গৌড়রাজ্য ও শশাঙ্ক
Set by – Manas Adhikary
গৌড়রাজ্য ও শশাঙ্ক সংক্ষিপ্তরূপ।About Shasanka.
গৌড়রাজ্য | শশাঙ্ক। বঙ্গাব্দ। শশাঙ্কের রাজধানী। শশাঙ্ক ও হর্ষবর্ধনের সংঘর্ষ। গৌড়েশ্বর। shasanka। Goureswar.
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো গৌড়রাজ্য ও শশাঙ্ক। এই পর্বে থাকছে গৌড়রাজ্য ও শশাঙ্ক সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পরবর্তী পর্বে গৌড়রাজ্য ও শশাঙ্ক সম্পর্কিত কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর আলচনা করব। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
শশাঙ্ক সম্পর্কিত অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।Shasanka MCQ.
ভারতে হুনশক্তি ধ্বংস হলেও গুপ্ত সাম্রাজ্য তার পুরানো গৌরব ফিরে পায় নি। খ্রীস্টীয় ষষ্ঠ শতকে বিশাল গুপ্ত সাম্রাজ্য ভেঙে গিয়ে কতগুলি ছোট ছোট স্বাধীন রাজ্যের উদ্ভব হয়। ঐ রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল পুষ্যভুতি বংশের অধীন থানেশ্বর রাজ্য, মৌখরী বংশের অধীন কনৌজ রাজ্য ও বাংলাদেশের গৌড় রাজ্য, এবং মালব রাজ্য। বঙ্গে শশাঙ্কের রাজত্বের পূর্বে আরো কয়েকজন শাসনকর্তার নাম পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন- মহারাজাধিরাজ গোপচন্দ্র, মহারাজাধিরাজ ধর্মাদিত্য, মহারাজাধিরাজ সমাচারদেব, পৃত্থুবীর ও সুধন্যাদিত্য, মহারাজাধিরাজ জয়নাগ।
গোপচন্দ্র
অনুমান করা হয় যে, মহারাজাধিরাজ গোপচন্দ্র ৫২৫ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব ও দক্ষিন বাংলায় এক স্বাধীন গৌড়রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি গুপ্তসমাট বৈন্যগুপ্তের সমকালীন ছিলেন। তিনি ৩৩ বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর রাজত্বের প্রথম বর্ষে উৎকীর্ন ওড়িশার বালেশ্বরে সম্প্রদত্ত জয়রামপুর তাম্রশাসন এবং তাঁর রাজত্বের আঠারো বা উনিশতম বর্ষে উৎকীর্ন ফরিদপুর জেলার কোটালিপাড়া গ্রামের তাম্রশাসন থেকে তার রাজত্বের কথা জানা যায়। বিভিন্ন ঐতিহাসিক গোপচন্দ্রের রাজ্যটিকে গৌড় বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ধর্মাদিত্য
গোপচন্দ্রের রাজত্বের অনতিকাল পর ধর্মাদিত্য পূর্ব ও দক্ষিন বঙ্গে রাজপদে অভিষিক্ত হন। তাঁর একখানি ফরিদপুর তাম্রশাসনে তাঁর রাজত্বের তৃতীয় বর্ষের কথা উল্লেখ আছে।
সমাচারদেব
মহারাজ ধর্মাদিত্যের পর তাঁর রাজ্যে পরবর্তী মহারাজ হন মহারাজাধিরাজ সমাচারদেব। তাঁর ঘুঘরাহাটি তাম্রশাসন থেকে জানা যায় যে, তিনি প্রায় ১৪ বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর রাজত্বের ৭ম বর্ষে উৎকীর্ণ ফরিদপুর জেলার কুরপাল গ্রামে আর একখানি তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয়েছে। নালন্দায় তাঁর এখখানি সিলমোহর পাওয়া গিয়েছে। তিনি স্বর্নমুদ্রারও প্রচলন ঘটান।
পৃত্থুবীর ও সুধন্যাদিত্য
গুপ্ত মুদ্রার অনুকরনে নির্মিত বহুসংখ্যক স্বর্নমুদ্রা ঢাকা জেলার সাভার, ফরিদপুরের কোটালিপাড়া পূর্ববাংলার বিভিন্নস্থানে আবিষ্কৃত হয়েছে। বেশীরভাগ মুদ্রাতেই রাজার নাম অস্পষ্ট ও অপাঠ্য, তাদের মধ্যে কেবলমাত্র দুজন রাজার নাম জানা যায় এঁরা হলেন পৃত্থুবীর ও সুধন্যাদিত্য। তাঁরা সম্ভবত সমাচারদেবের পর পূর্ব বাংলায় রাজত্ব করতেন।
মহারাজাধিরাজ জয়নাগ
জয়নাগ সম্ভবত শশাঙ্কের মৃত্যুর পর রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে (মাৎস্যন্যায়) কর্নসুবর্ণে স্বল্পকালের জন্য স্বাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। এর একখানি তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয়েছে। তিনি 'পরমভাগবত', মহারাজাধিরাজ, এবং প্রকান্ডযশা অভিধা গ্রহন করেছিলেন। তাঁর অধিনস্থ রাজপুরুষ নারায়নভদ্র ঔদুম্বরিক বিষয়ের শাসনকর্তা ছিলেন। এই বিষয়টি বীরভূম-মুর্শিদাবাদ অঞ্চলে অবস্থিত ছিল। জয়নাগ পশ্চিমবাংলার রাজা ছিলেন, কর্নসুবর্ন ছিল তাঁর রাজধানী। জয়নাগ যে বৈষ্ণব ছিলেন তা তাঁর মুদ্রায় লক্ষ্মীদেবীর প্রতিকৃতি থেকে এবং লেখে উল্লেখিত পরভাগবত উপাধি থেকে ধারনা করা হয়।
গৌড়রাজ শশাঙ্ক
কলচুরী আক্রমনের ফলে পরবর্তী গুপ্তবংশীয় রাজা মহাসেনগুপ্ত দুর্বল হয়ে পড়লে, গৌড়দেশের উপর তার অধিকার আলগা হয়ে যায়। এই সুযোগে গৌড় দেশের মহাসামন্ত শশাঙ্ক ক্ষমতা বাড়ান। ৬০৬ খ্রীষ্টাব্দের পূর্বেই তিনি স্বাধীন রাজা হিসাবে ক্ষমতা গ্রহন করেন। কর্নসুবর্ন বা কানসোভানা ছিল তার রাজধানী (বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের ছ-মাইল দক্ষিন- পশ্চিমে রাঙামাটি নামক স্থানে কর্নসুবর্ন অবস্থিত ছিল।) সিংহাসনে বসেই তিনি বঙ্গাব্দ প্রচলন করেন। শশাঙ্ক শিবের উপাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম সার্বভৌম নরপতি। তিনি ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি বাংলা ও বাংলার বাইরে রাজ্যসীমা বিস্তার করেন। তাঁর রাজ্যসীমা বাংলার মেদিনীপুরের দাঁতন পার হয়ে উড়িষ্যায় বিস্তৃত হয়। উড়িষ্যার চিল্কা হ্রদ বা গঞ্জাম জেলা পর্যন্ত তার অধিকার বিস্তৃত ছিল। এইসব স্থানে প্রাপ্ত গঞ্জাম শিলালিপিতে তার নাম পাওয়া যায়। পশ্চিমে মগধ আগেই তাঁর অধিকারে ছিল। শশাঙ্কের শক্তি বাড়ার ফলে কনৌজের মৌখরী রাজবংশের সহিত তার প্রতিদ্বন্বিতা আরম্ভ হয়। মৌখরীরাজ গ্রহবর্মা নিজ শক্তি বাড়াবার জন্য থানেশ্বরের রাজা প্রভাকর বর্ধনের কন্যা রাজশ্রীকে বিবাহ করেন। এরফলে কনৌজ থানেশ্বর জোট গড়ে ওঠে। শশাঙ্ক বুঝতে পারেন যে, তাঁর বিরোধী জোট শক্তিশালী হয়েছে। এদিকে মালবের গুপ্ত রাজবংশের সাথে মৌখরী বংশের ঘোর শত্রুতা ছিল। সুতরাং পাল্টা জোট গড়ার জন্য মালবের দেবগুপ্তের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন। এইভাবে উত্তর দুই পরস্পরবিরোধী জোট গড়ে ওঠে। এই সময় থানেশ্বর রাজ প্রভাকরবর্ধনের হঠাৎ মৃত্যু হলে সুযোগ বুঝে শশাঙ্ক ও দেবগুপ্ত একযোগে কনৌজ আক্রমন করেন। যুদ্ধে প্রভাকরবর্ধনের জামাতা এবং মৌখরীরাজ গ্রহবর্মা পরাজিত ও নিহত হয়। রাজ্যশ্রী বন্দিনী হয়। ফলে থানেশ্বরের সঙ্গে গৌড় ও মালবের যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। প্রভাকরবর্ধনের মৃত্যুর পর তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র রাজ্যবর্ধন থানেশ্বরের সিংহাসনে বসেই বন্দিনী ভগ্নীকে উদ্ধারের জন্য কনৌজ অভিমুখে অগ্রসর হন।
কিন্তু যুদ্ধে দেবগুপ্তকে পরাজিত নিহত করলেও রাজ্যবর্ধন শশাঙ্কের হাতে নিহত হন। বাণভট্টের মতে, শশাঙ্ক বিশ্বাসঘাতকতা করে রাজ্যবর্ধনকে
হত্যা করেন। আধুনিক ঐতিহাসিকরা বলেন যে, শশাঙ্কের বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে বিতর্ক আছে।রাজ্যবর্ধনের
মৃত্যু হলে তাঁর কনিষ্ঠভ্রাতা হর্ষবর্ধন থানেশ্বরের সিংহাসনে বোশে ভগিনী রাজ্যশ্রীকে
উদ্ধার করার জন্য এবং শশাঙ্ককে শাস্তিদানের জন্য যুদ্ধযাত্রা করেন। এই সময় শশাঙ্কের শত্রু কামরূপের রাজা ভাস্করবার্মা হর্ষবর্ধনের সঙ্গে জোট গড়েন। পথিমধ্যে হর্ষবর্ধন সংবাদ পান যে, রাজ্যশ্রী মুক্ত হয়ে বিন্ধ্যপর্বত অঞ্চলে চলে গেছেন। হর্ষ সেখান থেকে রাজ্যশ্রীকে উদ্ধার করেন। ইতিমধ্যে শশাঙ্ক কনৌজ পরিত্যাগ করে স্বরাজ্যে ফিরে যান। হর্ষবর্ধন কনৌজ অধিকার করেন। ভাস্করবার্মার একটি শিলালিপি থেকে মনে করা হয় যে, হর্ষ ও ভাস্করবর্মার সম্মিলিত আক্রমনে শশাঙ্ক সাময়িকভাবে পরাস্ত হন। তবে শশাঙ্কের জীবিতকালে তাঁর রাজ্যসীমা অক্ষুন্ন ছিল। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর তার পুত্র মানদেবকে পরাজিত করে হর্ষবর্ধন গৌড় রাজ্য দখল করেন।
হিউয়েন-সাং এর মতে শশাঙ্ক ছিলেন বৌদ্ধবিদ্বেষী। তিনি বৌদ্ধগয়ায় পবিত্র বোধিবৃক্ষ ছেদন করেন এবং এই বৃক্ষের শিকড় উপড়ে ফেলেন। তিনি পাটলিপুত্রের বুদ্ধের পদচিহ্ন পাথরের উপর থেকে তুলে ফেলেন। আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্পে তার গোঁড়ামির কথা উল্লেখ আছে। শশাঙ্ক ছিলেন দুঃসাহসিক সাম্রাজ্যবাদী। তিনি ছিলেন পাল সাম্রাজ্যবাদের পথপ্রদর্শক। তিনি কৃষির উন্নতির জন্য জলসেচ ব্যবস্থার দিকে নজর দেন। মেদিনীপুরের দন্ডভুক্তি বা দাঁতন অঞ্চলে শশাঙ্কের দীঘি ‘শরশাঙ্কের সাগর’ তার প্রমান।
গৌড়রাজ্য ও শশাঙ্ক দ্বিতীয় পর্ব >>>>
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here
গৌড়রাজ্য | শশাঙ্ক। বঙ্গাব্দ। শশাঙ্কের রাজধানী। শশাঙ্ক
ও হর্ষবর্ধনের সংঘর্ষ। গৌড়েশ্বর। shasanka। Goureswar.