সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী
Set by- Manas Adhikary
সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী প্রথম পর্ব। Surendranath Banerjee Part – I
সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়। ভারতের মাৎসিনী । ভারতের জাতীয়তাবাদের জনক। বাংলার মুকুটহীন রাজা। সামুদ্রিক ঝড়ের পাখি। রাষ্ট্রগুরু। ভারতের মুকুটহীন রাজা। A Nation is Making।
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই, আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী । এই পর্বে থাকছে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পরবর্তী পর্বে এই টপিকের কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলচনা করা হবে। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় সংক্ষিপ্তরূপ। About Surendranath Banerjee.
1848 সালে 10 নভেম্বর কলকাতায় সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের জন্ম হয়। তাঁর পিতার নাম ছিল দুর্গাচরন বন্দোপাধ্যায় যিনি পেশায় একজন ডাক্তার ছিলেন। সুরেন্দ্রনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর 1868 সালে রমেশচন্দ্র দত্ত এবং বিহারীলাল গুপ্তের সাথে ইংল্যান্ড যান ICS পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েও বয়স জনিত কারনে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। এরপর তিনি আবার 1871 সালে পরীক্ষা দিয়ে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ন হলে তাঁকে অবিভক্ত বাংলার সিলেটের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
1874 সালে তিনি আবার লন্ডন যান এবং সেখানে মিডল টেম্পেল এ পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে সেখন থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি মনে করতেন এর পেছনে অনেকটাই জাতিগত বৈষম্য দায়ী ছিল। এরপর তিনি বাধ্য হয়ে আবার 1875 সালে ভারতে ফিরে আসেন। তাঁকে ইতালির জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ গুয়েসেপ মাজিনির লেখা খুব প্রভাবিত করে।
এরপর তিনি ভারতে ফিরে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশানে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ফ্রী চার্চ ইনস্টিটিশনে বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। 1882 সালে তিনি শিয়ালদহ অঞ্চলে রিপন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এই কলেজের নাম হয় সুরেন্দ্রনাথ কলেজ। এই সময় থেকে তিনি মুক্ত রাজনীতি, দেশপ্রেম এবং ভারতীয় ইতিহাসের বিষয়ে বিভিন্ন জনসভায় বক্তৃতা দিতেন। 1876 সালে 26 জুলাই আনন্দমোহন বসুর সাথে তিনি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশান বা ভারতসভা প্রতিষ্ঠা করেন। এই বৎসরে তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের সদস্য হন এবং 1899 সাল পর্যন্ত তাঁর এই সদস্যপদ ছিল। ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ভারতসভার অবদান অনস্বীকার্য। সুরেন্দ্রনাথ তাঁর ভারতসভার সাহায্যে ICS এ ভারতীয় পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করতেন এবং সেই সব ছাত্রদের বিরুদ্ধে হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি সবসময় প্রতিবাদ করতেন। 