সম্রাট আকবর -এর জীবনী
Set by- Manas Adhikary
সম্রাট আকবর -এর জীবনী| Akbar 200 Mcq Questions and Answar
Table of Content(toc)
সম্রাট আকবর -এর জীবনী| akbar biography| akbar born place| akbar ka date of birth| Mughal emperor akbar
নমস্কার : অভিনব একাডেমীতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো-মােগল সাম্র্জয এর অন্যতম সম্রাট ‘আকবর’। এই পর্বে আমরা জানবো একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ন টপিক ‘আকবর’ এর জীবনি । আমি আমার সাধ্যমতাে চেষ্টা করেছি এই পােষ্টে আকবর এর সমস্ত দিকগুলি তুলে ধরার। এছাড়া এই পেজের শেষের দিকে একটি লিংক দিয়ে দিলাম যেখান থেকে আপনারা পেয়ে যাবেন আকবর সম্পৰ্কিত ২০০টি প্রশ্নোত্তর। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া Telegram গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
টেলিগ্রাম গ্রুপ এ যোগদান করার জন্য - Click Here
সম্রাট আকবর -এর জন্ম ও বংশপরিচয়:
মােগল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট ছিলেন মহামতি আকবর। ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে মােগল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর, তাঁর জেষ্ঠপুত্র আকবর সিংহাসনে বসেন। আকবর ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ অক্টোবর মাসে অমরকোটে জন্মগ্রহন করেন। ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ুন শেরশাহের কাছে পরাজয়ের পর আশ্রয় নেওয়ার জন্য নানা স্থান ঘুরে অমরকোটে এলে, সেখানে আকবরের জন্ম হয়৷ কথিত আছে, পারস্যের পথে হুমায়ুন পলায়নের সময় জানতে পারেন যে, তাঁর ভাই আশকরী পথে আক্রমন করতে পারেন। তাই তিনি আকবর এবং তাঁর মা হামিদা বানুকে অমরকোটে রেখে একাই পারস্যের পথে চলে যান। কিন্তু আশকরী এঁদের সন্ধান পাওয়ার পর সযত্নে আশ্রয় দেন৷ ১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ুন কান্দাহার ও কাবুল দখল করার পর, তিনি পরিবার পরিজনকে উদ্ধার করেন।
রাজ্য বিস্তার
১৫৫১ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ুনের অপর ভাই হিন্দোলের মৃত্যুর পর, আকবরকে আনুষ্ঠানিকভাবে গজনীর শাসনকর্তা করা হয়৷ ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ুনের মৃত্যুর পর আকবর সিংহাসনে বসেন৷ এই সময় আকবরের অভিভাবক হিসাবে বৈরাম খাঁকে নিযুক্ত করা হয়। আকবর যখন সিংহাসনে বসেন তখন তিনি নাবালক ছিলেন। আকবরকে দিল্লীর সিংহাসন থেকে অপসারিত করার জন্য, মহম্মদ শাহ আদিলের সেনাপতি হিমু বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে আগ্রা অভিমুখে যাত্রা করেন এবং আগ্রা দখল করেন। এরপর তিনি দিল্লী দখলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে, দিল্লীর শাসনকর্তা তার্দিবেগ তাঁকে বাধা দেন। কিন্তু তিনি পরাজিত হয়ে পলায়ন করেন। ফলে দিল্লী হিমুর অধিকারে আসে। তিনি ‘বিক্রমাদিত্য’ নাম ধারন করে নিজেকে সম্রাট বলে ঘােষনা করেন। ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে হিমুকে শায়েস্তা করার জন্য বৈরাম খাঁ দিল্লীর পথে অগ্রসর হন এবং পানিপথের প্রান্তরে উহারা যুদ্ধে লিপ্ত হন। ইতিহাসে এই যুদ্ধ ‘পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ’ নামে পরিচিত (প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে পানিপথের প্রথম যুদ্ধ হয় বাবর ও ইব্রাহিম লােদীর মধ্যে)। এই যুদ্ধে হিমুর হস্তিবাহিনী বৈরাম খাঁ এর বাহিনীকে প্রায় তছনছ করে ফেলেন। মােগল বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়৷
এইসময় হিমু চোখে তীরবিদ্ধ হয়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে নেতৃত্বের অভাবে হিমুর বাহিনী অসহায় হয়ে পড়ে। সুযােগ বুঝে বৈরাম খাঁ আক্রমন করে হিমুকে বন্দী করেন এবং ২৫০০ হাতিসহ বিপুল পরিমান যুদ্ধোপকরন অধিকার করেন। এরপর বৈরাম খাঁ হিমুকে হত্যা করে দিল্লীর রাজপথে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে রাখেন। শেরশাহের বংশধরদের মধ্যে একজন শাসক আহমদ শাহ সুরী, পাঞ্জাবে সিকান্দার শাহ নাম নিয়ে রাজত্ব করতেন। পানিপথের যুদ্ধের আগেই উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের দিকে সিকান্দার সুরের বিরুদ্ধে বৈরাম খাঁ সেনাবাহিনী পাঠান। সে সময় সিকান্দার শাহ পালিয়ে গিয়ে শিবালিক পর্বতে আশ্রয় গ্রহন করেন। পানিপথের যুদ্ধে জয়লাভের পর, বৈরাম খান পুনরায় তাঁর বিরুদ্ধে সেনাবহিনী পাঠান। এইসময় সিকান্দার শাহ বশ্যতা স্বীকার করে একটি জায়গীর লাভ করেন। শত্রুদের প্ররােচনায় ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে আকবর বৈরাম খাঁ কে পদচ্যুত করেন এবং বৈরাম খাঁ কে মক্কা যাওয়ার সুযােগ করে দেন। কিন্তু পথিমধ্যে জনৈক আফগান সর্দার তাঁকে হত্যা করেন। আকবর সিংহাসনে আরােহনের প্রথম চার বছরের মধ্যেই বৈরাম খাঁ এর অভিভাবকত্বে গােয়ালিওর, আজমীঢ় ও জৌনপুর দখল করেন। তবে বৈরাম খাঁ কে অবসর দান করেও আকবর কিন্ত স্বহস্তে শাসনভার গ্রহন করতে সক্ষম হননি৷ আরও দুবছর রাজ্যের প্রকৃত ক্ষমতা পরিচালনা করেন তাঁর ধাইমা মাহাম আনগা, তাঁর ছেলে আদম খাঁ ও তাঁদের অন্যান্য আত্মীয় পরিজন।
১৫৬১ খ্রিস্টাব্দে আফগান সর্দার রাজবাহাদুরকে দমন করার জন্য আকবর আদম খাঁকে পাঠান। আদম খাআ, বাজবাহাদুরকে পরাজিত করে, আকবরকে অবজ্ঞা করতে শুরু করেন। ফলে আকবর নিজেই আদম খাঁর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তাঁকে দমন করেন। এরপর তিনি পীর মহম্মদ শেরওয়ানীকে মালবের শাসনকর্তা হিসাবে নিয়ােগ করেন। কিন্তু পীর মহম্মদ প্রশাসক হিসবে অত্যন্ত দুর্বল ছিলেন। তাই তাঁকে অচিরেই পরাজিত করে বাজবাহাদুর মালব দখল করেন। অবশেষে অন্তঃপুরের ঐ সব প্রভাব কাটিয়ে আকবর নিজ হাতে শাসনভার গ্রহন করেন ১৫৬২ সালে৷ সিংহাসনে বসেই তিনি ভারতে আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে যে রাজপুতদের সহযােগীতা দরকার এই বিবেচনায় তিনি রাজপুতদের সাথে আত্মীয়তা স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ১৫৬২ খ্রিস্টাব্দে জয়পুরের রাজপুত নৃপতি বিহারীমলের কন্যাকে বিবাহ করেন। ঐ বছরেই আকবর আইন করে হিন্দু যুদ্ধ বন্ধীদের ক্রীতদাস বানানাের আইন বন্ধ করেন।
