লালা লাজপত রায়
Set by- Manas Adhikary
লালা লাজপত রায় প্রথম পর্ব। Lala Lajpat Rai– I
লালা লাজপত রায়। বন্দেমাতরম পত্রিকা। রাওয়ালপিন্ডি দাঙ্গা। ইন্ডিয়ান হোমরুল লীগ অফ আমেরিকা। স্যান্ডোর্স। ইংল্যান্ডস ডেট টু ইন্ডিয়া। ইয়ং ইন্ডিয়া। পাঞ্জাব ন্যাশানাল ব্যাঙ্ক। লক্ষ্মী বিমা কোম্পানী।
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই, আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের কংগ্রেসের অন্যতম চরমপন্থী ব্যক্তিত্ব লালা লাজপত রায় । এই পর্বে থাকছে লালা লাজপত রায় সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পরবর্তী পর্বে কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলচনা করা হবে। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
লালা লাজপত
রায় সংক্ষিপ্তরূপ। About
Lala
Lajpat Rai.
লালা লাজপত রায় 1865 খ্রীষ্টাব্দে 28 জানুয়ারি পাঞ্জাবের লুধিয়ানা জেলার অন্তর্গত জারগাঁও গ্রামের এক জৈন পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা রাধা কিষান রায় ছিলেন একজন শিক্ষক (মতান্তরে কৃষক) এবং তাঁর মাতা গুলার দেবী ছিলেন খুবই ধর্মপরায়ন এক মহিলা। লালা লাজপত রায় আইন পরীক্ষায় পাশ করে ওকালতি শুরু করেন এবং প্রচুর অর্থ ও সুনাম অর্জন করেন। ওকালতির পাশাপাশি তিনি দয়ানন্দ সরস্বতীর আর্য সমাজের সাথে যুক্ত হন এবং আর্যসমাজের নেতা গুরুদত্ত ও লালা হংসরাজের সাথে পরিচিত হন। এই সময় তিনি নিজেকে শুদ্ধি আন্দোলনের এক প্রবক্তারূপে প্রতিষ্ঠা করেন। ম্যাৎসিনি, গ্যারিবল্ডি ও ইউরোপের বিভিন্ন গুপ্ত সমিতির কার্যাবলী ও ইতিহাস তাঁকে সংগ্রামের পথে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে উৎসাহিত করে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে লালা লাজপত রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা গ্রহন করেছিলেন। ভারতবর্ষের পুনরুজ্জীবন ও ব্রিটিশ শাসন মুক্ত স্বরাজ অর্জন ছিল তাঁর জীবন আদর্শ। স্বাধীনতাকেই তিনি জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে মনে করতেন। দেশাত্মবোধ এবং দেশের জন্য আত্মত্যাগ তাঁর কাছে ছিল পরম ধর্ম। তিনি দেশবাসীর মনে আত্মশক্তি জোগানোর জন্য আত্মত্যাগের আদর্শ প্রচার করেন। লালা লাজপত রায় জাতীয় কংগ্রেসের 1888 খ্রীষ্টাব্দের এলাহবাদ অধিবেশনে যোগদান করেন। কিন্তু এলাহবাদ অধিবেশনে নরমপন্থী নেতাদের আবেদন-নিবেদন নীতি তাঁর কাছে ভিক্ষাবৃত্তি বলে মনে হয়। বাল গঙ্গাধর তিলকের মতই তিনিও কংগ্রেসের নীতির তীব্র সমালোচনা শুরু করে দেন। ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকায় তিনি জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে লিখেছিলেন যে- ‘কংগ্রেস হল ডাফরিনের মস্তিষ্কপ্রসূত’। লর্ড কার্জনের স্বৈরাচারী শাসন তাঁকে সংগ্রামী জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রবক্তায় পরিনত করে। নরমপন্থা ত্যাগ করে গন আন্দোলন, বয়কট, স্বদেশী ইত্যাদি সংগ্রামী নীতি গ্রহন করতে তিনি ভারতবাসীকে আহ্বান জানান। অচিরেই তিনি কংগ্রেসের এক চরমপন্থী নেতারূপে আত্মপ্রকাশ করেন। বারানসী কংগ্রেসে তিনিই প্রথম নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের কর্মসূচী উত্থাপন করেন। 