সেন আমলের প্রশাসনিক ও সামাজিক অবস্থা
Set by - Manas Adhikary
সেন আমলের প্রশাসনিক ও সামাজিক অবস্থা প্রথম পর্ব | Administrative and Social Condition of Sen Period Part –I
সান্ধিবিগ্রহিক। মহাসান্ধিবিগ্রহিক। মহাধর্মাধ্যক্ষ। মহামুদ্রাধিপতি। মহাসর্বাধিকৃত। মহাক্ষপটলিক। মহাপ্রতীহার। অন্তরঙ্গ। মহাসেনাপতি। মহাগনস্থ। মহাবাহুপতি। মহাপীলুপতি। নবাধক্ষ্য।
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো সেন আমলের প্রশাসনিক ও সামাজিক অবস্থা। এই পর্বে সেন আমলের প্রশাসনিক অবস্থা সম্পর্কিত আলচনা করব। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
সেন আমলের প্রশাসনিক ব্যবস্থা| Administrative Condition of Sen Period Part –I
সেন বংশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা
সেন আমলে রাজাই ছিলেন সর্বশক্তিমান এবং সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী। তাঁকে ঘিরে রাজ্যের প্রশাসনিক যন্ত্র আবর্তিত হত। সেন নরপতি গন নিজেদের পদের আভিজাত্যের প্রকাশ ঘটাতেন অরিরাজ বৃষভ শংকর, অরিরাজ নিঃশঙ্ক শঙ্কর, অরিরাজ মদন শঙ্কর, অরিরাজ বৃষভাঙ্গ শংকর, অরিরাজ অসহা শংকর ইত্যাদি গালভরা অভিধা গ্রহনের মাধ্যমে। লক্ষ্যনীয় যে, নবদ্বীপ ও উত্তর বাংলা সেনদের হাত থেকে হস্তচ্যুত হলেও খেতাব গ্রহনের প্রবনতা কমে না গিয়ে বরং আরও বৃদ্ধি পায়। সেন রাজ বিশ্বরূপ সেন এই ভগ্ন রাজ্যের অধিপতি হয়েও তিনি 'অশ্বপতি-গজপতি নরপতি- রাজত্রয়াধিপতি' উপাধি গ্রহন করেছিলেন।
রাজা প্রশাসনিক কাজে বিভিন্ন পদস্থ রাজপুরুষের সাহায্য গ্রহন করতেন। রাজপরিবারের সদস্যরাও প্রশাসনিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থাকতেন। রাজপরিবারের জেষ্ঠ্যপুত্র সাধারনত যুবরাজ হতেন। যুদ্ধ-বিগ্রহে তাঁকে প্রায়শই অংশগ্রহন করতে হত। যেমন- লক্ষ্মন সেন তাঁর পিতামহ ও পিতার আমলে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। প্রশাসনিক কাজে রাজার সাহায্যকারী বিভিন্ন পদগুলির মধ্যে নীচে কতগুলি উল্লেখ করা হল-
ক) মন্ত্রী - এই পদের অপর নাম ছিল রাজামাত্য। এনারা রাজার পরামর্শদাতারূপে কাজ করতেন।
খ) সান্ধিবিগ্রহিক ও মহাসান্ধিবিগ্রহিক - পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা বিভাগের সাথে যুক্ত রাজপুরুষকে বলা হত সান্ধিবিগ্রহিক। এই সান্ধিবিগ্রাহকদের মধ্যে যিনি শীর্ষস্থানীয় ছিলেন তাকে বলা হত মহাসান্ধিবিগ্রাহিক। এই মহাসান্ধিবিাহিক রাজার প্রতিনিধি হিসাবে ভূমিদান ও বিক্রয় অনুমোদন করতেন, অর্থাৎ দূতকরূপে কাজ করতেন। লক্ষনসেনের আনুলিয়া তাম্রশাসনে নারায়ন দত্ত নামক এরূপ সান্ধিবিগ্রহিকের নাম পাওয়া গিয়েছে।
গ) মহাধর্মাধ্যক্ষ- রাজ্যের প্রধান বিচারপতিরূপে কাজ করতেন।
ঘ) মহামুদ্রাধিপতি - ছাড়পত্র বা পাসপোর্ট বিভাগের অধ্যক্ষ ছিলেন এই মহামুদ্রাধিপতি।
ঙ) মহাসর্বাধিকৃত - এরা রাজ্যের মুখ্য সচিবরূপে কাজ করতেন। কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক দফতর অধিকরনের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন এরা।
চ) মহাক্ষপটলিক- সরকারি মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারের অধ্যক্ষ ছিলেন এরা। এছাড়া তাঁকে গাননিক অর্থাৎ আয়-ব্যয়ের হিসাবের দায়িত্বও পালন করতে হত।