১৫৬৩ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুদের উপর থেকে তীৰ্থকর তুলে নেন। ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে আকবর মধ্যপ্রদেশের গন্ডােয়ানা রাজ্য দখলের জন্য আসফ খাঁ কে পাঠান। এই সময় গন্ডােয়ানার রাজমাতা দূর্গাবতী ছিলেন একজন বীরাঙ্গনা রমনী। নাবালক পুত্র বীরনারায়নের অভিভাবিকা হিসাবে তিনিই রাজ্য শাসন করছিলেন। মুঘল আক্রমন প্রতিহত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেও পরাজয় অনিবার্য জেনে রানী দুর্গাবতী শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করেন। এই বৎসরেই মালবের বিদ্রোহী শাসনকর্তা আব্দুল্লাহ খাঁ উজবেককে দমন করার জন্য আকবর মালব অভিযানে বের হন। পথে খান্দেশ রাজ্যের শাসক মীরন মুবারকের সাথে তাঁর সরাসরি যােগাযােগ হয়। তিনি মীরন মুবারকের কন্যাকে বিবাহ করেন। এই বৎসর (১৫৬৪খ্রিস্টাব্দে) তিনি হিন্দুদের থেকে জিজিয়া কর তুলে নেন। ১৫৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মেবারের রাজধানী চিতাের আক্রমন করেন। মেবারের রানা উদয় সিংহ আকবরকে ঘৃনার চোখে দেখতেন এবং তিনি মালবের রাজা বাহাদুরকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তাছাড়া গুজরাটে আক্রমন পরিচালনার জন্য চিতাের দখল করাটা জরুরি ছিল৷ আক্রমনের শুরুতেই উদয় সিংহ পালিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে আশ্রয় নেন। কিন্তু জয়মল ও পত্ত নামক দুইজন সেনাপতি প্রায় চার মাস ব্যাপী মােগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এই যুদ্ধে সেনাপতিদ্বয় নিহত হলে, দুর্গের ভিতরের রমনীরা অগ্নিকুন্ডে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করেন।
১৫৬৮ খ্রীষ্টাব্দে চিতাের আকবরের দখলে আসে৷ আসফ খাঁকে মেবারের শাসনকর্তারূপে নিযুক্ত করা হয়৷ ১৫৬৯ খ্রীষ্টাব্দে আকবর রনথােম্বর রাজ্য আক্রমন করেন। যুদ্ধে রাজপুত রাজা সারজনহারা পরাজিত হয়ে সন্ধি প্রার্থনা করেন এবং তাঁর দুই পুত্র ভােজ ও দুদাকে মােগল দরবারে পাঠান। সারজনহারাকে পরে বারানসী ও চুনারের জায়গির করা হয়। আকবর এরপর কালিঞ্জর আক্রমন করলে কালিঞ্জরের রাজা বিনাবাধায় আত্মসমর্পন করেন এবং পরে আকবর তাঁকে এলাবাদের কাছে জায়গীরদার হিসাবে নিযুক্ত করেন। কালিঞ্জরের শাসনভার তুলে দেওয়া হয় সেনাপতি মাজনুর খাঁর হাতে। ১৫৭০ খ্রীষ্টাব্দে আকবর বিকানীর রাজকন্যাকে বিবাহ করে গুজরাটের দিকে নজর দেন। সে সময় গুজরাটের সুলতান ছিলেন তৃতীয় মুজফফর খাঁ। আকবরের বিদ্রোহী আত্মীয় সজন তখন গুজরাটে আশ্রয় নিয়েছিল। তাঁরা নানাভাবে গুজরাটে অশান্তি সৃষ্টি করছিল৷ গুজরাটের শান্তির জন্য মুজফফর খাঁর মন্ত্রী ইমদাদ খাঁ আকবরের সাহায্য কামনা করেন। ১৫৭২ খ্রীষ্টাব্দে আকবর এই আবেদনে সাড়া দিয়ে গুজরাট