের কাছেও। যতীন ও তার দল ময়ূরভঞ্জের রুক্ষ ভুখন্ড দিয়ে দুদিন পায়ে হেঁটে বালেশ্বর স্টেশানে পৌঁছেছিলেন। তাঁরা বালেশ্বরের চশখন্ড গ্রামের একটি টিলাতে 1915 সালের 9 সেপ্টেম্বর আশ্রয় নিয়েছিলেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী বুড়িবালাম নদীর তীরে চার সহযোগী নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন যতীন। উদ্দেশ্য জার্মান অস্ত্র ব্যবহার করে বালেশ্বর রেললাইন দখল করে ব্রিটিশ সেনাদের মাদ্রাজ থেকে কলকাতা যাত্রা বন্ধ করা। কিন্তু পুরস্কারের লোভে গ্রামবাসীরা পুলিশকে খবর দেয়। ব্রিটিশ পুলিশের এক বিশাল ব্যাটেলিয়ান চারদিক থেকে পাঁচ বিপ্লবীর ওপর আক্রমন চালায়। তবে বিনা লড়াইতে প্রান দেননি কেউই। প্রায় দুঘন্টা ব্যাপী গুলির লড়াই হয়। যতীনের তলপেটে গুলি লাগে এবং পরের দিন 10 সেপ্টেম্বর 35 বছর বয়সে প্রায়ত হন এই মহানায়ক। শেষ হয় এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি মহান অধ্যায়। বিখ্যাত ব্রিটিশ পুলিশ কর্তা চালর্স টেগার্ট তার সহকর্মীদের একবার বলেন যে 'বাঘা যতীন যদি একজন ইংরেজ হতেন তবে তাঁর মূর্তিটি সেন্ট্রাল লন্ডনের ট্রাফলগার স্কোয়ারে নেলসনের মলামের পাশে তৈরী করা হত।'
বাঘা যতীন দ্বিতীয় পর্ব (অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর )>>>>
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া Telegram গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
টেলিগ্রাম গ্রুপ এ যোগদান করার জন্য - Click Here
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
ইউরোপের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here
যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। বাঘা যতীন। রজ অ্যান্ড কোম্পনী লুঠ। মাভেরিক জাহাজ। বালেশ্বর অভিযান। বুড়িবালামের যুদ্ধ।