চিত্তরঞ্জন দাস
Set by- Manas Adhikary
চিত্তরঞ্জন দাস প্রথম পর্ব। Chittaranjan Das – I
দেশবন্ধু। চিত্তরঞ্জন দাস। বাসন্তী দেবী। কর্পোরেশানের প্রথম মেয়র। অসহযোগ আন্দোলনে প্রথম গ্রেপ্তার। স্বরাজ্য পার্টি। স্বরাজ দল। স্বরাজ্য দলের মুখপত্র। স্বরাজ্য পার্টির সভাপতি। বেঙ্গল প্যাক্টে। গান্ধি-দাস চুক্তি।
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই, আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের কংগ্রেসের অন্যতম চরমপন্থী ব্যক্তিত্ব চিত্তরঞ্জন দাস। এই পর্বে থাকছে চিত্তরঞ্জন দাস সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পরবর্তী পর্বে কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলচনা করা হবে। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
চিত্তরঞ্জন দাস সংক্ষিপ্তরূপ। About Chittaranjan Das.
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস জন্মগ্রহন করেন 1870 সালের 5 নভেম্বর অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের তেলরিরাগ গ্রামে। তাঁর বাবা ছিলেন ভুবনমোহন দাশ ও মাতা নিস্তারিনী দেবী। চিত্তরঞ্জন দাসের বাবা ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাটনী। তিনি 'ব্রাহ্ম জনমত' এর সম্পাদক হওয়ায় কলকাতার সাংবাদিকতা জগতে বেশ পরিচিত ছিলেন। রাজনীতি সচেতন ও দাতা স্বভাবের এই মানুষটি সবসময় মানুষের কল্যানে কাজ করতেন। চিত্তরঞ্জন দাশ ছোটবেলায় থেকেই বাবাকেই আদর্শ করেই এগিয়ে চলতেন। তিনি 1979 সালে ভবানীপুর লন্ডন মিশানারি স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলের পাঠ্যবই পড়ার চেয়ে পাঠ্যতালিকার বাইরের বই পড়তে তিনি বেশী পছন্দ করতেন। ফলে তাঁর পরীক্ষার ফলাফল খুব ভালো হত না। শৈশবে তিনি বিপিন চন্দ্র পালের সংস্পর্শে আসেন। বিপিন চন্দ্র পাল সেই সময়কার একজন নামকরা রাজনীতিবিদ ও বাগ্মি ছিলেন। তাঁর প্রভাবে চিত্তরঞ্জন দাশ দেশাত্মবোধক গান ও কবিতার একনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে ওঠেন।1986 সালে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করে ভর্তি হন প্রেসিডিন্সী কলেজে। এই কলেজে পড়ার সময় তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন। কলেজ জীবনে তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজের সুরেন্দ্রনাথ প্রবর্তিত স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য হন। একপর্যায়ে তিনি এই সংগঠনের সাধারন সম্পাদকও হন। 1890 সালে তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে বি এ পাশ করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেতে যান। 1893 সালে ব্যারিস্টারি পাশ করে তিনি দেশে ফিরে এসে আইনজীবি হিসাবে 1894 সালে কলকাতা হাইকোর্টে ব্যারিষ্টার হিসাবে তাঁর নাম নথিভুক্ত করেন। আইন পেশার পাশাপাশি তিনি গোপনে বিপ্লবী রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। 1903 সালে কলকাতায় প্রমথ মিত্র ও চিত্তরঞ্জন দাশ প্রথমে 'অনুশীলন সমিতি' প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি এই সমিতির সহ-সভাপতি ছিলেন। অরবিন্দ ঘোষের বন্দেমাতরম পত্রিকার সাথেও তাঁর সম্পৃক্ততা ছিল। আইনজীবি হিসাবে তিনি ক্রিমিনাল কোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন। গরীব মক্কলদের থেকে তিনি কোন পারিশ্রমিক নিতেন না। তিনি সব সময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষ নিতেন। অনেক সময় দেখা গিয়েছে যে, যার পক্ষ নিয়েছেন সেই ব্যক্তি দোষী, তখন ওই ব্যক্তিকে দোষী প্রমান করে দিতে দ্বিধাবোধ করতেন না। আইনজীবি হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করার পর চিত্তরঞ্জন দাশ মফস্বল ছেড়ে কলকাতায় প্র্যাকটিস শুরু করেন এবং পুনরায় সিভিল কেসগুলো পরিচালনা করে বেশ সাফল্য অর্জন করেন। সাথে সাথে রাজনীতিতেও পূর্বের চেয়ে বেশী সময় দেন। 