লক্ষ্মণ সেন
Set by - Manas Adhikary
লক্ষ্মণ সেন প্রথম পর্ব | Sen Dynasty and Lakshman Sen Part –I
লক্ষ্মন সেন| সেনবংশের
পতন। গৌড়েশ্বর| পরম রায়| অরিরাজ মদন শংকর| অরিরাজ বৃষভ শংকর| অরিরাজ অসহা শঙ্কর| অরিরাজ বৃষভাঙ্ক শঙ্কর| অরিরাজ নিঃশঙ্ক শংকর| হিন্দুদের খলিফা| পঞ্চরত্ন।
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো লক্ষ্মণ সেন। এই পর্বে থাকছে লক্ষ্মণ সেন সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পরবর্তী পর্বে লক্ষ্মণ সেন সম্পর্কিত কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর আলচনা করব। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
লক্ষ্মণ সেন সংক্ষিপ্তরুপ[| About Sen Dynasty And Lakshman Sen Part –I
বাংলার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ন স্থান দখল করে আছেন সেন বংশের শেষ শক্তিশালী নরপতি লক্ষ্মন সেন। আনুমানিক ১১৭৯ খ্রিস্টাব্দে সেন বংশের তৃতীয় নরপতি তাঁর পিতা বল্লাল সেনের বানপ্রস্থ গমনের পর পিতৃসিংহাসনে আরোহন করেন। তাঁর মাতা ছিলেন রমাদেবী। বলাবাহুল্য যে পিতামহ এবং পিতার রাজত্বকালে তাঁর যৌবনকাল অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি যখন সিংহাসনে আরোহন করেন তখন তাঁর বয়স ৬০ বছর। তাঁর রণদক্ষতা কম ছিল না। কিন্তু উদ্দাম, বিচক্ষনতা ও দূরদর্শিতার একান্তই অভাব ছিল তাঁর মধ্যে। এই কারণেই সগৌরবে যার রাজত্বকালের সূচনা, ব্যর্থতায় তাঁর রাজত্বের অবসান ঘটে। বল্লালসেন যে গৌড়রাষ্ট্র-পুর্নগঠনব্রত অসমাপ্ত রেখে গিয়েছিলেন লক্ষ্মন সেন তা সম্পূর্ন করতে পারেননি।
লক্ষ্মন সেনের রাজনৈতিক জীবনের বহু তথ্য আমরা তাঁর রাজত্বকালে উৎকীর্ণ ৮ টি তাম্রশাসন থেকে পাই। এই আটটি তাম্রশাসন হল-
১) গোবিন্দপুর তাম্রশাসন (২৪ পরগনা)
২) আনুলিয়া তাম্রশাসন (নদীয়া)
৩) তর্পনদীঘি তাম্রশাসন (দিনাজপুর)
৪) মাধাইনগর তাম্রশাসন (পাবনা)
৫) শক্তিপুর তাম্রশাসন (মুর্শিদাবাদ)
৬) ভাওয়াল তাম্রশাসন (ঢাকা)
৭) সুন্দরবন তাম্রশাসন
৮) চন্ডী মূর্তিলিপি (ঢাকা)
এছাড়াও তাঁর সভাকবিদের প্রশস্তি থেকে এবং মুসলিম ঐতিহাসিক মিনহাজ উদ্দীন সিরাজ রচিত তবকাত-ই-নাসিরী গ্রন্থ থেকে তাঁর রাজত্বকাল সম্পর্কে বিশদভাবে জানা যায়। লক্ষ্মনসেনের পিতামহ এবং পিতা দুজনেই শৈব ছিলেন। তাই তাদের উপাধি ছিল 'পরম মহেশ্বর'। কিন্তু লক্ষ্মন সেন সেনবংশের পারিবারিক ধর্মীয় গন্ডি পেরিয়ে এসে শৈবধর্ম গ্রহন না করে তিনি বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহন করেন। তিনি ভগবান বিষ্ণুর চতুর্থ অবতার উগ্রমাধব নৃসিংহ এর উপাসনা করতেন। এজন্য পিতা বা পিতামহের 'পরমমহেশ্বর' উপাধির পরিবর্তে তিনি 'পরম বৈষ্ণব' এবং 'পরম নরসিংহ' উপাধি গ্রহন করেন। এছাড়াও তিনি 'অরিরাজ মদন শংকর' উপাধি গ্রহন করেছিলেন। তাঁর প্রতিটি তাম্রশাসনে