Type Here to Get Search Results !

সেনবংশের উত্থান ও বিজয় সেন প্রথম পর্ব [Bijay Sen]

 সেনবংশের উত্থান ও বিজয় সেন 

Set by - Manas Adhikary


সেনবংশের উত্থান ও বিজয় সেন  প্রথম পর্ব | Sen Dynasty and Bijay Sen Part –I

বীরসেন। সামন্তসেন হেমন্ত সেনবিজয় সেনদেওপাড়া প্রশস্তি। উমাপতিধর। .যশোদেবী । বিলাসদেবী।

নমস্কার, অভিনব  একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই।  আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো  সেনবংশের উত্থান ও বিজয় সেন এই পর্বে থাকছে  সেনবংশের উত্থান ও বিজয় সেন সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা পরবর্তী পর্বে  সেনবংশের উত্থান ও বিজয় সেন সম্পর্কিত  কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর আলচনা করব। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই  গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়

এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

 

সেনবংশ ও বিজয় সেন  সংক্ষিপ্তরুপ[| About Sen Dynasty And Bijay Sen Part –I  

পাল প্রভুত্বের অবসান ঘটিয়ে যে রাজশক্তি ধীরে ধীরে বাংলার শাসন কর্তৃত্ব অধিকার করে বসে বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে সেই রাজশক্তি সেন রাজবংশ নামে পরিচিত। এই সেন রাজারা কিন্তু বাঙালি নন, তাঁরা ছিলেন বহিরাগত। সেইসময়ে উৎকীর্ণ নিম্নলিখিত লিপিমালা থেকে সেনবংশের রাজত্বের কথা জানা যায়।
১) বিজয়সেনের দেওপাড়া প্রশস্তি ও ব্যারাকপুর তাম্রশাসন
২) বল্লালসেনের নৈহাটি তাম্রশাসন
৩) লক্ষ্মনসেনের তর্পন দিঘি তাম্রশাসন এবং গোবিন্দপুর তাম্রশাসন
৪) কেশবসেনের ইদিলপুর তাম্রশাসন ও মদনপুর তাম্রশাসন
৫) বিশ্বরুপসেনের কলকাতা সাহিত্য পরিষদ তাম্রশাসন