1906 সালে কংগ্রেসের সভাপতিরূপে নিযুক্ত হন। ‘কুতুবদিয়া রাজবন্দী মামলা— দেশবন্ধুকে প্রথম জীবনে একজন আইনজীবি হিসাবে তাঁর দক্ষতা প্রমান করতে সাহায্য করে। অন্তরীন-স্থল ত্যাগ করে চট্টগ্রাম যাওয়া ছিল এই মামলায় 17 জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ। চিত্তরঞ্জন দাশ তাদের জন্য বিনাপয়সায় কাজ করেন এবং তাঁর চমৎকার কৌশলের জন্য বন্দীদের মাত্র দুই মাসের সাজা হয়। 1908 সালে আলিপুর বোমা মামলায় বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষের উপর রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। চিত্তরঞ্জন দাস এই মামলায় বিনা পারিশ্রমিকে যে সাওয়াল জওয়াব দেন তা ছিল জ্ঞান ও দেশপ্রেমের এক অপূর্ব নিদর্শন। এই বিচারে শ্রী অরবিন্দ বেকসুর মুক্তি পান। এরপর একে একে তিনি ‘ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলা, দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলা, দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলা, আলিপুর ট্রাঙ্ক মার্ডার কেস এবং অমৃতবাজার পত্রিকা মামলা’ সাফল্যের সাথে ওকালতি করেন। 1919 সালের 13 এপ্রিল পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরে ব্রিটিশ সরকার জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড ঘটায়। ব্রিটিশের নানা টালবাহানার পর এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচারের জন্য সর্ব-ভারতীয় কংগ্রেস একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন মহাত্মা গান্ধী, সদস্য ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাস, মতিলাল নেহেরু, আব্বাস তৈয়বজী এবং ডঃ জাকির হোসেন। তদন্ত কিমটির অধিকাংশ খরচ বহন করেন চিত্তরঞ্জন দাশ। তিনি তদন্ত কমিটিতে তাঁর প্রজ্ঞার পরিচয় দেওয়ার জন্য হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ তদন্ত বের করে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছিল। এছাড়াও তিনি মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার এবং পাঞ্জাবে সরকারি দমনীতির প্রতিবাদে সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলেন। 1920 সালে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের সময় আইনসভা বর্জনের সিদ্ধান্তের প্রাথমিক বিরোধিতা করলেও তিনি কিছুদিন পর নিজেই অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব কংগ্রেসের অধিবেশনে নিজে উপস্থাপিত করেন এবং গান্ধিজীর ডাকে ব্যারিস্টারি পেশা ত্যাগ করে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। স্বয়ং ভারত সরকার প্রখ্যাত মিউনিশনস বোর্ড ঘটিত মামলায় প্রচলিত নিয়ম উপেক্ষা করে সাহেব এডভোকেট জেনারেল অপেক্ষা অধিক পারিশ্রমিক দিয়ে তাঁকে সরকারি কৌসুলীরূপে নিযুক্ত করেন। অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহন করার জন্য তিনি এ দায়িত্ব পরিত্যাগ করেন। এই অসামান্য ত্যাগের জন্য ভারতবর্ষের জনগন কর্তৃক তিনি ‘দেশবন্ধু' উপাধিতে ভুষিত হন। 1921 সালে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি কারাদন্ডে দন্ডিত হন। 