তিনি নারায়নের প্রনাম ও স্তুতিবাক্য দিয়ে তাম্রশাসনের লেখা শুরু করেছেন। লক্ষ্মন সেন তারাদেবী বা তন্দ্রাদেবীকে বিবাহ করেন। তারাদেবী বা তন্দ্রাদেবী নিম্নবর্নের ছিলেন বলে, বল্লাল সেন মেনে নিতে না পেরে লক্ষ্মন সেনকে পূর্ববঙ্গে নির্বাসিত করেছিলেন। পরে অবশ্য বল্লাল সেন এই বিবাহ মেনে নেন। তারাদেবীর গর্ভজাত পুত্রসন্তান হলো মাধব সেন, কেশব সেন এবং বিশ্বরূপ সেন।
লক্ষ্মন সেনের রাজ্যাভিষেকের সময় থেকেই একটি নতুন সাল বা সম্বৎ গননা শুরু হয়। এই নতুন সাল বা সম্বৎ এর নাম লক্ষ্মন সংবৎ বা লংসং। এখনও মিথিলাতে এই সাল গননার প্রচলন রয়েছে। লক্ষ্মনসেন একটি নতুন রাজধানী স্থাপন করেন এবং তার নাম দেন লক্ষ্মনাবতী।
পাঁচজন গুনী ব্যক্তি লক্ষ্মন সেনের রাজসভাকে অলংকৃত করেছিলেন। এরা হলেন- উমাপতিধর, ধোয়ী, শরন, গোবর্ধন, ও জয়দেব। এদেরকে একত্রে পঞ্চরত্ন বলা হয়।
রাজ্যজয়
কামরূপ জয়
পিতামহ বিজয় সেনের সময়কালে লক্ষ্মন সেন সেনাপতিরূপে কামরূপ রাজ্য আক্রমন করেন। লক্ষ্মনসেনের আক্রমনে ভীত হয়ে কামরূপরাজ তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেন।
কলিঙ্গ/ উড়িষ্যা জয়
লক্ষ্মনসেনের ভাওয়াল রাজ্য ও মাধাইনগর লিপি (মালদহে অবস্থিত) থেকে জানা যায় যে, লক্ষ্মনসেন যৌবনে পিতামহ বিজয় সেনের সাথে কলিঙ্গ অভিযানে অংশগ্রহন করে সফল হন। পরবর্তীকালে কলিঙ্গ, সেন সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল। তবে কলিঙ্গরাজ্য কতদিন সেন অধীনে ছিল সে সম্পর্কে সঠিক ধারনা করা যায় না।
গাহড়বাল রাজ্য জয়
লক্ষ্মনসেনের পূর্বে সেন নরপতি বিজয়সেন উত্তরভারতে নৌ অভিযানের মাধ্যমে গাহড়বাল অভিযান করেছিলেন। সেনরাজাদের শাসনকালে গাহড়বাল রাজপুতদের সাথে সেন নরপতিদের সম্পর্ক ছিল প্রতিদ্বন্ধীতাপূর্ন। সেন নরপতি লক্ষ্মন সেন গাহড়বাল রাজপুত রাজা জয়চন্দ্র সিংকে পরাজিত করে গয়া থেকে কনৌজ পর্যন্ত বিস্তীর্ন অঞ্চল নিজের সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
ম্লেছ রাজার পরাজয়স্বীকার
লক্ষ্মনসেনের সভাকবি শরন ও উমাপতিধরের রচিত শ্লোক থেকে জানা যায় যে, লক্ষ্মন সেন এক ম্লেচ্ছরাজাকে পরাজিত করেন। ড. নীহাররঞ্জন রায়ের মতে বখতিয়ার খলজী কর্তৃক নদীয় জয় করার পূর্বেই ম্লেচ্ছরাজ, সেন নরপতি লক্ষ্মন সেনের কাছে পরাজিত হন। আবার অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে, এখানে ম্লেচ্ছ বলতে আরাকানী মগধেরকে বোঝায়। ধারনা করা হয় যে, ঐ আরাকানী মগধরা হয়তো বাংলায় এসেছিল এবং লক্ষ্মনসেন তাদেরকে পরাজিত করেন।
গৌড়রাজ্য জয়
লক্ষ্মন সেনের ভাওয়াল ও মাধাইনগর লিপি থেকে জানা যায় যে, যৌবনকালে (সম্ভবত পিতামহ বিজয়সেনের আমলে) তিনি গৌড় রাজ্য জয় করেছিলেন। লক্ষ্মনসেন 'গৌড়েশ্বর' উপাধি ধারন করেছিলেন। তিনিই প্রথম সেন নরপতি যিনি গৌড়েশ্বর উপাধি ধারন করেছিলেন। তবে এই তথ্যটি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কারন লক্ষ্মনসেনের দুই পুত্র বিশ্বরূপ সেন ও কেশব সেন উভয়েই তাঁদের তাম্রশাসনে বিজয়সেন, বরালসেন, এবং লক্ষ্মনসেন সবাইকে 'গৌড়েশ্বর' উপাধিতে ভূষিত করেন। তবে একথা নিশ্চিত যে, লক্ষ্মনসেন 'গৌড়েশ্বর' উপাধি গ্রহন করেছিলেন।
তুর্কি আক্রমন ও সেনবংশের পতন
লক্ষ্মণ সেনের শেষ জীবন সুখকর হয়নি। শাসনকালের শেষদিকে তিনি এতটাই দূর্বল হয়ে পরেন যে, তাঁর পক্ষে সাম্রাজ্যের শাসন পরিচালনা করা ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। এইসময় উত্তর ভারতের রাজ্যগুলো একে একে তুর্কিরা দখল করতে থাকে। তুর্কিরা বাংলায় প্রবেশের জন্য অনুকুল পরিবেশ সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। ১২০৪ খ্রীস্টাব্দে বখতিয়ার খলজী লক্ষ্মনসেনের রাজধানী নদীয়ার লক্ষ্মনাবতী আক্রমন করেন। বখতিয়ার খলজী মাত্র ১৮ জন অশ্বারোহী নিয়ে অশ্ববিক্রেতার ছদ্মবেশে লক্ষ্মনসেনের প্রাসাদের সম্মুখে বিনাবাধায় উপস্থিত হয়ে প্রাসাদরক্ষীদের হত্যা করতে শুরু করেন। সময়টা তখন ছিল মধ্যাহ্নভোজনের সময়। সৈন্য সামন্তরা সাধারনত এইসময়ে কেউ ভোজনে ব্যস্ত ছিলেন, কেউ বা ভোজনের পর আলস্যতায় মগ্ন বা অসচেতন ছিলেন। লক্ষ্মনসেন ও এইসময় মধ্যাহ্নভোজনে রত ছিলেন। প্রাসাদের সম্মুখে শোরগোল ও আর্তনাত শুনে তিনি ভীত হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে পূর্বে নিদান দেওয়া জ্যোতিষীদের ভবিষ্যতবানীর কথা মনে পড়ে যায়। ফলে ভীত লক্ষ্মন সেন কাল বিলম্ব না করে প্রাসাদের পিছন দরজা দিয়ে পলায়ন করে নৌকাসহযোগে পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুরে গিয়ে আশ্রয় নেন। ফলে রাজা লক্ষ্মনসেনের বিপুল ধনসম্পদ ও বহুসংখ্যক হাতি বখতিয়ার খলজীর হস্তগত হয় এবং উত্তর ও পশ্চিম বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
লক্ষ্মন সেনের এই ব্যর্থতা সম্পর্কে বলা হয় জাতিভেদ প্রথা, কৌলিন্য প্রথা, ব্রাহ্মন্য ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা, একটি উচ্চবিত্ত এবং সুবিধাভোগী সম্প্রদায়ের সৃষ্টি বাংলার জাতীয় সংহতিকে ধ্বংস করে এবং লক্ষ্মন সেনকে তার ফল ভোগ করতে হয়। এর পরেও লক্ষ্মন সেন ও তাঁর পুত্ররা পূর্ববাংলায় সেনদের শাসন অব্যাহত রাখেন। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দের কোন একটি সময়ে লক্ষ্মন সেনের মৃত্যু হয় এবং ১২৬০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে সেন শাসনের চূড়ান্ত অবসান ঘটে।
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া Telegram গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
টেলিগ্রাম গ্রুপ এ যোগদান করার জন্য - Click Here
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here