সেনরাজ বিজয়সেনের দেওপাড়া শিলালেখ থেকে জানা যায় যে, সেনরাজাদের পূর্বপুরুষ ছিলেন দাক্ষিণাত্যের চন্দ্রবংশীয় রাজা বীরসেন। লক্ষ্মনসেনের মাধাইনগর তাম্রশাসনে সেনবংশের অন্যতম নরপতি সামন্ত সেনকে কর্নাট-ক্ষত্রিয় বলেছেন। এ থেকে বোঝা যায় যে, সেনরাজারা কর্নাটকের অধিবাসী ছিলেন। বিভিন্ন সুত্র থেকে এটুকু নিশ্চিত যে, সেনরাজারা কন্নড়ভাষী কর্নাটক থেকে এসে বাংলায় বসতি স্থাপন করেছিলেন।
সেনদের লিপিমালা থেকে জানা যায় যে, সেন রাজারা ছিলেন চন্দ্রবংশীয় উত্তরাধিকারী এবং বহ্ম-ক্ষত্রিয়। অর্থাৎ সেনরা পূর্বে ছিলেন ব্রাহ্মন। পরবর্তীকালে তারা ব্রাহ্মন্য বৃত্তি ত্যাগ করে ক্ষত্রিয় বৃত্তি গ্রহন করেন। এজন্য তাদেরকে ব্রহ্ম-ক্ষত্রিয় বলা হয়। তবে সেনরা যে কবে বাংলায় বসতি স্থাপন করেছিলেন সে নিয়ে অনেক ধন্দ রয়েছে। বিজয়সেনের দেওপাড়া লেখ থেকে জানা যায় যে, বিজয়সেনের পিতামহ সামন্ত সেন কর্নাটে যৌবনকাল অতিবাহিত করে বহু যুদ্ধ-বিগ্রহের পর শেষ বয়সে এসে গঙ্গাতীরে বসবাস শুরু করেন। এই থেকে অনুমিত হয় যে, সামন্ত সেনই প্রথম বাংলার রাঢ় অঞ্চলে সেনদের বসতি স্থাপন করেন। কিন্তু বল্লালসেনের নৈহাটি তাম্রশাসন থেকে জানা যে, সেনরা সামন্ত সেনের বহুপূর্ব থেকেই রাঢ় বাংলায় বসবাস করছিলেন।
বীরসেন
সেন বংশের আদিপুরুষ হিসাবে বীরসেনকেই চিহ্নিত করা হয়। কারন সেন লিপিমালা বা অন্য কোন উৎসে তার পিতার কোন নাম পরিচয় পাওয়া যায় নি। অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব তাকে রাজপুত্র বলে উল্লেখ করেছেন। তবে জানা যায় যে, তিনি ক্ষত্রিয় পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। কর্নাটদেশে বীরসেন যুদ্ধবিগ্রহে অত্যন্ত খ্যাতি লাভ করেন।
সামন্ত সেন
বীর সেনের পর সেনবংশের যে ক্ষত্রিয়পুরুষের নাম জানা যায় তিনি হলেন সামন্ত সেন। সামন্ত সেনই বাংলার রাঢ় অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিলেন বলে বিভিন্ন লেখমালায় উল্লেখিত আছে। দেওপাড়া প্রশস্তি থেকে জানা যায় যে, সামন্ত সেন বাংলায় আসার আগে কর্নাটের লক্ষ্মী লুণ্ঠনকারী শত্রুদের ধ্বংস করেছিলেন। কর্নাট দেশে বহু যুদ্ধ বিগ্রহের পর সামন্ত সেন শেষ বয়সে গঙ্গা নদীর তীরে এসে জীবন যাপন করেছিলেন। বিভিন্ন লেখমালায় সামন্তসেনের নাম উল্লেখ থাকলেও তাকে কখনও রাজা বলে বর্ণনা করা হয়নি। এথেকে মনে করা করা হয় যে, সামন্ত সেন কোন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। মনে হয় পালরাজা তৃতীয় বিগ্রহপাল বা তাঁর কোন উত্তরাধিকারী সামন্ত সেনকে রাঢ়ের এক অঞ্চলের প্রশাসকের পদে নিযুক্ত করেছিলেন। জীবনের শেষ বেলায় পুত্র হেমন্তসেনের হাতে নিজ জনপদের প্রশাসনিক দায়িত্বভার অপর্ন করে তিনি বানপ্রস্থ গ্রহন করেন।
হেমন্ত সেন
সামন্ত সেনের পর প্রশাসনিক দায়িত্বভার গ্রহন করেন হেমন্ত সেন। হেমন্ত সেনকে প্রথম সেন বংশের রাজার মর্যাদা দেওয়া হয়। বিজয়সেনের ব্যারাকপুর তাম্রশাসন থেকে জানা যায় তিনি মহারাজাধিরাজ উপাধি গ্রহন করেছিলেন। পাল সাম্রাজ্যে দ্বিতীয় মহীপালের আমলে কৈবর্ত বিদ্রোহ দেখা দিলে সেই সুযোগে হেমন্তসেন রাঢ়দেশের একটি ক্ষুদ্র অঞ্চলে একটি স্বাধীন রাজা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। তাঁর রাজ্যের নাম ছিল কাশীপুরী। এইসময় আইনত তিনি পাল রাজাদের অনুগত হলেও তিনি কার্যত স্বাধীনভাবে রাজ্য পরিচালনা করতেন। দেওপাড়া লেখ থেকে তাঁর যশোদেবী নামক এক মহিষীর নাম জানা যায়, যিনি মহারাজ্ঞী উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।
বিজয়সেন
হেমন্ত সেনের মৃত্যুর পর সেনবংশের রাজা হন হেমন্তসেনের মহিষী যশোদেবীর গর্ভজাত পুত্র বিজয়সেন। এই বিজয়সেনকে সেনবংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা চলে। বিজয়সেনের প্রথম নাম ছিল ধীসেন। পরে তিনি শত্রু সৈন্য পরাজিত করলে বিজয় সেন নামে খ্যাতি লাভ করেন। ইনি প্রায় ৬২ বছর (মতান্তরে ৩২ বছর) রাজত্ব করেন।
বিজয়সেন পালরাজা রামপালের আমলের একজন সামন্তরাজা হিসাবে কাজ শুরু করেন। পাল রাজা রামপাল কৈবর্ত শাসনের আবসান ঘটানোর জন্য কৈবর্তরাজ ভীমের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে যে ১৪ জন সামন্তরাজা রামপালকে সহযোগীতা করেছিলেন তাদের মধ্যে বিজয়সেন ছিলেন অন্যতম। রামপালের মৃত্যুর পর পালসাম্রাজ্য খুব বেশীদিন স্থায়িত্ব লাভ করতে পারেনি। তাঁর মৃত্যুর পর পাল সাম্রাজ্য খন্ড খন্ড হয়ে ভেঙে যায়। পাল সাম্রাজ্য ভেঙে যাবার সাথে সাথে সামন্ত রাজারাও পাল শাসকদের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদেরকে স্বাধীন বলে ঘোষনা করে। ঠিক এইসময়ে বিজয়সেন রাঢ় অঞ্চলের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন।
বিজয়সেনের লিপি থেকে জানা যায় যে, তিনি অপরমন্দার বা হুগলি অঞ্চলের শূর রাজবংশের রাজকন্যা বিলাসদেবীকে বিবাহ করেন। বিলাসদেবী অত্যন্ত গুনসম্পন্ন মহিলা ছিলেন। তার যোগ্যতা ও গুনপনায় তিনি রাঢ়ের প্রধান মহিযীর পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন। সেসময় শূররাজবংশ অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। ফলে বিবাহসূত্রের কারনে বিজয়সেন শ্বশুরকুলের সাহায্যে তার ক্ষমতাবৃদ্ধি করেছিলেন একথা বলা যেতেই পারে।

রাজ্যজয়

১) বিজয়সেন কর্তৃক কামরূপ রাজ্য জয় উল্লেখ থাকলেও এ সম্পর্কে বিস্তারিত তেমন কিছু জানা যায় না।
২) বিজয়সেনের দেওপাড়া লিপি থেকে জানা যায় যে, বিজয় সেন উড়িষ্যায় অবস্থিত কলিঙ্গরা রাঘাবকে পরাজিত করেছিলেন।
৩) রাজশাহী অঞ্চলের পালরাজা রামপালের সামন্ত হিসাবে রাজত্বকারী কৌশম্বীরাজ দ্বোরোপরবর্ধনকে বিজয়সেন পরাজিত করেছিলেন।
৪) রামপালের অপর সামন্তরাজা কোটাটবী রাজ্যের বীরগুনকে বিজয়সেন পরাজিত করে তার রাজ্য দখল করেন।
৫) সেনদের মতো কর্নাট দেশীয় নাগরিক মিথিলার রাজা ন্যান্যদেব সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য বাংলা আক্রমন করলে যুদ্ধে তিনি বিজয়সেনের কাছে পরাজিত হন।
সামান্য একজন সামন্ত হয়েও সামন্তরাজ বিজয়সেন সমগ্র বাংলায় সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি পরমেশ্বর পরমভট্টরক ও মহারাজাধিরাজ উপাধি গ্রহন করেন। এছাড়াও তিনি 'অবিরাজ বৃষভশঙ্কর' নামক গৌরবসূচক নামেও পরিচিতি লাভ করেছিলেন। বিজয়সেন শৈব ধর্মালম্বী ছিলেন। তিনি বৈদিক ধর্ম ও ব্রাহ্মনদেরকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। তিনি ছিলেন যোগ্য শাসক, দানবীর এবং নির্মল চরিত্রের অধিকারী। ১১৫৮ খ্রিস্টাব্দে বিজয়সেনের মৃত্যু হয়।


প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া Telegram গ্রুপে জয়েন করতে পারেন

 টেলিগ্রাম গ্রুপ যোগদান করার জন্য - Click Here


ধন্যবাদ

ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। 

 

পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here

প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here

মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here

আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here

 ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad