ABHINABA ACADEMY
শিশুনাগ বংশ
SET BY - MANAS ADHIKARY
হর্ষঙ্ক বংশের পতন ঘটিয়ে শিশুনাগ ৪৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে (আনুমানিক ৪৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ - ৩৬৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) মগধে শিশুনাগ এই শিশুনাগ বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। শিশুনাগ বংশের শিশুনাগ ও কালাশােক বা কাকবর্ন মগধে রাজত্ব করেন৷ হর্যাঙ্ক বংশের শেষ নরপতি নাগদশক সুযােগ্য শাসক ছিলেন না। মগধের প্রজারা নাগদশকের শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষনা করে শিশুনাগকে মগধের সিংহাসনে আসীন করান। গণসমর্থন বা বাহুবল যে উপায়েই শিশুনাগ সিংহাসনে বসুক না কেন, তিনি যে একজন সুযােগ্য শাসক ছিলেন, সে সম্পর্কে কোন সন্দেহ ছিল না। সিংহলীয় ঐতিহ্য অনুসারে তিনি মােট ১৮ বছর মগধ শাসন করেছিলেন। রাজপদ গ্রহন করেই শিশুনাগ পাটলিপুত্রের পরিবর্তে রাজগৃহকে পুনরায় মগধের রাজধানী করেন। সম্ভবত পাটলিপুত্রে কোন বিধ্বংসী বন্যার তিক্ত অভিজ্ঞতা শিশুনাগকে রাজধানী পরিবর্তন করতে বাধ্য করে। শিশুনাগ বৈশালী শহরটিকে তাঁর দ্বিতীয় রাজধানীতে পরিনত করেন। রাজগৃহের গুরুত্ব ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে, এবং বৈশালীর গুরুত্ব উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পায়। শেষে বৈশালী মগধের একমাত্র রাজধানীরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়। শিশুনাগের রাজত্বকালে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ন ঘটনা হল অবন্তীর প্রদ্যোৎ বংশের গৌরব ধ্বংস। অজাতশত্নর আমল থেকে অবন্তীর সঙ্গে মগধের যে বিরােধ প্রচ্ছন্নভাবে চলে আসছিল উদয়িনের সময়েও তার অবসান ঘটেনি। অবন্তীর প্রদ্যোৎ বংশীয় শেষ দুই শাসক বিশাখ ও আর্যকের আমলে ঐ বংশের দুর্বলতা সবচেয়ে বেশী প্রকট হয়ে ওঠে। এই আর্যকের (মতান্তরে অবন্তী বর্ধন) আমলে শিশুনাগ অবন্তীকে মগধের অধিকারে আনেন। অবন্তীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে শিশুনাগ পাটলিপুত্র থেকে মগধের পূর্বতন রাজধানী গিরিব্রজে নিজ রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। অবন্তী অধিকারভুক্ত হওয়ায় দক্ষিন দিকে মগধ রাজ্য মধ্য ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। শিশুনাগের পর তাঁর পুত্র কালাশােক বা কাকবর্ন মগধে রাজত্ব করেন। মগধের এই নরপতিকে পুরানে কাকবর্ন এবং দীপবংশ ও মহাবংশে কালাশােক বলা হয়েছে। কাকবর্ন এবং কালাশােক যে একই ব্যক্তি একথা প্রায় সকল ঐতিহাসিক স্বীকার করেন। শিশুনাগের শাসনকালের প্রথমদিকে কালাশােক ছিলেন বারানসীর রাজ্যপাল। পরবর্তীকালে শিশুনাগ কাশী অঞ্চলের দায়িত্বভার কালাশােকের উপর ন্যস্ত করেন। কালাশােকের রাজত্বকালে দুটি উল্লেখযােগ্য ঘটনা ঘটে।
ক) তাঁর পৃষ্ঠপােষকতায় বৈশালীতে দ্বিতীয় বৌদ্ধ সংগীতি অনুষ্ঠিত হয়। মহাস্থবির সাবাকামি সেই সংগীতিতে পৌরহিত্য করেন।
খ) মগধের রাজধানী বৈশালী থেকে পুনরায় পাটলিপুত্রে স্থানান্তরিত করেন।
কালাশােকের শেষ জীবন সুখকর হয়নি। তাঁর মহিষী তাঁর বিরুদ্ধাচারন করেন এবং এক নাপিত এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। গ্রিক বিবরন অনুযায়ী, রানী ও নাপিতের যড়যন্ত্রে কালাশােক নিহত হন। হর্ষচরিত অনুযায়ী কালাশােক তার রাজধানীর নিকট গলায় ছুরির আঘাতে নিহত হন। পুরান শাস্ত্র অনুযায়ী, কালাশােকের মৃত্যুর পর তার দশ পুত্র পর্যায়ক্রমে মগধ শাসন করেন। তাদের মধ্যে মহানন্দিন ছিলে এই রাজবংশের শেষ শাসক। পরে নাপিত মহাপদ্মানন্দ কালাশােকের দশ পুত্র ও কালাশােককে হত্যা এই রাজবংশের বিনাশ করে নন্দ বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১) শিশুনাগ বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?
