ক্ষুদিরাম বসু
Set by- Manas Adhikary
ক্ষুদিরাম বসু প্রথম পর্ব। Khudiram Bose – I
ক্ষুদিরাম বসু। প্রফুল্ল চাকী। ক্ষুদিরাম বসুর প্রকৃত নাম। প্রফুল্ল চাকীর প্রকৃত নাম। ক্ষুদিরাম বসুর রাজনৈতিক গুরু। মুজফফরপুর মামলা। সর্বকনিষ্ঠ শহীদ। বাংলার প্রথম শহীদ।
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই, আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো ক্ষুদিরাম বসু। এই পর্বে থাকছে ক্ষুদিরাম বসু সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কিছু অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর। পরবর্তী পর্বে কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলচনা করা হবে। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
ক্ষুদিরাম বসু সংক্ষিপ্তরূপ । About Khudiram Bose.
1889 খ্রীষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে মেদিনিপুরের হাবিবপুর গ্রামে ক্ষুদিরামের জন্ম হয়। তাঁর পিতা ছিলেন ত্রৈলক্যনাথ বসু এবং মাতা ছিলেন লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী। 1895 খ্রীস্টাব্দে তাঁর পিতা ত্রৈলক্যনাথ বসু এবং মাতা লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর মৃত্যু হলে তিনি তাঁর বড়দিদি অপরূপার কাছে লালিত পালিত হন। গ্রামের বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর তিনি তমলুকের হ্যামিলটন স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু 1902 খ্রিষ্টাব্দে তাঁর ভগ্নী।পতি অমৃত, তাঁকে নিয়ে মেদিনীপুর শহরে চলে এলে তাঁকে হ্যামিলটন স্কুল ছাড়তে হয়। 1903 সালে মেদিনীপুরে তিনি মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন এবং অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত তিনি শিক্ষা লাভ করেন।
1902 খ্রীস্টাব্দে তিনি বিপ্লবীদের একটি নবগঠিত দল 'যুগান্তরে' যোগদান করেন। 1902-03 খ্রীষ্টাব্দে যখন বিপ্লবী নেতা শ্রী অরবিন্দ এবং সিস্টার নিবেদিতা মেদিনীপুর ভ্রমন করে জনসম্মুখে বক্তব্য রাখেন, তখন তাঁদের এই বক্তব্য শুনে ক্ষুদিরাম বিপ্লবে যোগ দিতে বিশেষভাবে অনুপ্রানিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ঋষি রাজনারায়ন বসুর ভাইয়ের ছেলে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সান্নিধ্যলাভ করেন। উল্লেখ্য যে সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন তাঁর শিক্ষক।
1905 সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ও স্বদেশী আন্দোলনের দ্বারা ক্ষুদিরাম প্রভাবিত হয়ে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে সত্যেনন্দ্রনাথ বসুর গুপ্ত সমিতিতে যোগদান করেন। এই সমিতিতে তিনি শরীরচর্চার সাথে সাথে রাজনৈতিক শিক্ষাও গ্রহন করতে থাকেন। এইখানে তিনি লাঠিখেলা ও পিস্তল চালোনাতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। স্বদেশী আন্দোলনের অংশ হিসাবে, তিনি ইংল্যান্ডে উৎপাদিত কাপড় পোড়ানো ও ইংল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত লবন বোঝাই নৌকা ডোবানোর কাজে অংশগ্রহন করেন।
1906 সালের মার্চ মাসে মেদিনীপুরের এক কৃষি ও শিল্পমেলায় বিপ্লবী পত্রিকা ‘সোনার বাংলা' বিলি করার সময় ক্ষুদিরাম পুলিশের হাতে ধরা পড়েন কিন্তু পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরবর্তী মাসে একই কাজ করার জন্য তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং আদালতে বিচারের সম্মুখীন হন। কিন্তু অল্প বয়সের জন্য তিনি মুক্তি পান। 1907 সালে বিপ্লবীদের গোপন সংস্থায় অর্থের প্রয়োজনে, হাটগাছায় বিপ্লবীরা ডাকের থলি লুট করেন। ধারনা করা হয় ক্ষুদিরাম এই দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। একই বছরের 6 ডিসেম্বর নারায়নগড় রেল স্টেশানের কাছে বঙ্গের ছোটলাটের বিশেষ রেলগাড়িতে বোমা আক্রমনের ঘটনার সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। একই বছরে মেদিনীপুর শহরে অনুষ্ঠিত এক রাজনৈতিক সভায় সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের নরমপন্থী রাজনীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হলে তিনি তাতে অংশগ্রহন করেন।
ক্ষুদিরাম স্বদেশী আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন তাঁর ভগ্নীপতি অমৃতের চাকরিতে বিশেষ অসুবিধার সৃষ্টি হয়। তাই অমৃতবাবু তাঁকে অন্যত্র চলে যেতে বলেন। এই সময় তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিলেন মেদিনীপুরের উকিল সৈয়দ আব্দুল ওয়াজেদের বোন (নাম জানা সম্ভব হয় নি)।
