ডিরোজিও এবং ইয়ংবেঙ্গল দল
Set By – Manas Ahikary
ডিরোজিও প্রথম পর্ব। Henry Louis Vivian Derozio Part – I.
ডিরোজিও। নবজাগরনের ঝড়ের পাখি। প্রথম জাতীয়তাবাদী কবি। নব্যবঙ্গ। একাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন। To India My Native Land। ফকির অব জংঘিরা। ডিরোজিওর ছদ্মনাম। ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন।
নমস্কার,
অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সমাজ সংস্কারক ডিরোজিও। এই পর্বে থাকছে ডিরোজিও সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পরবর্তী পর্বে ডিরোজিও সম্পর্কিত কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবো। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক
পরীক্ষার জন্য (All Competitive
exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service,
Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি
পেয়ে যাবে Indian History
(Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity,
child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি
বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
ডিরোজিও সংক্ষিপ্তরূপ। About Derozio.
উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরনের এক অন্যতম পথিকৃৎ হলেন ডিরোজিও। তিনি ছিলেন একধারে নেতা, কবি, দার্শনিক, চিন্তাবিদ, শিক্ষক, সম্পাদক এবং সংগঠক। তিনি ছিলেন ইয়ংবেঙ্গল প্রতিষ্ঠাতা। বাংলার সর্বকনিষ্ঠ কলেজ শিক্ষক আবার একই সাথে বরখাস্ত হওয়া প্রথম শিক্ষক ছিলেন ডিরোজিও। ১৮০৯ সালের ১৮ এপ্রিল কলকাতার মৌলালিতে এক ইউরেশীয় পরিবারে ডিরোজিওর জন্ম হয়। তাঁর পুরো নাম ছিল হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। তাঁর পিতা ফ্রান্সিস বিখ্যাত “জে স্কট এন্ড কোম্পানি’ তে একটি গুরুত্বপূর্ন পদে চাকরি করতেন। মা সোফিয়া ছিলেন গৃহকর্ত্রী। মাত্র ছবছর বয়সে মাতৃহারা হন ডিরোজিও। ডিরোজিওর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ছ বছর বয়সে ডেভিড ড্রামন্ডের ধর্মতলা একাডেমি স্কুলে। ১৮১৫-২০ সাল পর্যন্ত আট বছর ডিরোজিও পড়াশোনা করেছিলেন ধর্মতলা একাডেমীতে। এখানেই ডেভিড ড্রামন্ডের সংস্পর্শে তাঁর জীবনের আদর্শ গড়ে ওঠে। ড্রামন্ডের থেকে শিখেছিলেন কীভাবে সত্যকে অর্জন করতে হয়, কিভাবে তর্কের মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মানুষকে কীভাবে ভালোবাসতে হয়। এই সময় হিউম, স্মিথ, রবার্টসন, স্টুয়ার্ট প্রভৃতির দর্শন ডিরোজিওকে আকৃষ্ট করে।
ডিরোজিওর বয়স যখন চৌদ্দ বছর তখন তাঁর বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর তিনি তার বাবার অফিসে কেরানীর চাকরি নেন। কিন্তু পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ভাগলপুরের মাসির বাড়ী চলে যান। মেসোমশাই আর্থার জনসন ছিলেন ভাগলপুরের নীলকুঠির মালিক। এই ব্যবসার কাজে কিছু সাহায্য করা ছাড়া অবসর সময়ে তিনি কবিতা লিখতেন ও বিভিন্ন বই পড়তেন। এই সময় ডিরোজিও ‘জুভেনিস' ছদ্মনামে 'ইন্ডিয়া গেজেট' নামক একটি খবরের কাগজে কবিতা লিখতেন। এছাড়াও এইসময়ে তিনি বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের লেকচার অন ফিলোসফিক্যাল থিওলজি বইটির সমালোচনা লিখে ফেলেন।
১৮২৬ সালে কবিতার বই ছাপানোর কাজে ডিরোজিও কলকাতায় আসেন। এই সময়ে তিনি সুবিখ্যাত হিন্দু কলেজ থেকে শিক্ষক হওয়ার ডাক পান এবং একইসঙ্গে ইন্ডিয়ান গেজেটের সহ-সম্পাদকের কাজের জন্য সুযোগ পান। তিনি হিন্দু কলেজের শিক্ষক হিসাবে মাত্র সতেরো বছর বয়সে যোগদান করেন। তিনিই ছিলেন বাংলার কনিষ্টতম কলেজ শিক্ষক। তাঁর পড়ানোর পদ্ধতি ছিল গতানুগতিক ধারা থেকে সম্পূর্ন আলাদা। পড়ানোর এই প্রথাবিরোধী আকর্ষনীয় পদ্ধতি ক্রমেই শিক্ষক হিসাবে তাঁকে ব্যাপক জনপ্রিয় করে তোলে। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দোপাধ্যায়, রসিক কৃষ্ণ মল্লিক, দক্ষিনা রঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রামগোপাল ঘোষ, রামতনু লাহিড়ী, প্যারীচাদ মিত্র, অমৃতলাল মিত্র, রাধানাথ শিকদার প্রমুখ যাঁরা পরবর্তীকালে বাংলায় মুক্তিচিন্তা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৮২৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর দুটি কবিতার বই 'ফকির অব জঙ্গীরা' এবং ' টু ইন্ডিয়া-মাই নেটিভ ল্যান্ড'।
ডিরোজিও তাঁর শিষ্যদের নিয়ে গড়ে তোলেন 'অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশান’ নামে একটি সংগঠন। এই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন তিনি নিজেই। এই সংগঠনের মুখপত্র হিসাবে তিনি 'পার্থেনন' নামক একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন যা তৎকালিন হিন্দু সামজের বিরোধিতায় অচিরেই বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে ডিরোজিওর দলের নাম হয় ইয়ংবেঙ্গল বা নব্য বঙ্গ। রক্ষনশীল হিন্দু সমাজ কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ জানায়। রাজা রাধাকান্ত দেব, চন্দ্রকুমার ঠাকুর প্রমুখ রক্ষনশীল হিন্দু সমাজের মুখ্য ব্যক্তিরা তাঁকে বরখাস্তের দাবি জানান। অবশেষে ১৮৩১ সালের ২৫ এপ্রিল ডিরোজিও কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে পদত্যাগ পত্র পৌঁছে দেন। এরপর ডিরোজিও দি ইস্ট ইন্ডিয়ান' নামক একটি ইংরেজী দৈনিক সংবাদপত্র সম্পাদনা করতে শুরু করেন। কলেজ ছাড়ার পর ডিরোজিও ধর্মতলা একাডেমীতে পড়াতে শুরু করেন। অবশেষে ১৮৩১ সালের ২৬ ডিসেম্বর মাত্র ২২ বছর বয়সে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন।
নব্য বঙ্গ আন্দোলন [Young Bengal Movement]
উনিশ শতকের প্রথম ভাগে হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও পরিচালিত নব্যবঙ্গ আন্দোলনের অনুগামীদের নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল বলা হয়। স্বাধীন চিন্তা ও যুক্তিবাদে বিশ্বাসী ডিরোজিও তাঁর ছাত্রদের সততা, ন্যায়, সত্যানুসন্ধিত্সা, দেশপ্রেম ও পরহিতৈষণার আদর্শে উদ্বুবদ্ধ হতে শিক্ষা দিয়েছিলেন। ডিরোজিও তাঁর ছাত্রদের সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে গ্রহণ করতে বলতেন । ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর এন্টালির বাসভবনে প্লেটোর 'ডেমট্রেজ’ ' সভার আদলে 'অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন' [Academic Association] নামে একটি সমিতি গঠন করেছিলেন। এই সভায় বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনা ও বিতর্ক হত। 'জ্ঞানান্বেষণ' [Jnananneswan], 'পার্থেনন' [Parthenon], ‘দ্য এনকোয়ার' [The Enquire] ছিল এই সমিতির মুখপত্র। নবলব্ধ শিক্ষার প্রভাব ও তারুণ্যের উত্তেজনায় তাঁদের আচারব্যবহার ও কথাবার্তায় উচ্ছ্বাস ও উন্মাদনার আধিক্য পরিলক্ষিত হত। হিন্দুধর্ম ও সমাজকে ধ্বংস করাই যেন তাদের লক্ষ বলে অনেকে অভিমত পোষণ করতেন। আমূল সংস্কার আন্দোলন উগ্ররূপ ধারণ করায় প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। 'ওরিয়েন্টাল ম্যাগাজিন' ও 'সমাচার চন্দ্রিকা' পত্রিকাতে ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলনের ঘোর বিরোধিতা করা হয়। অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত হিন্দুরা এই আন্দোলনকে সমর্থন করেন নি। এই পরিস্থিতির জন্য আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন নেতাগণ ডিরোজিওকে দায়ী করেন অভিভাবকগণ তাঁদের পুত্রদের হিন্দু কলেজ ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। অবশেষে কলেজ কর্তৃপক্ষ ডিরোজিওকে পদচ্যুত করেন। কিন্তু বাঙালি যুব সমাজের মনে স্বাধীন চিন্তা কারবার ক্ষমতা, দেশপ্রেম ও স্বাধীনতা স্পৃহার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তাঁর মূল্য ছিল অপরিসীম ।
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া Telegram গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
টেলিগ্রাম গ্রুপ এ যোগদান করার জন্য - Click Here
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
ইউরোপের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here
ডিরোজিও। নবজাগরনের ঝড়ের পাখি। প্রথম জাতীয়তাবাদী কবি। নব্যবঙ্গ। একাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন। To India My Native Land। ফকির অব জংঘিরা। ডিরোজিওর ছদ্মনাম। ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন।