ক্রিপস মিশন
Set by- Manas Adhikary
ক্রিপস মিশন প্রথম পর্ব। Cripps Mission– I
ক্রিপস মিশন। ক্রিপস মিশন। ক্রিপস প্রস্তাব। ক্রিপস দৌত্য। ক্রিপস মিশনের সদস্য। ক্রিপস মিশনের শর্ত। ক্রিপস মিশনের উদ্দেশ্য। ক্রিপস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান। A Post-dated Cheque on a Falling Bank। পোস্ট ডেটেড চেক।
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই, আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো ক্রিপস মিশন। এই পর্বে থাকছে ক্রিপস মিশন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পরবর্তী পর্বে কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলচনা করা হবে। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
ক্রিপস মিশন সংক্ষিপ্তরূপ । About Cripps Mission.
1941 সালের 7 ই মার্চ জাপান দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করলে যুদ্ধের গতি নতুন দিকে মোড় নেয়। এইসময় জার্মানি সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমন করে এবং জাপান মিত্র-শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে। 1942 সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গতিপ্রকৃতি সম্পূর্নভাবে মিত্রপক্ষের বিরুদ্ধে চলে যায়।
ক্রীপসের দৌত্যের কারনসমূহ
ক) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নানা কারনে জটিল হয়ে ওঠে। এইসময়ে একদিকে ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী বিস্ফোরক পরিস্থিতি হয় ও অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এশিয়ার নানা অঞ্চলে জাপানের অভাবনীয় সাফল্য, বিশেষ করে মালয়, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও বার্মার (বর্তমানে মায়ানমার) রাজধানী রেঙ্গুনের পতন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে উদ্বিগ্ন করে তোলে।
খ) দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া জয় করে জাপান বার্মার ভিতর দিয়ে দ্রুত ভারতের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারে যে, এই সংকটের সময় ভারতবাসীর সাহায্য ছাড়া ভারতে জাপানকে বাধা দেওয়া যাবে না এবং ভারতে ব্রিটিশ অধিকার রক্ষা করা যাবে না। জাপানি আক্রমনের ফলে উদ্ভুত এই জটিল পরিস্থিতিতে এশিয়ার বিভিন্ন রণাঙ্গনে জাপানি আক্রমনের মোকাবিলা করতে হলে ভারতের সামরিক শক্তি ও সম্পদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।
গ) 1942 সালে বৃটিশ-ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রায় 65% সৈন্য ছিল অমুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। জাপানি আক্রমনের আগে বৃটিশ সরকারের ধারনা ছিল এই যে, ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের সেই সময়ের প্রতিনিধি কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কেবলমাত্র মুসলিম লীগ দলের সাহায্যে এদেশে তাদের স্বার্থসিদ্ধি হবে। কিন্তু জাপানী আক্রমনের ভয় তাদের ভ্রান্ত মনোভাবের পরিবর্তন ঘটায়। তারা বুঝতে পারে যে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতা পেতে গেলে মুসলীম লিগের তুলনায় কংগ্রেসের সমর্থন লাভ বেশী প্রয়োজন।
ঘ) তৎকালীন আর্ন্তজাতিক পরিস্থিতিও ব্রিটিশ সরকারকে ভারত সম্পর্কে নরম মনোভাব নিতে বাধ্য করে। এই সময়ে চিনের রাষ্ট্রপতি চিয়াং-কাই শক ও মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট উভয়েই ভারত সম্পর্কে বৃটিশ সরকারের নীতি পরিবর্তনের জন্য চাপ দেয়। এরই সঙ্গে সঙ্গে আটলান্টিক সনদে পরাধীন জাতিগুলিকে আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সেই অর্থে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিও ভারতের অনুকূলে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতবর্ষ ও বিশ্ব রাজনীতির এই জটিল প্রেক্ষাপটে ভারতে বৃটিশ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তার স্বার্থে বৃটিশ কর্তৃপক্ষ মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য ও ভারতীয়দের আস্থাভাজন স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রীপসকে ভারতে পাঠায়।
ক্রিপসের প্রস্তাবসমূহঃ- 1942 সালের 24 মার্চ স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ভারতে এসে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনান্তে একগুচ্ছ প্রস্তাব ঘোষনা করেন। তিনি মূলত কংগ্রেস ও মুসলিম লীগসহ অন্যান্য দলের নেতৃবর্গের সাথে দীর্ঘ আলোচনার পর নীচের প্রস্তাবগুলি পেশ করেন।
ক) যুদ্ধের অবসানে ভারতকে কানাডার মতো অধিরাজ্যের মর্যাদা (Dominion status) দেওয়া হবে।
খ) যুদ্ধ শেষে ভারতীয় সংবিধান রচনার জন্য ভারতীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে কেটি সংবিধান সভা গঠন করা হবে এবং সেই সভাকে ভারতের নতুন সংবিধান রচনার দায়িত্ব দেওয়া হবে।
গ) নতুন সংবিধান কোনো প্রদেশের পছন্দ নাহলে সেই প্রদেশ ভারতীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী সংবিধান রচনা করতে পারবে।
ঘ) ভারতের যে কোনো প্রদেশ বা দেশীয় রাজ্য ইচ্ছে করলে ভারতীয় যুক্ত রাষ্ট্রের বাইরেও থাকতে পারবে।
ঙ) সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষনের ব্যবস্থাও বহাল থাকবে।
চ) নতুন সংবিধান রচনা না হওয়া পর্যন্ত ভারতের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব বৃটিশ সরকার নিজের হাতে রাখবে এবং বড়লাটের কার্যনির্বাহক কাউন্সিলের সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে 'ভিটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে তা বাতিল করার অধিকার বড়লাটের থাকবে।
ক্রিপস মিশন ব্যর্থতার কারনসমূহঃ-
ক্রিপসের প্রস্তাবগুলো ভারতের বেশীরভাগ রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহন যোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি, কারনঃ-
ক) ক্রিপসের প্রস্তাবে বৃটিশ সরকারের সদিচ্ছার অভাব প্রকাশ পায়। তাই কংগ্রেস ও মুসলিম লীগসহ ভারতের প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দলই ক্রিপসের প্রস্তাব একযোগে প্রত্যাখ্যান করে।
খ) এই প্রস্তাবে পাকিস্তানের দাবিকে পরোক্ষভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় অর্থ্যাৎ ক্রিপস প্রস্তাবে দেশ বিভাগের পরোক্ষ ইঙ্গিত থাকায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস তা প্রত্যাখ্যান করে। গান্ধীজি বলে এটি একটি ফেল করা ব্যাঙ্কের মেয়াদ উত্তীর্ণ চেক (a post-dated cheque on a crushing Bank)
গ) ভারতের প্রতিরক্ষার পূর্ণ দায়িত্ব ভারতীয়দের হাতে ছেড়ে দিতে বৃটিশ সরকার রাজী ছিল না।
ঘ) ক্রিপস প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারকে বৃটিশ মন্ত্রীসভার মতো সম-মর্যাদা ও ক্ষমতা দেওয়ার কোনো প্রতিশ্রুতি ছিল না।
ঙ) মুসলিম লীগ ক্রিপস প্রস্তাবে আপাত খুশি হলেও সরাসরি দেশ বিভাগ মেনে না নেওয়ায় তা বর্ষন করে।
ফলে ক্রিপস তাঁর প্রস্তাব সমূহ প্রত্যাহার করে দেশে ফিরে যান।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
সময়- মার্চ 1942
ঘোষণা- 11 মার্চ 1942
ভারতে পাঠানো- 23 মার্চ ১৯৪২
সভাপতি -স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস
পরিকল্পনার উপস্থাপনা- 30 মার্চ 1942
ক্রিপস মিশনের মূল উদ্দেশ্য- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা পাওয়া।
ক্রিপস মিশন প্রত্যাখ্যান - 11 এপ্রিল 1942 সালে
ক্রিপস মিশনের অন্য নাম - পোস্ট ডেটেড চেক
পোস্ট ডেটেড চেক নামে অভিহিত করেন – মহাত্মা গান্ধী
ক্রিপস মিশন দ্বিতীয় পর্ব>>>>
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া Telegram গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
টেলিগ্রাম গ্রুপ এ যোগদান করার জন্য - Click Here
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
ইউরোপের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here
ক্রিপস
মিশন। ক্রিপস
মিশন। ক্রিপস
প্রস্তাব। ক্রিপস
দৌত্য। ক্রিপস
মিশনের সদস্য। ক্রিপস মিশনের শর্ত। ক্রিপস মিশনের উদ্দেশ্য। ক্রিপস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান। A Post-dated Cheque on a Falling Bank। পোস্ট
ডেটেড চেক।