কৈবর্ত বিদ্রোহ
Set
by - Manas Adhikary
কৈবর্ত বিদ্রোহ প্রথম পর্ব| Varendra Rebellion Part - I
ন্যায়পাল। তৃতীয় বিগ্রহপাল। দ্বিতীয় মহীপাল। কৈবর্ত বিদ্রোহ। দিব্যক। রুদ্রক। ভীম। শিবরাজ। Varendra Rebellion| Kaivarta Revolt|
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো কৈবর্ত বিদ্রোহ। এই পর্বে থাকছে কৈবর্ত বিদ্রোহ সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পরবর্তী পর্বে কৈবর্ত বিদ্রোহ
সম্পর্কিত কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর আলচনা করব। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
কৈবর্ত বিদ্রোহ সংক্ষিপ্তরুপ| About Kaivarta revolt Part - I.
ন্যায়পাল
প্রথম মহীপালের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ন্যায়পাল পৈতৃক সিংহাসনে আরোহন করলে কলচুরিরাজ গাঙ্গেয়দেব পালবংশকে আক্রমন করে বারানসী দখল করেন। এরপর গাঙ্গেয়দেবের পুত্র কর্ন পালরাজ্য আক্রমন করলে পালরাজ ন্যায়পাল পরাজিত হয়ে বৌদ্ধাচার্য অতীশ দীপঙ্করের নিকট আশ্রয় গ্রহন করেন। অতীশ দীপঙ্করের মধ্যস্থতায় উভয়ের মধ্যে সন্ধি স্থাপিত হয়।
তৃতীয় বিগ্রহপাল
ন্যায়পালের মৃত্যুর পর পালরাজ্যের সিংহাসনে বসেন তৃতীয় বিগ্রহপাল। তার আমলে তিনি কলচুরিরাজ কর্নকে পরাজিত করেন। সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত থেকে জানা যায় যে, কলচুরিরাজ কর্ন নিজ কন্যা যৌবনশ্রীর সাথে তৃতীয় বিগ্রহপালের বিবাহ দিয়ে দুই বিবাদমান রাজবংশের মধ্যে বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেন। তৃতীয় বিগ্রহপাল প্রায় ১৬ বছর রাজত্ব করেন। এই সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। যথা-
ক) পালরাজ্যের মহামন্ডলিক ঈশ্বর ঘোষ বর্ধমান জেলার ঢেক্করিতে একটি স্বাধীন রাজ্য গড়ে তুলে নিজেকে মহারাজাধিরাজ হিসাবে ঘোষনা করে।
ঘ) শূদ্রক গয়ার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতে থাকেন।
গ) মগধে মান বংশের রাজারা মগধের উপাধি ধারন করে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতে থাকে।
দ্বিতীয় মহীপাল
তৃতীয় বিগ্রহপালের দুজন মহিষী ছিলেন। প্রথম স্ত্রী ছিলেন রাষ্ট্রকূট বংশের রাজকন্যা। যার দ্বিতীয় মহীপাল, দ্বিতীয় শুরপাল এবং রামপাল নামক তিন পুত্রসন্তান ছিল। তৃতীয় বিগ্রহপালের দ্বিতীয় পত্নী ছিলেন কলচুরী রাজবংশের কন্যা যৌবনশ্রী। এনার কোন সন্তান ছিল বলে জানা যায় নি। তৃতীয় বিগ্রহপালের মৃত্যুর পর তাঁর জেষ্ঠ্য পুত্র দ্বিতীয় মহীপাল সিংহাসনে বসেই তাঁর অপর দুই ভ্রাতাকে বন্দী করেন। তিনি ছিলেন সন্দেহপ্রবন, হঠকারি। তাঁর চরিত্রে দূরদর্শিতা বা রণনৈপুন্যের একান্ত অভাব ছিল। যেকোনো কাজে তিনি মন্ত্রীদের পরামর্শকে গুরুত্ব দিতেন না, ফলে মন্ত্রীদের সাথে তাঁর বিরোধ সৃষ্টি হয়। রাজ্যজুড়ে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা এবং অরাজকতা। এর ফল হিসাবে বরেন্দ্রের সামন্তরা তাদের নায়ক এবং পালবংশের উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী দিব্যকের নেতৃত্বে দ্বিতীয় মহীপালের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করে। ইহাই ইতিহাসে কৈবত বিদ্রোহ পরিচিত।
কৈবর্ত বিদ্রোহ
কৈর্বত জাতির অধিকাংশ মানুষ ছিলেন মৎস্যজীবি বা জেলে এবং কৃষক। 'কৈ' অর্থাৎ জল এবং 'বর্ত" অর্থাৎ জীবন যাপন এই দুই শব্দ থেকে কৈবর্ত শব্দটি এসেছে। কৈবর্তদের বাসস্থান ছিল বরেন্দ্রভূমি। যে স্থানটি পালরাজাদের পিতৃভূমি বলে পরিচিত। এই কৈবর্ত জাতির মানুষজন পালরাজা দ্বিতীয় মহীপালের অত্যাচারে অত্যাচারিত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কৈবর্ত বিদ্রোহের অবতারনা করে। এদের নেতা ছিলেন দিব্যক বা দিব্য। তিনি সম্ভবত পালরাজবংশের এক উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী ছিলেন। তিনি কৈবর্তদের একত্রিত করে একটি শক্তিশালী বাহিনী তৈরী করেন। অনেক সামন্তও তাকে সহযোগীতা করেছিলেন। দ্বিতীয় মহীপাল মন্ত্রিদের পরামর্শ গ্রহন না করেই এই বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রেই প্রান হারান। এর ফলে গৌড় রাজধানী ও বরেন্দ্র দিব্যকের হস্তগত হয়। দিব্যক যেভাবে বরেন্দ্র দখল করে স্বাধীনতা ঘোষনা করেন তাতে মনে হয় যে তার সাথে সামন্তানদের গোপন কোন আঁতাত ছিল। দিব্যক অত্যন্ত শক্তিশালী শাসক ছিলেন। এইসময় দক্ষিন পূর্ববঙ্গে বর্মন বংশের প্রতিষ্ঠা করেন জাতবর্মা। জাতবর্মা দিব্যককেআক্রমন করলেও জাতবর্মা ততোটা সুবিধা করতে পারেনি। দিব্যকের রাজত্বকালে তৎকালীন পাল নরপতি রামপাল দিব্যকের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে দিব্যক রামপালকে পরাজিত করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার এ সফলতা পরবর্তী কৈবর্ত উত্তরাধিকারীরা ধরে রাখতে সক্ষম হন নি। দিব্যকের পর তার ভাই রুদ্রক এবং তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র ভীম পর্যায়ক্রমে বরেন্দ্র শাসন করেন। তাঁরা প্রত্যেকেই প্রজাদরদী এবং সুশাসক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। আর এই জনপ্রিয়তা পালদেরকে আরও শঙ্কিত করে তোলে। তৎকালীন পাল নরপতি রামপাল প্রথমদিকে বরেন্দ্র অধিকার করার চেষ্টা করলে ব্যর্থ হন। তারপর বেশ কিছু সময় তিনি নিশ্চুপ থাকার পর শক্তি সঞ্চারে নেমে পড়েন। এরই মধ্যে দিব্যক তার রাজ্য আক্রমন করলে সামনে সম্মুখ বিপদ দেখতে পেয়ে সকল রাজকীয় সম্মান ভুলে, নিজের শক্তি বৃদ্ধির জন্য সামন্তদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকেন। প্রচুর সম্পদ ও ভূমি প্রদান করার মাধ্যমে তিনি রাঢ়, অঙ্গ, মগধাদি, আটবিক ইত্যাদি প্রদেশের সামন্তদের সহায়তা লাভ করতে সমর্থ হন। বরেন্দ্রের কৈবর্ত বিদ্রোহের সফলতায় উৎসাহিত হয়ে মগধের বিদ্রোহী নেতা দেবরক্ষিত বিদ্রোহ ঘোষনা করলে রামপাল যুদ্ধে দেবরক্ষিতকে পরাজিত করে নিজ কন্যার সাথে বিবাহ দেন। ফলে দেবরক্ষিত পালরাজ রামপালের পক্ষে অবলম্বন করেন। নানাবিধ প্রচেষ্টার ফলে রামপাল অবশেষে এক বিশাল বাহিনীর সমাবেশ ঘটাতে সমর্থ হন। এইসময় বরেন্দ্রের শাসন কর্তা ছিলেন কৈবর্তরাজ ভীম। তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী শাসক ছিলেন। ফলে তাঁর আমলে বরেন্দ্র এক সমৃদ্ধশালী রাজ্যে পরিনত হয়েছিল। রামপাল তাঁর সেনাবাহিনীকে দুটি ভাগে বিভক্ত করেন। প্রথম ভাগের দায়িত্ব নিজহাতে রেখে দ্বিতীয় ভাগের দায়িত্ব মাতুলপুত্র শিবরাজের উপর অর্পন করে তাঁকে বরেন্দ্র অভিযানে পাঠান। শিবরাজ গঙ্গা পার হয়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেন। এই এলাকার গ্রামগুলো দখল করার পর শিবরাজ গঙ্গা নদীর উপর দিয়ে অসংখ্য নৌকা সহযোগে সেতু নির্মান করে রাজা রামপালকে খবর দেন। রামপাল ও তার সৈন্য বাহিনী নৌকা সহযোগে সেতুপথ দিয়ে এসে শিবরাজের বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে একত্রে কৈবর্তরাজ ভীমকে আক্রমন করে। হঠাৎ ভীম হস্তীপৃষ্ঠে যুদ্ধরত অবস্থায় বন্দী হয়ে পড়লে ভীমের বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে করে। এইসময়ে ভীমের অনুপস্থিতিতে এগিয়ে আসেন ভীমের বন্ধু হরি। তিনি ভীমের বিশৃঙ্খল সেনাদের আবার একত্রিত করে প্রবল প্রতিরোধ গরে তোলেন। কিন্তু রামপাল ছিলেন ভীষন ধূর্ত প্রকৃতির এবং কূটনীতিবিদ। তিনি প্রচুর অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রেই হরিকেও নিজের বশে আনেন। সম্ভবত হরি সোনার কলসের উপঢৌকন পেয়ে যুদ্ধ থেকে ইস্তফা ঘোষনা করে। ফলে রামপাল যুদ্ধে বিজয়লাভ করেন সহজেই। তিনি ভীমের রাজধানী দখল করেন এবং ভীমসহ তার পরিবারকে বন্দী করেন। প্রথমে ভীমের সম্মুখেই তার পরিবারকে হত্যা করা হয়। পরে ভীমকে শরাঘাতে হত্যা করা হয়। আর এর মাধ্যমেই পরিসমাপ্তি ঘটে কৈবর্ত বিদ্রোহ তথা কৈবর্ত শাসনের।
কৈবর্ত বিদ্রোহ দ্বিতীয় পর্ব >>>>
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া Telegram গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
টেলিগ্রাম গ্রুপ এ যোগদান করার জন্য - Click Here
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here