- শিশুনাগ।
২) শিশুনাগ কাকে হত্যা করে মগধের সিংহাসনে বসেন?
- হর্যবংশীয় রাজা নাগদশক
৩) হর্ষঙ্ক বংশে শিশুনাগ কোন পদে অভিষিক্ত ছিলেন?
- শিশুনাগ ছিলেন নাগদশকের আমত্য বা মন্ত্রী।
৪) শিশুনাগের পুত্রের নাম কী ?
- কালাশােক
৫) শিশুনাগের রাজত্বকালের প্রথম দিকে কালাশােক কোন পদে আসীন ছিলেন?
- বারানসীর রাজ্যপাল
৬) শিশুনাগের রাজত্বকালের শেষ দিকে কালাশােক কোথাকার দায়িত্বভার পেয়েছিলেন?
- কাশী অঞ্চলের
৭) পুরানে কোন হর্ষঙ্ক বংশের শাসক কে শিশুনাগ বলা হয়েছে?
- বিম্বিসার।
৮) কোন সম্রাট প্রায় ১০০ বছর ধরে চলা মগধ-অবন্তী দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়েছিলেন?
- শিশুনাগ
৯) শিশুনাগের রাজধানী কোথায় ছিল?
- শিশুনাগের রাজধানী প্রথমে গিরিব্রজ বা রাজগৃহ তে ছিল পরে স্থানান্তরিত করে বৈশালীতে নিয়ে যান।
১০) শিশুনাগ বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা কে ছিলেন?
- শিশুনাগ
১১) শিশুনাগ কোন কোন জেলা কে মগধের সাথে যুক্ত করেন?
- অবন্তী, বৎস এবং কোশল
১২) কোন রাজার আমলে মগধ উত্তর ভারতের সর্ববৃহৎ এবং শ্রেষ্ঠ রাজ্যে পরিনত হয়?
– শিশুনাগ
১৩) কে মগধের রাজধানী রাজগৃহ থেকে সরিয়ে বৈশালীতে স্থানান্তরিত করেন?
- শিশুনাগ
১৪) কে মগধের রাজধানী বৈশালী থেকে সরিয়ে পাটলিপুত্রে স্থানান্তরিত করেন?
- কালাশােক
১৫) কে অবন্তীরাজ প্রদ্যোতকে পরাজিত করে অবন্তীনগর দখল করেন?
- শিশুনাগ।
১৬) কালাশােকের ওপর নাম কী?
- পুরানে কালাশােক কে কাকাবর্ন নামে চিহ্নিত করেছে। এবং সিংহলের ইতিহাসে (শ্রীলঙ্কান পাঠ্য) তিনি কালাশােক হিসাবে উল্লেখিত হয়েছেন।
১৭) কার আমলে দ্বিতিয় বৌদ্ধ সঙ্গীতি (সম্মেলন) সংগঠিত হয়েছিল?
- কালশােক
১৮) কোথায় দ্বিতীয় বৌদ্ধ সম্মেলন হয়?
- বৈশালীতে
১৯) দ্বিতীয় বৌদ্ধ সম্মেলনের সভাপতিত্ব কে করেন?
- মহাস্থবির সবাকামী
২০) দ্বিতীয় বৌদ্ধ সম্মেলনে কী হয়েছিল?
- ১০ আচার গৃহীত হয় এবং স্থবিরবাদ ও আচার্যবাদ নামক দুটি মতবাদের | সৃষ্টি হয়। স্থবিরবাদ ১১ টি এবং আচাৰ্যবাদ ৭ টি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল।
২১) শিশুনাগ বংশের শেষ রাজার নাম কী?
- কালাশােক নন্দীবধর্ন মহানন্দিন।
২২) কালাশােকের মৃত্যুর পর কে মগধের সিংহাসনে বসেন?
- কালাশােকের মৃত্যুর পর তার দশ পুত্র পর্যায়ক্রমে মগধ শাসন করেন।
প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন অধ্যায় সম্পর্কিত এরূপ সংক্ষিপ্তরুপ ও প্রশ্নোত্তর পেতে নীচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া যেকোন একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জয়েন করতে পারেন।