1921 সালে কারাগারে থাকার কারনে আমেদাবাদ কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েও উপস্থিত থাকতে পারেননি তিনি। পরের বছর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গয়া কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করেন। কংগ্রেস নেতাদের সাথে মতবিরোধ হওয়ার দরুন তিনি 1922 সালে কংগ্রসের সভাপতিত্ব ত্যাগ করেন। এরপর তিনি স্বরাজ দল গঠন করেন। মতিলালা নেহেরু এবং দেশবন্ধুর নেতৃত্বে এই দল ভারতের অন্যতম রাজনৈতিক দলে পরিনত হয়। 1919-22 সালের অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলার গুরুত্বপূর্ন নেতৃত্ব ছিলেন তিনি। 1923 সালে চিত্তরঞ্জন দাশ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির মুখ্য প্রতিনিধি রূপে আত্মপ্রকাশ করেন এবং হিন্দু মুসলমানের ঐক্যের লক্ষ্যে 'বেঙ্গল প্যাক্ট' নামক ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদন করেন যা বাংলার হিন্দু- মুসলমান নেতৃবৃন্দের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়। সম্ভবত এই চুক্তির কারনেই 1923 সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত আইনসভা নির্বাচনে চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বাধিন নবগঠিত রাজনৈতিক দল স্বরাজ পার্টী বাংলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে। চিত্তরঞ্জন দাশ ছিলেন কলকাতা করপোরেশনের প্রথম মেয়র। 1924 সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনদমনের জন্য ব্রিটিশ সরকার 1 নং বেঙ্গল অর্ডিনান্স' নামে এক জরুরি আইন পাশ করে। এই আইনের বলে কলকাতা থেকে সুভাষ চন্দ্র বসু, সুরেন্দ্র মোহন সহ প্রথম সারির নেতাদের গ্রেপ্তার করে ব্রিটিশ সরকার। তখন চিত্তরঞ্জন দাশ নিজ বাড়িতে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির বৈঠকের আহ্বান করেন। গান্ধিজী উপলব্ধি করেন যে স্বরাজ্য দলকে দমন করার জন্য এই আইন পাশ করা হয়েছে। এরপর থেকে গান্ধিজী দেশবন্ধুকে অকুণ্ঠ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। চিত্তরঞ্জন দাস 1924 ও 1925 সালে পরপর দুবার মেয়র পদে নির্বাচিত হন। সে সময়ের বিখ্যাত মাসিক পত্রিকা 'নারায়ন' এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন তিনি। মালঞ্চ, সাগর সঙ্গীত ও অন্তর্যামী গ্রন্থের জন্য তিনি কবি ও লেখক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন।
চিত্তরঞ্জন দাশ 1925 সালে 16 জুন দার্জিলিং এ মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর পৈতৃক ভিটা জনসাধারনের জন্য দান করে যান। সেখানে চিত্তরঞ্জন সেবাসদন গড়ে ওঠে। তাঁর প্রয়ান সংবাদে শোকার্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন 'এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রান, মরনে তাহাই তুমি করে গেলে দান। জীবনানন্দ দাশ তাঁর স্মরনে দেশবন্ধুর প্রয়ান নামক একটি কবিতা রচনা করেন, যা বঙ্গবানী পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তকালে জীবানন্দ দাসের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরা পলকে প্রকাশিত হয়।
চিত্তরঞ্জন দাস দ্বিতীয় পর্ব>>>>
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া Telegram গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
টেলিগ্রাম গ্রুপ এ যোগদান করার জন্য - Click Here
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
ইউরোপের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here
দেশবন্ধু। চিত্তরঞ্জন দাস। বাসন্তী দেবী। কর্পোরেশানের প্রথম মেয়র। অসহযোগ আন্দোলনে প্রথম গ্রেপ্তার। স্বরাজ্য পার্টি। স্বরাজ দল। স্বরাজ্য দলের মুখপত্র। স্বরাজ্য পার্টির সভাপতি। বেঙ্গল প্যাক্টে। গান্ধি-দাস চুক্তি।