বাল গঙ্গাধর তিলক
Set by- Manas Adhikary
বাল গঙ্গাধর তিলক প্রথম পর্ব। Balgangadhar Tilak – I
বাল গঙ্গাধর তিলক। হোম রুল লীগ আন্দোলন। স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার। গীতা রহস্য। কেশরী। মারহাট্টা। আধুনিক ভারতের স্রষ্টা। লোকমান্য। ভারতের মুকুটহীন রাজা। শিবাজী উৎসব।
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই, আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের কংগ্রেসের অন্যতম চরমপন্থী ব্যক্তিত্ব বাল গঙ্গাধর তিলক। এই পর্বে থাকছে বাল গঙ্গাধর তিলক সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পরবর্তী পর্বে কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলচনা করা হবে। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
বাল গঙ্গাধর তিলক সংক্ষিপ্তরূপ। About Balgangadhar Tilak.
বাল গঙ্গাধর তিলককে এককথায় বিশেষিত করা দুঃসাধ্য। তিনি ছিলেন একধারে সমাজসংস্কারক, স্বাধীনতা সংগ্রামী, জাতীয় নেতা আবার অন্যদিকে ভারতীয় ইতিহাস, সংস্কৃত, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা ও হিন্দুদর্শনে অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারী। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম সারির চরমপন্থী নেতা ছিলেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষ তাকে ভারতীয় অস্থিরতার জনক' বলে অভিহিত করেছিলেন। বাল গঙ্গাধর তিলককে বলা হয় লোকমান্য তিলক। লোকমান্য কথার অর্থ হলো ‘জনগন দ্বারা গৃহীত’।
1856 সালের 23 জুলাই মহারাষ্ট্রের রত্নগিরিতে চিতপাবন ব্রাহ্মন পরিবারে তিলক জন্মগ্রহন করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন এবং গনিতে তাঁর বিশেষ আকর্ষন ছিল। তিলক গনিতে প্রথম শ্রেনীর স্নাতক হন। তিলকের কর্মজীবন শুরু হয় গণিত শিক্ষকতার মাধ্যমে। পরবর্তীকালে তিনি সাংবাদিকতার কাজ গ্রহন করেন। তিনি প্রার্থনা সমাজেরর সাথে যুক্ত হয়ে মহাদেব গোবিন্দের সাথে মিলিতভাবে ডেকান এডুকেশান সোসাইটি বা দাক্ষিনাত্য শিক্ষাসমাজ গঠন করেন। এর পরের বছরেই তিনি মারাঠি ভাষায় 'কেশরী' ও ইংরেজী ভাষায় 'মারাঠা' নামক দুটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করেন। তিনি ছিলেন জাতীয় আন্দোলেনর সক্রেটিস।
বাল গঙ্গাধর তিলক 1890 খ্রীষ্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন। তিনি পুনে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন ও বম্বে বিধান মন্ডলের সদস্য ছিলেন এবং তিনি বম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন বাল্যবিবাহের ঘোরতর বিরোধী এবং বিধবা বিবাহের পক্ষে। তিলক জাতিয়তাবাদের চারটি লক্ষ্যের কথা বলেন, যথা-
ক) প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার প্রতি আস্থা রেখে তারই ভিত্তিতে ভবিষৎ আন্দোলন সংগঠন করা।
খ) আবেদন নিবেদন নীতিকে বর্জন করে আত্মশক্তির দ্বারা স্বরাজ অর্জন করা।
গ) আন্দোলনের একমাত্র লক্ষ্য হিসাবে স্বরাজ বা স্বাধীনতাকেই স্থির রাখা।
ঘ) স্বাধীনতা আন্দোলনকে গন আন্দোলনে পরিনত করা।
গনপতি উৎসব ও শিবাজী জন্মোৎসব পালনের মাধ্যমে তিনি সাধারন মানুষকে একত্রিত করতে চেয়েছিলেন। এর প্রভাবে বাংলায় শিবাজী উৎসব পালিত হয়। এইসময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিখ্যাত কবিতা 'শিবাজী' রচনা করেন। এইসময় মহারাষ্ট্রে প্লেগ মহামারী দেখা দেয় এবং কমিশনার হিসাবে নিযুক্ত হন নির্দয় ব্যবহারের জন্য কুখ্যাত মিঃ র্যা ন্ড। প্লেগ দমনের নাম করে মিঃ র্যা ন্ড অত্যন্ত অশালীন ব্যবহার করতে লাগলেন। তিনি প্লেগ দমনে গোরা সৈন্যদের নিযুক্ত করলেন। গোরা সৈন্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেয়েদের শরীর টিপে দেখতে লাগল। এতে সাধারন মানুষ অত্যন্ত ক্ষিপ্ত ওঠে। এই সময় তিলক কেশরী পত্রিকায় লিখলেন - এর থেকে প্লেগ অনেক ভালো। অবশেষে দামোদর চাপেরেকর ও বালকৃষ্ণ চাপেরেকর 1897 সালের 22 জুন মিঃ আয়াস্ট ও মিঃ র্যা ন্ডের উপর গুলি চালালে ঘটনাস্থলে মিঃ আয়াস্ট মারা যান এবং মিঃ র্যা ন্ডকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কয়েকদিনের মধ্যে মিঃ র্যা ন্ড মারা যান। 1897 সালে তিলকের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার অভিযোগ আনেন যে তিলকের প্ররোচনায় সন্ত্রাসবাদীরা প্রবল হয়েছে এবং তিনি জনগনের মধ্যে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি বিরুদ্ধ মনোভাব জাগিয়ে তুলছেন তাঁর লেখনীর মাধ্যমে এবং আইন ও শান্তিভঙ্গ করছেন। এই অভিযোগে তাঁকে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয় দেড় বছরের জন্য। 1898 খ্রীষ্টাব্দে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিলক স্বদেশী আন্দোলন শুরু করেন। সংবাদপত্র এবং বক্তৃতার মাধ্যমে তিলক মহারাষ্ট্রের গ্রামে গ্রামে স্বদেশী আন্দোলনকে জোরদার করে তোলেন। এমনকি তাঁর বাড়ির সামনে স্বদেশী জিনিসের বাজারও খোলা হয়। এইসময় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়- নরমপন্থী ও চরমপন্থী এই দুই মতবাদে। এতদিন যেখানে নরমপন্থী নেতৃত্বগন ইংরেজ সরকারের প্রতি আবেদন- নিবেদন নীতিতেই বিশ্বাসী ছিলেন, সেখানে চরমপন্থীদের দাবী হলো স্ব-শাসন। এই সময় তিলক সদর্পে ঘোষনা করেন- স্বরাজ হলো আমার জন্মগত অধিকার, আমি তা অর্জন করবই। চরমপন্থীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাল গঙ্গাধর তিলক। 1906 সালে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রাজদ্রোহিতার অপরাধে তিনি গ্রেপ্তার হন। তাঁকে ছয়বছরের কারাদন্ড দিয়ে বার্মার
মান্দালয় জেলে পাঠানো হয়। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি জেলের ভিতর লেখাপড়াতেই অতিবাহিত করেন। ‘গীতা-রহস্য' তাঁর এই সময়ের রচিত গ্রন্থ। 1914 সালের 8 জুন তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। তিলক নরমপন্থী ও চরমপন্থীদেরকে একত্রিত করতে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। অবশেষে তিনি একটি পৃথক সংগঠন স্থাপন করেন যার নাম ছিল ‘ভারতীয় হোমরুল লীগ'। এর উদ্দেশ্য ছিল স্বরাজ। উদ্দেশ্য এক হওয়ায় 1916 খ্রীষ্টাব্দে তিলকের ভারতীয় হোমরুল লীগ এবং শ্রীমতি অ্যানি বেসান্তের হোমরুল লিগ সংস্থাদুটি একীভুত হয়ে নিখিল ভারত হোমরুল লীগ গঠন করেন। তিলক গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রতিটি ভারতবাসীর মনে স্বরাজের অর্থ ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে শরিক করতে চেয়েছিলেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে। হোমরুল লীগ এর কার্যপদ্ধতির মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে ঘুরে সকলকে বুঝিয়ে তাদের হৃদয়ে স্বাধীন ভারতের চিত্র অঙ্কন করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তিনি জীবদ্দশায় ক্রমাগত ভ্রমন করে গেছেন মানুষকে সংঘটিত করার জন্য। মানুষের জন্য, দেশের স্বাধীনতার জন্য বাল গঙ্গাধরের এই আত্মত্যাগ তাঁকে মহীয়ান করে রেখেছে। 1920 সালের 1 আগষ্ট তিলকের মহাপ্রয়ান ঘটে।
বাল গঙ্গাধর তিলক দ্বিতীয় পর্ব>>>>
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া Telegram গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
টেলিগ্রাম গ্রুপ এ যোগদান করার জন্য - Click Here
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
ইউরোপের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here
বাল গঙ্গাধর
তিলক। হোম রুল
লীগ আন্দোলন। স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার। গীতা রহস্য। কেশরী। মারহাট্টা। আধুনিক
ভারতের স্রষ্টা। লোকমান্য। ভারতের মুকুটহীন রাজা। শিবাজী উৎসব।