1907 খ্রীষ্টাব্দে ভূমি বন্টন ব্যবস্থা, সেচসেবিত এলাকায় কর বৃদ্ধি ইত্যাদি কারনে পাঞ্জাবের কৃষিজীবিদের মধ্যে ব্যাপক হিংসাশ্রয়ী গণ আন্দোলন দেখা দেয়। ইহা রাওয়ালপিন্ডি দাঙ্গা নামে পরিচিত। লালা লাজপত রায় ও প্রখ্যাত বিপ্লবী অজিত সিং ওই বিক্ষোভের নেতৃত্ব গ্রহন করেন। 1907 খ্রীষ্টাব্দের 3 মে রাওয়ালপিন্ডি দাঙ্গাতে প্ররোচনা দেওয়ার জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় সরকার বিনা বিচারে উভয়কেই মান্দালয়ে নির্বাসিত করে। 1907 খ্রীষ্টাব্দের 11 নভেম্বর তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। নির্বাসনান্তে তিনি পাঞ্জাবে ফিরে আসেন। এইসময় জাতীয়তাবাদের প্রসার রোধ করার জন্য পাঞ্জাবে সরকারি দমননীতি ও পুলিশি তৎপরতা তাঁর কাছে অসহ্য হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত 1913 খ্রীষ্টাব্দে তিনি ভারত ত্যাগ করে আমেরিকা চলে যান। এই সুযোগে ব্রিটিশ সরকারও সময় নষ্ট না করে তাঁর ভারত প্রত্যাবর্তনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই সময়ে তিনি লালা হরদয়াল, মানবেন্দ্র রায় প্রমুখ বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন এবং সেখানে হোমরুল লীগের একটি শাখা স্থাপন করেন। 1920 খ্রীষ্টাব্দে তাঁকে ভারতে ফিরতে দেওয়া হয়। দেশে ফেরার পর 1920 খ্রীষ্টাব্দে তিনি কংগ্রেস সভাপতি হন। এই সময় অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করা হলে তিনি চিত্তরঞ্জন ও মোতিলাল প্রতিষ্ঠিত স্বরাজ্য দলে যোগদান করেন। ভারতের শাসন সংক্রান্ত সংস্কারের উদ্দেশ্যে সাইমনের নেতৃত্বাধীনে সাত সদস্যের এক কমিশন গঠন করা হয়। একে সাইমন কমিশন বলা হয়। এই সাইমন কমিশনে কোনো ভারতীয় না থাকায় দেশজুড়ে এই সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু হয়। 1928 খ্রিষ্টাব্দে লাহোরে সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে এক বিক্ষোভ মিছিল পরিচালনাকালে সান্ডোর্স নামক এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশের লাঠিচার্জের ফলে আহত হন। এবং এর কিছুদিন পরে তিনি মারা যান।
লালার মৃত্যুর ফলে সমগ্র দেশ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। 1928 খ্রীষ্টাব্দের 17 ডিসেম্বর চন্দ্রশেখর আজাদ, ভগত সিং, রাজগুরু ও সুখদের লালার মৃত্যুর প্রতিশোধ স্বরূপ ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার স্যান্ডোর্সকে গুলি করে হত্যা করেন। স্যান্ডোর্সকে হত্যা করার জন্য রাজগুরু, সুখদের ও ভগত সিং কে ব্রিটিশ সরকার ফাঁসী দিয়ে হত্যা করেন।
উর্দু ভাষায় তিনি ম্যাৎসিনি, গ্যারিবন্ডি ও শিবাজীর জীবনকাহিনী রচনা করেন। এছাড়াও তিনি ইয়ং ইন্ডিয়া, ইংল্যান্ডস ডেট টু ইন্ডিয়া, দি পলিটিক্যাল ফিউচার অব ইন্ডিয়া ইত্যাদি গ্রন্থ রচনা করেন।
লালা লাজপত রায় সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য
ক) লালা লাজপত রায় যখন ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি তখন অনেক ছোট ছিলেন।
খ) 1880 খ্রীষ্টাব্দে যখন তিনি লাহোরের সরকারি কলেজে আইন নিয়ে পড়তে যান তখন কয়েকজন তরুন মুক্তিযোদ্ধার সাথে তিনি পরিচিত হয়েছিলেন।
গ) লাহোরে থাকার সময়েই তিনি দয়ানন্দ সরস্বতীর সাথে পরিচিত হন এবং তাঁর দ্বারা অনুপ্রানিত হয়ে আর্য সমাজে যোগদান করেন।
ঘ) 1886 খ্রীষ্টাব্দে তিনি ও তাঁর পরিবার হিসারে চলে আসেন এবং সেখানে আইন নিয়ে প্র্যাকটিস শুরু করেন। পরে তিনি হিসারের বিখ্যাত আইনজীবি বাবু চূড়ামনির সাথে বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ঙ) লালা লাজপত রায় হিসার জেলায় চূড়ামনি বাবুর সাথে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের এবং আর্য সমাজের একটি করে শাখা প্রতিষ্ঠা করেন।
চ) 1892 সালে তিনি হিসার থেকে লাহোরে যান আইন প্র্যাকটিস করার জন্য। এই সময়ে তিনি সাংবাদিকতারও প্র্যাকটিস শুরু করেন এবং ‘দি ট্রিবিউন' পত্রিকায় নিয়মিতভাবে লেখালেখী করতেন।
ছ) তিনি পাঞ্জাব ন্যাশানাল ব্যাঙ্ক ও লক্ষ্মী বিমা কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন।
জ) তিনি বুঝতে পারেন যে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহন করতে গেল তাঁকে আইন ছাড়তে হবে। তাই তিনি 1914 সালে আইন প্র্যাকটিস করাও ছেড়ে দেন।
ঝ) 1907 সালে মে মাসে, পাঞ্জাবের রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগদান করার জন্য তাঁকে বার্মার মন্দালয়ে নির্বাসিত করা হয়।
ঞ) 1920 সালে কোলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে তিনি সভাপতিত্ব করেন।
ট) 1927 খ্রীষ্টাব্দে তাঁর মা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় তিনি তাঁর মায়ের স্মৃতিতে গুলার দেবী চেষ্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে যে, যেখানে তাঁর মা মারা গিয়েছিলেন সেখানেই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। 1934 সালের 17 জুলাই এটি উদ্বোধন করা হয়। হাসপাতালটি কেবলমাত্র মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত।
ঠ) 1928 খ্রীষ্টাব্দের 30 অক্টোবর তিনি সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দিলে পুলিশের লাঠি চার্জে তিনি গভীরভাবে আহত হয়ে জনগণের উদ্দেশ্যেবলেছিলেন 'আমার শরীরে করা ব্রিটিশের প্রহার, ব্রিটিশের ধ্বংসের কারন হয়ে উঠবে’। 1928 সালের 17 নভেম্বর তিনি চিকিৎসাধীন থাকাকালীন মারা যান।
লালা লাজপত রায় দ্বিতীয় পর্ব>>>>
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া Telegram গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
টেলিগ্রাম গ্রুপ এ যোগদান করার জন্য - Click Here
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
ইউরোপের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here
লালা লাজপত রায়। বন্দেমাতরম পত্রিকা। রাওয়ালপিন্ডি দাঙ্গা। ইন্ডিয়ান হোমরুল লীগ অফ আমেরিকা। স্যান্ডোর্স। ইংল্যান্ডস ডেট টু ইন্ডিয়া। ইয়ং ইন্ডিয়া। পাঞ্জাব ন্যাশানাল ব্যাঙ্ক। লক্ষ্মী
বিমা কোম্পানী।