এই সময় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ও স্বদেশী আন্দোলনের কর্মীদের কঠোর সাজা ও দমননীতির কারনে, কলকাতার প্রধান প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড বাঙালিদের অত্যন্ত ঘৃনার পাত্রে পরিনত হয়। বিশেষ করে, আলিপুর আদালত প্রাঙ্গনে 'বন্দেমাতরম' ধুনি উচ্চারন করার জন্য কলকাতার প্রেসিডেন্সী মাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড সুশীল সেন নামক 26 বছরের এক কিশোরকে প্রকাশ্য স্থানে বেত মারার আদেশ দিলে বিপ্লবীদের বিপ্লবীসত্তায় তা আঘাত হানে। 1907 সালে অল্পকাল পরে কলকাতাস্থিত মানিকতলায় মুরারীপুকুরে বারীনকুমার ঘোষের বাগান বাড়িতে একটি সশস্ত্র বিপ্লবী দলটি গঠিত হয়েছিল। এই দলটি পরবর্তী কালে যুগান্তর দল নামে পরিচিতি লাভ করে। যুগান্তর দলের পক্ষ থেকে কিংসফোর্ডকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সময় নিরাপত্তার কারনে কিংসফোর্ডকে বিহারের মজফফরপুরে বদলি করা হয়। কিংসফোর্ডকে হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকীর উপর। 1908 সালের 30 এপ্রিল রাত 8 টার সময় ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী রাতের অন্ধকারে, স্থানীয় ইউরোপীয় ক্লাবের গেটের কাছে একটি গাছের আড়াল থেকে কিংসফোর্ডের গাড়ি ভেবে, একটি ঘোড়ার গাড়ির উপর বোমা নিক্ষেপ করে।
এর ফলে গাড়িতে থাকা নিরপরাধ মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা মৃত্যুবরন করেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই পুলিশ সমগ্র অঞ্চল জুড়ে তল্লাশি চালাতে থাকে। প্রফুল্ল চাকী মোকামা স্টেশানে পুলিশের হাতে ধরা দেবে না বলে নিজের পিস্তলের গুলিতে আত্মত্মহত্যা করেন। ক্ষুদিরাম বসু হত্যাকান্ডের স্থল থেকে প্রায় 25 মাইল দূরে ওয়েইনি স্টেশানে 1লা মে ধরা পড়েন। তিনি বোমা নিক্ষেপের সমস্ত দায়িত্ব নিজের উপর নিয়ে নেন, ওপর সহযোগীর পরিচয় দিতে বা কোন গোপন তথ্য প্রকাশ করতে রাজী হননি। ভারতীয় দণ্ডবিধি 302 ধারা অনুসারে তাঁকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়।
ফাঁসী কার্যকর করার আগে তাঁর শেষ ইচ্ছা কি জানতে চাওয়া হলে, তিনি বলেন- তিনি ভালো বোমা বানাতে পারেন। সরকার অনুমতি দিলে তিনি তা সকলকে শিখিয়ে দিতে পারেন। বলাই বাহুল্য তাঁর এই ইচ্ছা ব্রিটিশ সরকার গ্রহন করেনি। এর পরিবর্তে তাঁরা দ্বিতীয় ইচ্ছা পূরনের কথা বলা হলে তিনি তাঁর বড়দিদি অপরূপা দেবীর সাথে দেখা করতে চান। কিন্তু জামাইবাবু অমৃতের বাধায় তাঁর সে ইচ্ছা পূরন হয় নি। তবে মেদিনীপুরের উকিল সৈয়দ আব্দুল ওয়াজেদের বোন ( যার কাছে ক্ষুদিরাম বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে আশ্রয় পেয়েছিলেন এবং তাঁকে বোনের স্নেহে আশ্রয় দিয়েছিলেন।) তিনি বিপদ মাথায় নিয়ে ক্ষুদিরামের সাথে দেখা করেছিলেন। মজফফরপুর জেলেই 1908 খ্রীষ্টাব্দের 11 আগষ্ট ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এই সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র 18 বছর 7 মাস 11 দিন।
কথিত আছে হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে যান অগ্নিযুগের প্রথম শহীদ ক্ষুদিরাম বসু। তাঁর নির্ভীক দেশপ্রেম ও আত্মত্যগ বাংলার যুবসমাজকে বিপ্লবী মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তাঁর স্মরনে বাঁকুড়ার লোককবি পীতাম্বর দাশ রচমনা করেন 'একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি'। ভারতের স্বাধিনতার পর এই গানটি রেকর্ড করেছিলেন লতা মঙ্গেশকর।
ক্ষুদিরাম বসু দ্বিতীয় পর্ব (অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নউত্তর)>>>>
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া Telegram গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
টেলিগ্রাম গ্রুপ এ যোগদান করার জন্য - Click Here
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
ইউরোপের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here
ক্ষুদিরাম বসু। প্রফুল্ল চাকী। ক্ষুদিরাম বসুর প্রকৃত নাম। প্রফুল্ল
চাকীর প্রকৃত নাম। ক্ষুদিরাম বসুর রাজনৈতিক গুরু। মুজফফরপুর মামলা। সর্বকনিষ্ঠ শহীদ।
বাংলার প্রথম শহীদ।