ছত্রপতি শিবাজী
Set by- Manas Adhikary
শিবাজী প্রথম পর্ব| Shibaji Part-I
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো– আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি ভারতের মধ্যযুগের অন্যতম ব্যক্তিত্ব শিবাজী সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
শিবাজী সংক্ষিপ্ত আলোচনা। About Shibaji.
১৬২৭ খ্রীষ্টাব্দের ১০ এপ্রিল (মতান্তরে ১৬৩০ খ্রীষ্টাব্দের ১৯ মার্চ) মহারাষ্ট্রের পুনা জেলার অন্তর্গত জুন্নার শহরের নিকটস্থ শিবনের গিরি দূর্গে শিবাজীর জন্ম হয়। তাঁর পিতা ছিলেন শাহজী ভোঁসলে ও মাতা ছিলেন জীজাবাঈ। শিবাজী যখন জন্মগ্রহন করেন তখন তাঁর পিতা ছিলেন আহম্মদনগরের সুলতানের অধীনস্থ পুনার জায়গীরদার। পরে শাহজাহন আহম্মদ নগরকে মুঘল সমাজ্যভুক্ত করলে শাহজী বিজাপুরের সুলতানের অধীনে চাকুরি গ্রহন করে কর্নাটকে জায়গীরদার হন এবং দ্বিতীয় স্ত্রী তুকাবাঈ ও তাঁর শিশুপুত্র ব্যাঙ্কোজী সহ সেখানে বসবাস করতে চলে যান। শিবাজী তাঁর মাতা জীজাবাঈ এর সাথে পুনায় তাঁর বাবার এক বিশ্বস্ত ব্রাহ্মন কর্মচারী দাদাজী কোন্ডদেবের কাছে পুনায় বড় হতে থাকেন। ধর্মপরায়ন মায়ের প্রভাব শিবাজীর জীবনে গভীর রেখাপাত করেছিল। মায়ের কাছে রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনী শুনে শিশুকালেই শিবাজীর মনে বীরত্ব ও দেশপ্রেমের সঞ্চার হয়েছিল। মায়ের মতাে কোন্ডদেবও শিবাজীর চরিত্র গঠনে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। বাল্যকালেই মহারাষ্ট্র দেশ সম্পর্কে এবং স্থানীয় পার্বত্য মাওয়ালি জনগােষ্ঠিীর সাথে শিবাজীর ঘনিষ্ঠ পরিচয় হয়। এই মাওয়ালিদের নিয়েই তিনি সর্বপ্রথম বিশ্বস্ত এক সেনাবাহিনী গঠন করেন। কোন্ডদেবের মৃত্যুর পর ১৬৪৬ খ্রীষ্টাব্দে (মতান্তরে ১৬৪৭ খ্রীষ্টাব্দে) বিজাপুরের সুলতানের অধীনস্থ তােরনা দূর্গ অধিকার করেন। এর অল্পকাল পরেই তােরনার ৫ মাইল পূর্নে রায়গড়ে তিনি একটি দূর্গ নির্মান করেন। এইভাবে একে একে চাকন, বড়মতি, সিংহগড়, পুরন্দর প্রভৃতি দূর্গ অধিকার করে শিবাজী বিজাপুর রাজ্যের বেশ খানিকটা দখল করে নিলে বিজাপুরের সুলতান রেগে গিয়ে শিবাজীর পিতা শাহুজীকে কারারুদ্ধ করেন। এই সময় শিবাজী দক্ষিনাত্যের মােঘল শাসনকর্তা মুরাদের সাহায্য চান৷ ফলে বিজাপুরের সুলতান ভীত হয়ে শাহুজীকে মুক্তি দেন। শিবাজী এইসময় পিতার জমিদারির সমস্ত দায়িত্ব নিজ হাতে নেন। কয়েক বছর পর ১৬৫৬ খ্রীষ্টাব্দে দক্ষিনাত্যের শাসনকর্তা ঔরঙ্গজেবের সাথে বিজাপুরের সুলতানের সংঘাতের সুযােগ নিয়ে শিবাজী জাওলি নামক স্থান দখল করেন। ১৬৫৭ খ্রীষ্টাব্দে শিবাজী মুঘল সম্রাজ্যভুক্ত দাক্ষিনাত্যের জুনাতে আক্রমন করে লুণ্ঠন চালায়। ঔরঙ্গজেব তখন একদল সেনা পঠিয়ে শিবাজীকে পরাস্ত করেন। এইসময় বিজাপুরের সুলতান ও ঔরঙ্গজেবের মধ্যে সন্ধি স্থাপন হলে শিবাজী বিপদ বুঝে ঔরঙ্গজেবের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেন। ঔরঙ্গজেব কিন্তু শিবাজীকে বিশ্বাস করেন নি। এই সময় সম্রাট শাহজাহন অসুস্থ হওয়ায় ঔরঙ্গজেব দিল্লী অভিমুখে যাত্রা করার তাড়াতেই শিবাজীর আনুগত্য স্বীকারের ঘােষনাতেই সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর সাথে শান্তি স্থাপন করেন। এরপর ঔরঙ্গজেবের অনুপস্থিতিতে শিবাজী শান্তিচুক্তি ভঙ্গ করে একে একে কল্যান, ভিওয়ান্তী, মহুলী প্রভৃতি স্থান দখল করে দক্ষিনে মাহদ পর্যন্ত অগ্রসর হন। এদিকে বিজাপুরের সুলতান শিবাজীকে আক্রমন করেন। তিনি তার প্রধান সেনাপতি ও ওমরাহ আফজল খাঁকে নির্দেশ দেন শিবাজীকে মৃত অথবা জীবিত ধরে আনার জন্য। অবস্থার গুরুত্ব উপলব্ধি করে শিবাজী প্রতাপরগড় দুর্গে