পালবংশের সাহিত্য, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য
Set by - Manas Adhikary
পালবংশের সাহিত্য, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য প্রথম পর্ব| Literature, Architecture and Sculpture of of the Pala Dynasty Part-I
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো পাল আমলের সাহিত্য, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য। এই পর্বে থাকছে পাল আমলের সাহিত্য, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পরবর্তী পর্বে পাল আমলের সাহিত্য, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য সম্পর্কিত অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করব। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
পালবংশের সাহিত্য, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য| Literature, Architecture and Sculpture of of the Pala Dynasty Part- I
প্রায় চারশো বছর ধরা চলা পাল রাজবংশের রাজত্বকাল ছিল বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। পাল রাজাদের রাজত্বকালে ভাষা, সাহিত্য, শিল্পকলা, ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞান চর্চাসহ সাংস্কৃতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাঙালি মনিষীরা এক অসামান্য অবদান রেখে গিয়েছেন।
পাল আমলে মানুষজন যে ভাষায় কথা বলত তাকে বাংলা ভাষা না বললেও প্রায় বাংলা ভাষা বলা চলে। অর্ধমাগধী বা প্রাকৃত ভাষার গৌড়-বঙ্গীয় রূপের অপভ্রংশ ভাষার মিশ্রনের ফলে এই ভাষার সৃষ্টি হয়েছিল। এই ভাষায় বিখ্যাত গ্রন্থ চর্যাপদ রচিত হয় পাল আমলেই। পাল আমলে সাহিত্যগুলির বেশিরভাগই সংস্কৃত ভাষায় লেখা। এই আমলের পূর্বে সংস্কৃত সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে সাধারনত বৈদর্ভ রীতি ব্যবহার করা হত। কিন্তু পাল আমলে সর্বপ্রথম ঐ বৈদর্ভ রীতিকে অস্বীকার করে সংস্কৃত সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে অলংকার বহুল গৌড়িয় রীতির প্রচলন ঘটানো হয়। দশম শতকের কবি রাজশেখর তার 'কাব্য মীমাংসা' গ্রন্থে গৌড়িয় রীতির ব্যবহার করেন। প্রকৃতপক্ষে বঙ্গদেশে যেসব বৌদ্ধ সাহিত্য রচিত হয়েছিল সেগুলি ছিল সাধারনত গৌড়িয় রীতিকে অবলম্বন করে লেখা।
পাল আমলের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন কাব্য হল রামচরিতম। এটি মদনপালের সভাকবি সন্ধ্যাকর নন্দী রচনা করেছিলেন। এই কাব্যগ্রন্থটি সংস্কৃত ভাষায় দ্ব্যর্থবোধক অর্থে রচিত হয়েছিল। একদিক থেকে দেখলে এটি ছিল রামায়নের রামচন্দ্রের কাহিনী এবং অপরদিক থেকে এটিতে পাল রাজা রামপাল কর্তৃক কৈবর্ত বিদ্রোহ দমন এবং বরেন্দ্রভূমি পুনরুদ্ধার থেকে শুরু করে মদনপাল পর্যন্ত পাল শাসনের ইতিবৃত্ত বর্ণিত হয়েছে। রামচরিত ছাড়াও ক্ষেমীশ্বর রচিত 'চন্ড কৌশিকী নাটক', নীতিবর্মা রচিত অলংকারবহুল কাব্য 'কীচক বধ' এবং 'কবীন্দ্র বচন সমুচ্চয়' পালযুগের অন্যতম সাহিত্য সম্পদ।
পাল আমলে ব্রাহ্মন্য ধর্ম, দর্শন ও সংস্কার বিষয়ক বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। এই যুগে হুগলি জেলার ভরশুট গ্রামের কবি শ্রীধর ভট্ট 'ন্যায় কন্দলী' নামক বৈশেষিক সুত্রের উপর একটি টীকা রচনা করেন। শ্রীধরভট্টের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন জনৈক ‘কায়স্থকুলতিলক' পান্ডুদাস। এই যুগের বিখ্যাত শাস্ত্রকার ছিলেন ভবদেব ভট্ট। তিনি প্রায়শ্চিত্ত প্রকরণ, ব্যবহার তিলক, দশকর্মা পদ্ধতি ইত্যাদি গ্রন্থগুলি রচনা করেছিলেন। ভবভট্টদের অবশ্য পাল রাজপরিবারের আনুকুল্য লাভ করেনি। তিনি ছিলেন বর্মা বংশীয় নরপতি হরিবর্মার সান্ধিবিগ্রহিক।
পালযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসক ছিলেন চক্রপানি দত্ত (চক্রপানির ভাই ভানু ও ছিলেন একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক)। তিনি সম্ভবত পালনরপতি ন্যায়পালের সমসাময়িক ছিলেন। চিকিৎসা বিষয়ক তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থটি ছিল 'চিকিৎসাসংগ্রহ'। চরক ও শুশ্রুতের উপর তিনি যথাক্রমে 'আয়ুর্বেদদীপিকা' এবং 'ভানুমতী' নামক দুটি টীকাগ্রন্থও রচনা করেছিলেন। এই আয়ুর্বেদদীপিকা আবার ‘চরকতাৎপর্যদীপিকা' নামেও পরিচিত। এছাড়াও তিনি ভেষজ গাছগাছড়া এবং আকর দ্রব্যাদির তালিকা সমৃদ্ধ 'শব্দচন্দ্রিকা' এবং পথ্যাদি নিরূপন সংক্রান্ত 'দ্রব্যগুনসংগ্রহ' নামক দুটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। পাল নরপতি রামপালের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ভদ্রেশ্বরের পুত্র সুরেশ্বর বা সুরপাল ছিলেন ভেষজ গাছ-গাছড়ার চিকিৎসাগুন সম্পর্কিত গ্রন্থ 'শব্দপ্রদীপ' এর রচয়িতা। এছাড়াও চিকিৎসা সংক্রান্ত তাঁর লেখা আরও দুটি গ্রন্থ পাওয়া গেছে যাদের নাম বৃক্ষায়ুর্বেদ এবং লোহাপদ্ধতি বা লোহাসর্বস্ব।
পাল যুগে বৌদ্ধধর্মগ্রন্থ রচনার প্রবনতা অনেক বেশী করে দেখা দেয়। মহাপন্ডিত অতীশ দীপঙ্কর ছিলেন পালযুগের এক বিখ্যাত পন্ডিত। তিনি বজ্রযান বিষয়ক প্রায় ১৭৫ টি (মতান্তরে ১৬৮ টি) গ্রন্থ রচনা করেন। বৌদ্ধ সংস্কৃত সাহিত্যে জেতারি নামক দুজন লেখকের নাম পাওয়া যায়। একজন মহাজেতারি এবং অন্যজন কনিষ্ঠ জেতারি। মহাজেতারি ছিলেন বিক্রমশীল মহাবিহারের অন্যতম আচার্য। তিনিই সম্ভবত হৈতুতত্বোপদেশ, ধর্মাধর্মবিনিশ্চয়, এবং বালাবতারতর্ক নামক গ্রন্থগুলি রচনা করেছিলেন। কনিষ্ঠ জেতারি ছিলেন এগারোটি বজ্রযানী সাধনের রচয়িতা।
পাল যুগের স্থাপত্য
স্থাপত্য, ভাস্কর্য ক্ষেত্রে পাল যুগে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছিল। স্তূপ, বিহার ও মন্দির ধংসাবশেষ থেকে পাল ও সেন যুগের স্থাপত্য কলার পরিচয় পাওয়া যায়। পাল আমলে যে স্তূপগুলি নির্মিত হয়েছিল তা ছিল বেশীরভাগই 'নিবেদক স্তূপ'। এগুলি বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নির্মিত হয়েছিল। এই স্তূপগুলি ছিল নিম্নমানের। এগুলির বেশীর ভাগই ছিল ইট বা পাথরের তৈরী। তবে রাজাদের স্থাপত্য শিল্পের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত চোখে পড়ে ওদন্তপুর ও পাহাড়পুরের বিহাগুলিতে। বিশেষ করে পাহাড়পুরের সোমপুরী মহাবিহারের ভগ্নাবশেষের গঠনশৈলী আজও সকলের প্রশংসা অর্জন করে। অধ্যাপক নীহাররঞ্জন রায় পাহাড়পুরকে প্রাচীন বাংলার স্থাপত্য শিল্পের বিস্ময়কর বলে বর্ণনা করেছেন।
ভাস্কর্য
গুপ্তযুগের ভাস্কর্য নীতির একঘেয়েমি থেকে মুক্ত হয়ে পাল যুগের ভাস্কর্য শিল্প নিজ ধারায় প্রবাহিত হয়েছিল। পাহাড়পুর ছিল পাল ভাস্কর্যের প্রধান কেন্দ্র। পালযুগের প্রথম পর্বের ভাস্কর্যের নিদর্শনাদি মূলত রয়েছে পাহাড়পুর মন্দিরের ভিত্তিগাত্রের কুলুঙ্গিতে। কষ্টিপাথরের এই মূর্তিগুলির মধ্যে বেশীরভাগই কৃষ্ণের বাল্যলীলা বিষয়ক। লক্ষ্যনীয় যে, যে কৃষ্ণ তাঁরা গড়েছেন তা ব্রাহ্মন্যধর্মের শ্রীকৃষ্ণ নন, তিনি দৈনন্দিন লোকায়ত জীবনের কৃষ্ণ। অন্যান্য মূর্তি হল অবলোকিতেশ্বর, নৃত্যরতা রমনী, মিথুন নরনারী এবং সাধারন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিকৃতি। তবে এসব মূর্তিগুলিতে অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি লক্ষ্য করা যায়।
পালযুগের ভাস্কর্যশিল্পে নবজীবনের ঢেউ আসে নবম শতকের প্রারম্ভিককালে ভাস্কর্যশিল্পী ধীমান এবং তাঁর পুত্র বীতপালের হাত ধরে। ধর্মপাল ও দেবপালের সমসাময়িক ছিলেন তারা। তাদের বাসভূমি ছিল বরেন্দ্র। পণ্ডিত তারানাথ এই দুই শিল্পীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন যে, “ভাস্কর্যশিল্পে ধীমান মধ্যদেশীয় এবং বীতপাল প্রাচ্য শৈলী প্রবর্তন করেন।" এ সময়কার ধাতব ও প্রস্তর মূর্তিগুলির দেহ পেলব, কমনীয় ও ছন্দময়, মুখশ্রী প্রশস্ত এবং দৃষ্টি ভাবালু। বরিশালের লক্ষ্মনকাটির বিষ্ণুমূর্তি, দিনাজপুরের মঙ্গলবাড়ির তারামূর্তি, হুগলী জেলার বরাহমূর্তি, গোবিন্দচন্দ্রের রাজত্বকালে নির্মিত 'সূর্যমূর্তি এবং তৃতীয় গোপালের আমলে তৈরি ‘সদাশিবমূর্তি' হল উন্নত পাল ভাস্কর্যের উদাহরন।
পালবংশের সাহিত্য, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দ্বিতীয় পর্ব >>>>
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া Telegram গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
টেলিগ্রাম গ্রুপ এ যোগদান করার জন্য - Click Here
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here