ছ) মহাপ্রতীহার - রাজ্যের ও প্রাসাদের সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
জ) অন্তরঙ্গ - এরা সাধারনত রাজার ব্যক্তিগত রাজবৈদ্য ছিলেন।
বিভিন্ন সেনলেখ থেকে সেনাধ্যক্ষদের বিভিন্ন পদের কথা জানা যায়।
মহাসেনাপতি - নৌ ও পদাতিকবাহিনী, রথারোহী, অশ্বারোহী এবং গজারোহী সেনাদের ভার বিশেষ বিশেষ রাজপুরুষের উপর ন্যস্ত ছিল। তাঁদের উপরে যার অবস্থান ছিল তিনি ছিলেন মহাসেনাপতি।
মহাগনস্থ- সেনাবিভাগে গণ গঠনের ভারপ্রাপ্ত সর্বোচ্চ পদাধিকারী ছিলেন মহাগনস্থ।
মহাবাহুপতি - যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনবিন্যাসের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন।
মহাপীলুপতি - হস্তীবাহিনী যিনি পরিচালনা করতেন তাকে বলা হত মহাপীলুপতি।
নবাধক্ষ্য - নৌবাহিনীর অধিকর্তাকে বলা হত নাবাধ্যক্ষ।
সৈন্যবাহিনী কয়েকটি গণ বা এককে বিভক্ত ছিল।
২৭ জন রথারোহী - ১ গন রথারোহী
২৭ জন গজারোহী - ১ গন রথারোহী
৮১ জন অশ্বারোহী - ১ গন অশ্বারোহী
১৩৫ জন পদাতিক - ১ গন পদাতিক সৈন্য
পালযুগের মতই সেনযুগে ভুক্তিই ছিল রাষ্ট্রের বৃহত্তম বিভাগ। তবে পালযুগের থেকে এই সেন যুগে ভুক্তির আয়তন অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেনামলের প্রথম দিকে মাত্র দুটি ভুক্তি ছিল। যথা- পুন্ডবর্ধন ও বর্ধমান। লক্ষ্মনসেন বর্ধমান ভুক্তিটাকে দুইভাগে বিভক্ত করে কঙ্কগ্রাম নামে একটি নতুন ভুক্তি গঠন করেন। এই ভুক্তির শাসনভার যিনি পরিচালনা করতেন তাকে বৃহদুপরিক বলা হত।
সেন আমলে ভুক্তির নিম্নতর বিভাগ ছিল মন্ডল, মন্ডলের নিম্নতর উপবিভাগ ছিল চতুরক এবং চতুরকের নিম্নতর উপবিভাগ ছিল পাটক। চতুরক সাধারনত চারটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হত। গ্রামগুলি পাটকে বিভক্ত ছিল। পাটক থেকেই পাড়া কথাটির উৎপত্তি।
সেন বংশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা
সেন আমলে রাজাই ছিলেন সর্বশক্তিমান এবং সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী। তাঁকে ঘিরে রাজ্যের প্রশাসনিক যন্ত্র আবর্তিত হত। সেন নরপতি গন নিজেদের পদের আভিজাত্যের প্রকাশ ঘটাতেন অরিরাজ বৃষভ শংকর, অরিরাজ নিঃশঙ্ক শঙ্কর, অরিরাজ মদন শঙ্কর, অরিরাজ বৃষভাঙ্গ শংকর, অরিরাজ অসহা শংকর ইত্যাদি গালভরা অভিধা গ্রহনের মাধ্যমে। লক্ষ্যনীয় যে, নবদ্বীপ ও উত্তর বাংলা সেনদের হাত থেকে হস্তচ্যুত হলেও খেতাব গ্রহনের প্রবনতা কমে না গিয়ে বরং আরও বৃদ্ধি পায়। সেন রাজ বিশ্বরূপ সেন এই ভগ্ন রাজ্যের অধিপতি হয়েও তিনি 'অশ্বপতি-গজপতি নরপতি- রাজত্রয়াধিপতি' উপাধি গ্রহন করেছিলেন।
রাজা প্রশাসনিক কাজে বিভিন্ন পদস্থ রাজপুরুষের সাহায্য গ্রহন করতেন। রাজপরিবারের সদস্যরাও প্রশাসনিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থাকতেন। রাজপরিবারের জেষ্ঠ্যপুত্র সাধারনত যুবরাজ হতেন। যুদ্ধ-বিগ্রহে তাঁকে প্রায়শই অংশগ্রহন করতে হত। যেমন- লক্ষ্মন সেন তাঁর পিতামহ ও পিতার আমলে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। প্রশাসনিক কাজে রাজার সাহায্যকারী বিভিন্ন পদগুলির মধ্যে নীচে কতগুলি উল্লেখ করা হল-
ক) মন্ত্রী - এই পদের অপর নাম ছিল রাজামাত্য। এনারা রাজার পরামর্শদাতারূপে কাজ করতেন।
খ) সান্ধিবিগ্রহিক ও মহাসান্ধিবিগ্রহিক - পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা বিভাগের সাথে যুক্ত রাজপুরুষকে বলা হত সান্ধিবিগ্রহিক। এই সান্ধিবিগ্রাহকদের মধ্যে যিনি শীর্ষস্থানীয় ছিলেন তাকে বলা হত মহাসান্ধিবিগ্রাহিক। এই মহাসান্ধিবিাহিক রাজার প্রতিনিধি হিসাবে ভূমিদান ও বিক্রয় অনুমোদন করতেন, অর্থাৎ দূতকরূপে কাজ করতেন। লক্ষনসেনের আনুলিয়া তাম্রশাসনে নারায়ন দত্ত নামক এরূপ সান্ধিবিগ্রহিকের নাম পাওয়া গিয়েছে।
গ) মহাধর্মাধ্যক্ষ- রাজ্যের প্রধান বিচারপতিরূপে কাজ করতেন।
ঘ) মহামুদ্রাধিপতি - ছাড়পত্র বা পাসপোর্ট বিভাগের অধ্যক্ষ ছিলেন এই মহামুদ্রাধিপতি।
ঙ) মহাসর্বাধিকৃত - এরা রাজ্যের মুখ্য সচিবরূপে কাজ করতেন। কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক দফতর অধিকরনের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন এরা।
চ) মহাক্ষপটলিক- সরকারি মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারের অধ্যক্ষ ছিলেন এরা। এছাড়া তাঁকে গাননিক অর্থাৎ আয়-ব্যয়ের হিসাবের দায়িত্বও পালন করতে হত।
ছ) মহাপ্রতীহার - রাজ্যের ও প্রাসাদের সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
জ) অন্তরঙ্গ - এরা সাধারনত রাজার ব্যক্তিগত রাজবৈদ্য ছিলেন।
বিভিন্ন সেনলেখ থেকে সেনাধ্যক্ষদের বিভিন্ন পদের কথা জানা যায়।
মহাসেনাপতি - নৌ ও পদাতিকবাহিনী, রথারোহী, অশ্বারোহী এবং গজারোহী সেনাদের ভার বিশেষ বিশেষ রাজপুরুষের উপর ন্যস্ত ছিল। তাঁদের উপরে যার অবস্থান ছিল তিনি ছিলেন মহাসেনাপতি।
মহাগনস্থ- সেনাবিভাগে গণ গঠনের ভারপ্রাপ্ত সর্বোচ্চ পদাধিকারী ছিলেন মহাগনস্থ।
মহাবাহুপতি - যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনবিন্যাসের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন।
মহাপীলুপতি - হস্তীবাহিনী যিনি পরিচালনা করতেন তাকে বলা হত মহাপীলুপতি।
নবাধক্ষ্য - নৌবাহিনীর অধিকর্তাকে বলা হত নাবাধ্যক্ষ।
সৈন্যবাহিনী কয়েকটি গণ বা এককে বিভক্ত ছিল।
২৭ জন রথারোহী - ১ গন রথারোহী
২৭ জন গজারোহী - ১ গন রথারোহী
৮১ জন অশ্বারোহী - ১ গন অশ্বারোহী
১৩৫ জন পদাতিক - ১ গন পদাতিক সৈন্য
পালযুগের মতই সেনযুগে ভুক্তিই ছিল রাষ্ট্রের বৃহত্তম বিভাগ। তবে পালযুগের থেকে এই সেন যুগে ভুক্তির আয়তন অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেনামলের প্রথম দিকে মাত্র দুটি ভুক্তি ছিল। যথা- পুন্ডবর্ধন ও বর্ধমান। লক্ষ্মনসেন বর্ধমান ভুক্তিটাকে দুইভাগে বিভক্ত করে কঙ্কগ্রাম নামে একটি নতুন ভুক্তি গঠন করেন। এই ভুক্তির শাসনভার যিনি পরিচালনা করতেন তাকে বৃহদুপরিক বলা হত।
সেন আমলে ভুক্তির নিম্নতর বিভাগ ছিল মন্ডল, মন্ডলের নিম্নতর উপবিভাগ ছিল চতুরক এবং চতুরকের নিম্নতর উপবিভাগ ছিল পাটক। চতুরক সাধারনত চারটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হত। গ্রামগুলি পাটকে বিভক্ত ছিল। পাটক থেকেই পাড়া কথাটির উৎপত্তি।
সেন আমলের প্রশাসনিক ও সামাজিক অবস্থা দ্বিতীয় পর্ব >>>>
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া Telegram গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
টেলিগ্রাম গ্রুপ এ যোগদান করার জন্য - Click Here
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here