আশ্রয় নেন। অবশেষে আফজল খাঁ শান্তিচুক্তির জন্য শিবাজীকে শান্তি শিবিরে আমন্ত্রন জানান৷ শিবাজী আফজল খাঁর অভিসন্ধি বুঝতে পেরে পােশাকের নীচে বর্ম ও পাগড়ীর তলায় শিরস্ত্রান পরে যান এবং বাঘনখ নামক একপ্রকার তীক্ষ্ণ অস্ত্র সঙ্গে নিয়ে যান। আফজল খাঁ আলিঙ্গনের সুযােগে শিবাজীকে ছুরির আঘাত করতে উদ্যত হলে শিবাজী বাঘনখের সাহায্যে আফজল খাঁকে হত্যা করেন। সেনাপতির মৃত্যুতে বিজাপুরের সেনাবাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এই সুযােগে শিবাজী কোলাপুর ও কঙ্কন দখল করেন। কিন্তু বিজাপুরের প্রতিআক্রমনে তিনি পানহাল দূর্গ ছাড়তে বাধ্য হন। ইতিমধ্যে ঔরঙ্গজেব দিল্লীর সিংহাসনে বসে নিজ মাতুল শায়েস্তা খাঁকে দাক্ষিনাত্যের সুবেদার হিসাবে নিয়ােগ করেন শিবাজীকে দমন করার উদ্দেশ্যে। শায়েস্তা খাঁ একে একে পুনা, চাকন, উত্তর কঙ্কন ও কল্যান অধিকার করে নেন। ১৬৬৩ খ্রীষ্টাব্দের ১৫ এপ্রিল পুনায় শায়েস্তা খাঁর শিবিরে শিবাজী অতর্কিত আক্রমন করে শায়েস্তা খাঁর পুত্রসহ ৪০ জন অনুচরকে নিহত করেন। শায়েস্তা খাঁ জানালা ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার সময় শিবাজীর তরবারির আঘাতে তার হাতের আঙুল ছিন্ন হয়ে যায়। লাঞ্ছিত শায়েস্তা খাঁকে বাংলার সুবেদার হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। সুযােগ বুঝে শিবাজী সুরাট বন্দর লুণ্ঠন করেন। এরপর ঔরঙ্গজেব শিবাজীকে দমন করার দায়িত্ব দেন তাঁর দুই বিখ্যাত সেনাপতি জয়সিংহ ও দিলীর খাঁ এর ওপর। জয়সিংহ পুরন্দর দূর্গ অবরােধ করে শিবাজীকে বেশ বেকায়দায় ফেলেন। বিপদ বুঝে শিবাজী মুঘলদের সাথে পুরন্দরের সন্ধি (১৬৬৫ সালের ২২ জুন) করেন। পরে আগ্রার মূঘল দরবারে ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযােগ আনলে ঔরঙ্গজেব শিবাজীকে নজরবন্দী করেন। কিন্তু শিবাজী আপন বুদ্ধি বলে আগ্রা থেকে ফলের ঝুড়িতে করে পালিয়ে আসেন। এর তিনবছর পর শিবাজীকে ঔরঙ্গজেব রাজা বলে স্বীকার করে নেন এবং বেরারের জায়গীর প্রদান করেন। ১৬৭০ সালে শিবাজী তাঁর হৃত দূর্গগুলি (যেগুলি পুরন্দর সন্ধির ফলে মুঘলদের দিয়ে দিতে হয়ে হয়েছিল৷ পুরন্দর সন্ধির সময় শিবাজী তাঁর ৩৫টি দূর্গের মধ্যে ২৩ দূর্গ ছেড়ে দেন) ফেরত পাওয়ার জন্য পুনরায় মুঘলদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। এইসময় তিনি তাঁর অধিকাংশ দুর্গ উদ্ধার করেন এবং দ্বিতীয়বারের জন্য সুরাট বন্দর লুণ্ঠন করেন। অবশেষে ১৬৭৪ খৃষ্টাব্দের ১৬ জুন রাজধানী রায়গড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন রাজা হিসাবে শিবাজীর অভিষেক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তিনি ছত্রপতি ও গাে-ব্রহ্মন প্রতিপালক উপাধি গ্রহন করেন। ঐ বছর থেকে রাজ্যাভিষেক শক নামে একটি নতুন বর্ষ গননার শুরু হয়। পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে শিবাজী জিঞ্জি, ভেলাের ও পার্শ্ববর্তী দুর্গ অধিকার করেন। এইসময় ১৬৮০ খ্রীষ্টাব্দে ৪ এপ্রিল রবিবার হঠাৎ করেই শিবাজীর মৃত্যু হয়।
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া Telegram গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
টেলিগ্রাম গ্রুপ এ যোগদান করার জন্য - Click Here
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
ইউরোপের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here
শিবাজী| শাহজি। বাঘনখ।
শিবাজির ঘোড়ার নাম। শিবাজির তরবারির নাম। শিবাজির পতাকার নাম। জিজাবাই। পুরন্দরের সন্ধি।
শিবাজির রাজ্যাভিষেক।Shibaji| Bakhnokh| Shibaji's Horse Name| Shibaji's sword | Flag of Shivaji.