আক্রমন করেন। যুদ্ধে মুজফফর খাঁ পরাজিত হয়ে আত্মগােপন করেন। ১৬ ই নভেম্বর মুজফফর খাঁ বন্দী হন। এবং ১৭ ই নভেম্বর ইমদাদ খাঁ আকবরের হাতে নগরের আকবর ইমদাদ খাঁর হাতে গুজরাটের একটি অংশের শাসনভার তুলে দেন এবং অপর অংশের শাসনভার তুলে দেন মীর্জা আজিজ কোকার হাতে৷ এরপর আকবর কাম্বে গমন করেন। সেখানে তুর্কি, সিরিয়া, ইরানি ও পতুগীজ বনিকরা তাঁর সাথে দেখা করেন। সেখানে বনিকদের সবরকম সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি সুরাট যান। সেখানে হুমায়ূনের এক বিশ্বস্ত অনুচর হামজাবান স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতেন। আকবর ১৫৭৩ খ্রীষ্টাব্দে সুরাট অবরােধ করেন। হামজাবান আকবরকে বাধা দেওয়ার জন্য পতুগীজদের কাছ থেক কামান সংগ্রহ করেন। আকবরের তীব্র আক্রমনে হামজাবান এবং পতুগীজ গােলন্দাজ বাহিনী পরাজিত হয়। হামজাবান বন্দী হন। অন্যদিকে পতুগীজরা প্রচুর উপটৌকন নিয়ে আকবরের কাছে আত্মসমর্পন করেন। আকবর তাঁদের ক্ষমা করে দেন। কারন ভারতের পশ্চিম উপকূলে পতুগীজদের আধিপত্য ছিল। পতুগীজরা ভারত থেকে যে সকল মুসলমান হজ করার জন্য মক্কায় যেতেন তাঁদের উপর অত্যাচার করত৷ আকবর চুক্তির দ্বারা তাঁদের চলাচলে পতুগীজরা যাতে বিঘ্ন না ঘটায় তা অঙ্গীকার গ্রহন করেন। এরপর কুলিজ খাঁকে সুরাট দূর্গের অধিপতি করেন। খান-ই-আজম কে গুজরাটের শাসনকর্তা হিসাবে নিয়ােগ করেন এবং মুজফফর খাঁকে মালবের শাসনকর্তা নিয়ােগ করেন। ১৫৭৩ খ্রীষ্টাব্দের জুন মাসে আকবর ফতেপুর সিক্রিতে চলে আসেন। ১৫৭৪ খ্রীষ্টাব্দে আকবর ভাকার দূর্গ দখল করেন। এর মাধ্যমে তিনি সিন্ধুর বিশাল অংশ দখলে আনতে সক্ষম হন।
মেবারের রানা উদয় সিংহের মৃত্যুর পর (১৫৭২ খ্রীষ্টাব্দ), তাঁর পুত্র রানা প্রতাপ সিংহ পুনরায় মােগলদের বিরুদ্ধে আক্রমনের প্রস্তুতি নেন। আকবর মানসিংহ এবং আসফ খাঁর অধিনে একটি বিশাল সেনাবাহিনী প্রেরন করেন। ১৫৭৬ খ্রীষ্টব্দে হলদিঘাটে উভয় বাহিনী মুখােমুখি হয়৷ এই যুদ্ধে প্রতাপ সিংহ পরাজিত হয়ে পার্বত্য অঞ্চলে আত্মগােপন করেন। মােগল শাসনাধীনে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশে কররানী রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয় ১৫৬৪ খ্রীষ্টাব্দে।
এই রাজবংশের সুলতান সুলেমান আকবরের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিয়েছিলেন। ফলে বাংলা তখন মােগলদের করদ রাজ্য ছিল। সুলেমানের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দাউদ বাংলার স্বাধীন সুলতান হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। আকবর দাউদকে দমন করার জন্য, সেনাপতি টোডারমল এবং মনিম খাঁ কে পাঠান। এদের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ হয় ১৫৭৫ খ্রীষ্টাব্দের তুকারই সমরক্ষেত্রে৷ এই যুদ্ধে উভয় বাহিনীই চূড়ান্ত জয়লাভে ব্যর্থ হন। ১৫৭৬ খ্রীস্টাব্দে রাজমহলে দ্বিতীয়বার যুদ্ধ হয়৷ এই যুদ্ধে দাউদ পরাজিত ও নিহত হন। এরপর বাংলাতে মােগল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এইসময় বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে তখনও আফগান শাসকরাই স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতেন৷ মুনিম খাঁ এর মৃত্যুর পর মােগল শিবিরে ভাঙন ধরে। এই সময় অনেকেই মােগল শিবির ত্যাগ করে দিল্লীতে চলে যান। এই অবসরে মীর্জা হাকিম নিজেকে স্বাধীন সুলতান হিসাবে ঘােষনা করে দেন। ক্রমে ক্রমে বাংলা ও বিহার মােগল সাম্রাজ্য থেকে বিচ্যুত হয়৷ আকবর মীর্জা ও অন্যন্য বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য টোডরমল ও মানসিংহকে পাঠান। মূল দমনের কাজটি করেন টোডরমল এবং সাম্ভাব্য পাল্টা আক্রমন ঠেকানাের কাজটি করেন মানসিংহ৷ উভয়ের প্রচেষ্টায় বাংলা আবার মােঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়৷ ১৫৭৬ খ্রীষ্টাব্দে আকবর খান্দেশ রাজ্য আক্রমন করেন। সে সময় খান্দেশের শাসক ছিলেন রাজা আলি খাঁ৷ মােগল বাহিনী কতৃক অবরুদ্ধ হয়ে, তিনি।
প্রচুর অর্থ প্রদান করে মােগলদের বশ্যতা স্বীকার করেন এবং খাদেশ মােগলদের করদ রাজ্যে পরিনত হয়৷ এরপর আকবর কাবুলের দিকে নজর দেন। ১৫৮১ খ্রীস্টাব্দে তিনি কাবুলে সামরিক অভিযান চালান এবং বিনা বাধায় কাবুল দখল করেন। কিন্তু মীর্জা হাকিমের আকবরের অধিনতা অস্বীকার করলে, আকবর মীর্জা হাকিমের বােনের হাতে কাবুলের শাসনভার দিয়ে দিল্লীতে ফিরে আসেন। এরপর তিনি দীর্ঘদিনের চিন্তা প্রসূত ‘দীন-ই-ইলাহি’ নামে একটি ধর্মমত প্রচারের উদ্যোগ নেন। ১৫৮৪ খ্রীষ্টাব্দে বিহারীমলের পুত্র ভগবান দাসের কন্যার সাথে আপন পুত্র জাহাঙ্গীরের বিবাহ দেন। এইসময় মােগলদের উজবেক নেতা আব্দুল্লাহ খাঁ মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের উদ্যোগ নেন।
১৫৮৪ খ্রীষ্টাব্দে আব্দুল্লাহ খাঁ তৈমুর বংশীয়দের শাসনাধীন বাদাকশান দখল করেন। এই সময় ঐ অঞ্চলের শাসক মীর্জা হাকিম আকবরের সাহায্য প্রার্থনা করেন। আকবর এঁদের সাহায্য করার জন্য সিন্ধুনদের উপকুলে পৌঁছান। এই সময় মীর্জা হাকিম মৃত্যুবরন করেন। ফলে কাবুল ও বেলুচিস্তানে মােগল আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এরই ভিতর ১৫৮৫ খ্রিষ্টাব্দে আহম্মদ নগরের মীর মুর্তজা এবং অন্যান্য অভিজাত ব্যাক্তিবর্গ প্রধানমন্ত্রী সালাবৎ খাঁর বিরুদ্ধে মােগল দরবারে আর্জি পেশ করে আক্রমন করার অনুরােধ করেন। আকবর মালবের শাসনকর্তা খান-ই-আজম কে পরাজিত করে আহম্মদ নগর দখল করে, সেখানে বিদ্রোহী নেতাদের প্রতিষ্ঠিত করার আদেশ দেন। খাদেশের শাসক রাজা আলিবর্দী খাঁ মােগলদের অনুকূলে থাকলেও, আহম্মদনগর আক্রমনের ক্ষেত্রে তিনি মােগলদের বিরােধিতা করেন। এই কারনে তাঁর রাজ্যের ভিতর দিয়ে মােগল সৈন্যদের চলাচলে বাধা দেন। ফলে ১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দে মােগল সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়। ১৫৮৮ খ্রিষ্টাব্দে আহম্মদনগরের শাসক মুর্তজা নিজাম শাহের বিরুদ্ধে কয়েকজন অভিজাত বিদ্রোহীদের হয়ে নিজাম শাহকে সিংহাসনচ্যুত করে। নিজাম শাহের ভাই বারহান উদ্দিনকে সিংহাসনে বসানাের ষড়যন্ত্র করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায়৷ বারহান উদ্দিন পালিয়ে মােগল দরবারে আশ্রয় নেন৷ আকবর তার প্রতি সদয় ব্যবহার করেন। এরপর আকবর বারহান উদ্দিনকে অধিনায়ক করে একটি বিশাল সেনাবাহিনী পাঠান। একই সাথে তিনি মালবের শাসনকর্তা খান ই আজম এবং খান্দেশের রাজা আলি খাঁকে নির্দেশ দেন বারহান উদ্দিনকে সাহায্য করার জন্য। শেষ পর্যন্ত বারহান উদ্দিন আহম্মদনগর দখল করেন। পরে তিনি মােগলদের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে নিজেকে স্বাধীন সুলতান হিসেবে ঘােষনা করেন।
১৫৯০ খ্রিষ্টাব্দে আকবর, মুলতানের শাসনকর্তা আব্দুর রহমান কে নিম সিন্ধু এলাকা থাট্টা দখল করার জন্য প্রেরন করেন। সেইসময় থাট্টার অধিপতি ছিলেন মির্জা জানিবেগ। এই মির্জা জানিবেগ আত্মসমর্পন করলে, সম্পূর্ন সিন্ধু অঞ্চল মােগল অধিকারে আসে। ১৫৯১ খ্রিষ্টাব্দে আকবর খান্দেশ, আহম্মদনগর, গােলকুন্ডা এবং বিজাপুরের শাসকদের কাছে কর দাবি করেন। প্রথমে খান্দেশের সুলতান রাজা আলী আকবরের এই দাবি মেনে নেন। কিন্তু অন্য তিন সুলতান তা অস্বীকার করেন। আকবর তৎক্ষনাৎ দক্ষিনের ঐ তিন সুলতানের বিরুদ্ধে কোনাে ব্যবস্থা না নিয়ে বেলুচিস্তানের দিকে নজর দেন। তিনি বেলুচিস্থানের আফগান শাসকরা আকবরের বশ্যতা স্বীকার করতে রাজি না হলে, ১৫৯৫ খ্রিষ্টাব্দে আকবরের আদেশে মীর মাসুম বেলুচিস্তানের সিরি দূর্গ আক্রমন করে দখল করে নেন। এর দ্বারা সমগ্র বেলুচিস্তান মােগলদের অধিকারে আসে। এই সময় কান্দাহারের শাসনকর্তা ছিলেন পারস্যে হুসেন মীর্জা। তাঁর সাথে পারস্যের সম্রাটের সুসম্পর্ক বজায় ছিল না। এই সুযােগে আকবর কান্দাহার আক্রমন করে কান্দাহার দূর্গ দখল করেন। এই জয়ের ফলে কান্দাহার মােগলদের অধিকারে আসে৷
১৫৯৫খ্রিষ্টাব্দে আহম্মদনগরের শাসক বারহান উদ্দিনের মৃত্যুর পর সেখানকার সিংহাসনের দখল নিয়ে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। বারহান উদ্দিনের পুত্র বাহাদুর সুলতান হওয়ার কথা। বিজাপুরের সুলতান দ্বিতীয় ইব্রাহিম আদিল শাহ, বাহাদুরের পক্ষে ছিলেন। এই সুত্রে বিজাপুরের ভুতপূর্ব সুলতানের বিধবা পত্নী এবং বারহান উদ্দিনের ভগ্নী চাঁদবিবি তিনি ইব্রাহিম আদিল সাহের নাবালক কালে, প্রায় দশ বছর তিনি অভিভাবিকা হিসেবে রাজত্ব করেন। তিনি আহম্মদনগরে এসে ভ্রাতুষ্পত্র বাহাদুরের পক্ষ অবলম্বন করেন। এই অবস্থায় আহম্মদনগরের বিরােধীপক্ষ মােগলদের সাহায্য প্রার্থনা করেন। এই সুযােগে আকবর গুজরাটের শাসনকর্তা যুরাজ মুরাদ ও সেনাপতি আব্দুর রহিম খানের নেতৃত্বে সৈন্য পাঠান। মােগল বাহিনী আহম্মদনগর দূর্গ অবরােধ করে। বহুসময় অবরােধ করে থাকার পরও মােগল বাহিনী এই দূর্গের পতন ঘটাতে ব্যর্থ হয়। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে মিমাংসা হয়৷