1879 খ্রীষ্টাব্দে তিনি দ্য বেঙ্গলি ( প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে বেঙ্গলি পত্রিকাটি ছিল প্রথমে গিরীশচন্দ্র ঘোষের। গিরিশ ঘোষের মৃত্যুর পর পত্রিকার আথকি দুরাবস্থার জন্য মালিকানা বেচারাম চট্টোপাধ্যায়ের হাতে চলে যায়। তাঁর কাছ থেকেই অর্থের বিনিময়ে সুরেন্দ্রনাথ ‘বেঙ্গলী' পত্রিকাটি কিনে নেন) নামে একটি পত্রিকা ? প্রকাশ করেন। দ্য বেঙ্গলি পত্রিকায় 1883 সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় একটি প্রবন্ধ লেখার জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনিই প্রথম ভারতীয় সাংবাদিক যাঁকে কারাবন্দি করা হয়েছিল। সাংবাদিক হিসাবে তিনি কাজ শুরু করেন 1870 সালে। সে যুগের অন্যতম সাংবাদিক শিশিরকুমার ঘোষের সাথে তিনি সাংবাদিকতার কাজ শুরু করেন, তবে সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক কার্যকলাপকে সমানভাবে গুরুত্ব দেন। রাজনৈতিক কাজে বিঘ্ন ঘটলে তিনি শিশির কুমার ঘোষের গোষ্ঠী ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। 1885 সালে বোম্বেতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি 1886 খ্রীষ্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে কংগ্রেসের সাথে ভারতসভাকে যুক্ত করেন। কারন ভারত সভা ও জাতীয় কংগ্রেসের মূল লক্ষ্য ছিল এক। তিনি দুবার জাতীয় কংগ্রসের সভাপতি নির্বাচিত হন। প্রথমবার 1895 সালে পুনাতে এবং দ্বিতীয়বার 1902 সালে। আমেদাবাদে। ধীরে ধীরে সুরেন্দ্রনাথ সেই সময়কার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে ওঠেন। 1905 খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার যখন বাংলাকে দ্বিখন্ডিত করে তখন তিনি তার তীব্র প্রতিবাদ করেন। কংগ্রেসের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাথে একযোগে তিনি সাধারন মানুষকে সংগঠিত করে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে নানান কর্মসূচী গ্রহন করেন। তাঁদের বিভিন্ন প্রতিবাদমূলক কর্মসূচীর ফলে 1912 খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার সেই বঙ্গভঙ্গ রোধ করতে বাধ্য হয়। তাঁর হাত ধরেই গোপালকৃষ্ণ এবং সরোজিনী নাইডুর মত নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তির রাজনীতির অঙ্গনে আসেন। তিনি কংগ্রেসের নরমপন্থী নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। কিন্তু মতানৈক্যের কারনে তিনি 1906 খ্রীষ্টাব্দে কংগ্রেস ত্যাগ করেন। পরে তিনি স্বদেশী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগদান করেন। এই সময় তাঁর জনপ্রিয়তা এতটাই বেশী ছিল যে তাঁকে বাংলার মুকুটহীন রাজা আখ্যা দেওয়া হয়। এসময় থেকেই তাঁকে রাষ্ট্রগুরু সম্মানে ভূষিত করা হয়। তাঁর নরমপন্থী মনোভাবের ফলে চরমপন্থী নেতাদের সাথে তাঁর মতানৈক্য ঘটে এবং এরপর তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে সরে যান। 1909 সালে ব্রিটিশ সরকার দ্বারা আনত মলো-মিন্টো সংশোধনী আইনকে তিনি সমর্থন করলেও অধিকাংশ ভারতীয় নাগরিক এবং নেতারা সেই আইনের প্রতিবাদ করেন। মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনকেও তিনি সমর্থন করেননি। কংগ্রেস ত্যাগ করার পর তিনি এবং আরো কিছু নেতা একত্রিত হয়ে ইন্ডিয়ান লিবারেশন ফেডারেশন তৈরী করেন। কিন্তু বেশিদিন তাঁরা সেই দলটি চালাতে পারেন নি। 1923 সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিধানচন্দ্র রায়ের কাছে পরাজিত হলে সুরেন্দ্রনাথ রাজনীতি থেকে একেবারে অবসর গ্রহন করেন। 1925 সালের 6 আগষ্ট 77 বছর বয়সে ব্যারাকপুরে তাঁর মৃত্যু হয়৷
সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় দ্বিতীয় পর্ব>>>>
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া Telegram গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
টেলিগ্রাম গ্রুপ এ যোগদান করার জন্য - Click Here
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
ইউরোপের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here
সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়। ভারতের মাৎসিনী । ভারতের জাতীয়তাবাদের জনক। বাংলার মুকুটহীন রাজা। সামুদ্রিক ঝড়ের পাখি। রাষ্ট্রগুরু। ভারতের মুকুটহীন রাজা। A Nation is Making।