এই মিমাংসাতে বাহাদুরকে আহম্মদ নগরের রাজা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং বেরার অঞ্চল মােগলদের কাছে হস্তান্তর করা হয়৷ বেরার মােগলদের হস্তগত হওয়ায়, দক্ষিনের অন্যান্য সুলতানরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। ফলে বিজাপুর, গােলকুন্ডা এবং আহম্মদনগর সম্মিলিতভাবে মােগলদের আক্রমন করার উদ্যোগ নেয়৷ ১৫৯৭ খ্রিষ্টাব্দে সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে মােগলদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে সম্মিলিত বাহিনী পরাজিত হলে বিজাপুর এবং গােলকুন্ডার বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করে, কেবল মাত্র চাঁদবিবি একা মােগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকে। অবশেষে চাঁদবিবি মােগলদের সাথে আলােচনা করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু আহম্মদনগরের অভিজাতরা চাঁদবিবিকে বিশ্বাসঘাতক নামে অভিহিত করে, তাঁকে হত্যা করেন। এই সময় মােগল শিবিরে অভ্যন্তরীন গােলমালের কারনে, আহম্মদনগর থেকে মােগল বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়৷ ফলে আহম্মদনগরের সৈন্যরা আবার রাজ্যের অধিকার গ্রহন করে। ১৫৯৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতাপ সিংহ মত্যুবরন করেন। এরপর তাঁর পুত্র অমর সিংহ মােগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষনা করেন।
১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দে আকবর অমর সিংহের বিরুদ্ধে মানসিংহ এবং যুবরাজ সেলিমকে পাঠান। অমর সিংহ পরাজিত হয়ে আত্মগােপন করেন। এমন সময় বাংলাদেশে উসমান বিদ্রোহ করেন। ফলে। উসমানকে দমন করার জন্য আকবর মানসিংহকে বাংলাদেশে প্রেরন করেন। আহম্মদনগরের ঘটনায় আকবর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাই অমর সিংহকে পরাজিত করতে তিনি নিজেই ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দে আহম্মদনগর আক্রমন করেন।আক্রমনের শুরুতেই মােগলরা দৌলতাবাদ দখল করে। ১৬০০ আহম্মদনগরের একটি অংশ মােগলদের অধিকারে আসে। কিন্তু এর ভিতর খান্দেশের রাজা আলি খাঁ মৃত্যুবরন করলে, তাঁর উত্তরাধিকারী মীরন বাহাদুর শাহ স্বাধীনতা ঘােষনা করেন। এই কারনে আকবর আহম্মদনগর থেকে খান্দেশে চলে আসেন এবং আসীরগড় অবরােধ করেন। ১৬০১ খ্রিষ্টাব্দে আকবর এই দুর্গটি দখল করেন। এরপর যুবরাজ দানিয়েলের হাতে বেরার, আহম্মদনগর ও খান্দেশের শাসনভার অর্পন করে রাজধানীতে ফিরে আসেন।
সম্রাট আকবর- এর গুরুত্বপূর্ন
তথ্যসমূহ
১) জন্মগ্রহন - ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ অক্টোবর
২) জন্মস্থান - অমরকোট
৩) পিতা - হুমায়ুন
৪) মাতা - হামিদা বানু বেগম
৫) পত্নি -মরিয়ম উজ জামানি বেগম, রুকাইয়া সুলতান বেগম, সেলিমা সুলতান বেগম আরও দশজন।
৬) বংশধর - হাসান, হুসাইন, জাহাঙ্গীর, মুরাদ, দানিয়াল, আরাম বানু বেগম, শকার-উন-নিসা বেগম, শেহজাদী খানুম
৭) রাজপ্ৰতিভু - বৈরাম খাঁ
৮) সমাধি - ফতেপুর সিক্রী
আকবর সম্পৰ্কিত ২০০টি প্রশ্নোত্তর পেতে Click Here
ধন্যবাদ! ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here