মাৎস্যন্যায়
Set By - Manas Adhikary
মাৎস্যন্যায় প্রথম পর্ব। Mathsyanay Part -I
মাৎস্যন্যায়| মৎস্যন্যায়| Mathsyanyay.
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো মাৎস্যন্যায়। এই পর্বে থাকছে মাৎস্যন্যায় সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পরবর্তী পর্বে মাৎস্যন্যায় সম্পর্কিত আরও কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর আলচনা করব। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
মৎস্যন্যায় সংক্ষিপ্তরূপ। About Mathsyanyay.
প্রাচীন বাংলার ইতিহাসকে মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে গুপ্ত শাসন পর্যন্ত, দ্বিতীয়ভাগে গুপ্ত-উত্তরকাল থেকে শশাঙ্কের শাসনামল পর্যন্ত এবং তৃতীয় ভাগে শশাঙ্ক পরবর্তী বিশৃঙ্খলার যুগ থেকে পাল ও সেন শাসনামল পর্যন্ত। মাৎস্যন্যায়ের সময়কালটি ছিল তৃতীয় ভাগের প্রথমদিকে ৬৫০ খ্রীস্টাব্দ থেকে ৭৫০ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় একশ বছর। শশাঙ্কের রাজত্বের পরবর্তী প্রায় একশ বছর বাংলার ইতিহাস অনেকাংশেই অন্ধকারাচ্ছন্ন। তথ্যের অভাবে এ সময় অর্থাৎ সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি হতে অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি কাল পর্যন্ত বাংলার ইতিহাস রচনা করা খুবই দুঃসাধ্য। হিউয়েন সাঙ এর বিবরন অনুযায়ী তৎকালীন বাংলার পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের উল্লেখ আছে। সেই রাজাগুলি হলো- কজঙ্গল, পুণ্ড্রবর্ধন, কর্ণসুবর্ন, সমতট ও তামলিপ্ত। আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প গ্রন্থেও উল্লেখ আছে যে শশাঙ্কের মৃত্যুর পর অভ্যন্তরীন বিভিন্ন বিদ্রোহের ফলে গৌড়রাষ্ট্রটি পুরোপুরিভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। নিধনপুর তাম্রশাসনে বলা আছে যে, শশাঙ্কের মৃত্যুর পর তার বিরোধী শক্তিজোট (হর্ষবর্ধন ও ভাস্করবর্মা) গৌড়রাজ্য দখল করে নিয়েছিলেন। আশরাফপুর তাম্রশাসনানুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বাংলায় পরবর্তী গুপ্তবংশ ও খড় বংশ নামে দুটি রাজবংশের উদ্ভব ঘটে। কিন্তু কোন রাজবংশই বেশিদিন নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে পারেনি। অষ্টম শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলা যে একের পর এক বৈদেশিক আক্রমনের সম্মুখীন হয়েছিল তার যথেষ্ট প্রমান পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক শক্তিগুলো হলো- উত্তর ভারতীয় শৈল বংশ, কাহ্নকুব্জের রাজা যশোবর্মা, কাশ্মীররাজ ললিতাদিত্য, ভাগদত্ত বংশীয় কামরূপরাজ শ্রীহর্ষ প্রমুখ। এইসব বিদেশী শত্রুর উপরিউপরি আক্রমনে বাংলার রাজনৈতিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা ও অরাজকতার সৃষ্টি হয়। এই অরাজকতাকেই পাল তাম্রশাসনে 'মাৎস্যন্যায়' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
সংস্কৃত শব্দ মাৎস্যন্যায় এর আক্ষরিক অর্থ হল 'মাছের ন্যায়'। মাছেদের জগতে বড় মাছ, ছোট ছোট মাছদের ধরে খেয়ে নেয়। অর্থাৎ দুর্বল নিমেষেই হয়ে যায় সবলের খাদা। যদিও মাছেদের রাজ্যে এটাই নিয়ম, কিন্তু মানব সভ্যতায় তা ঘোরতর অন্যায়। মাৎস্যন্যায় শব্দ দ্বারা সেই সময়, রাষ্ট্র বা সমাজ ব্যবস্থার অবস্থাকে নির্দেশ করা হয় যখন, মাছেদের জগতের মতই ছোটরা বড়দের হাতে, দুর্বলরা সবলদের হাতে, কিংবা ক্ষমতাহীনরা শোষিত হয় ক্ষমতাবানদের হাতে।
কোন বিশেষ রাজশক্তি না থাকায় বড় বড় শাসকরা ছোট ছোট শাসকদেরকে বিভিন্নভাবে অত্যাচার করত। সেই সময়ে পুরো সমাজ কিংবা রাষ্ট্রকে গ্রাস করে অরাজকতা আর বিশৃঙ্খলা। সমাজ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় স্বাভাবিক নিয়ম কিংবা সমতা। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, যখন বিচারের অভাবে ক্ষমতাবান দুর্বলকে গ্রাস করে, যেমন বড়ো মাছ সাবাড় করে ছোট মাছকে তখনই সেই অবস্থাকে বলা হয় মাৎস্যন্যায়। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর যোগ্য উত্তরসূরীর অভাবসহ নানা কারনে বাংলার আকাশে যে ঘোর অন্ধকারময় ও বিশৃঙ্খলা যুগের উত্থান ঘটেছিল তাহাই মাৎস্যন্যায় নামে খ্যাত। খালিমপুর তাম্রশাসন থেকে মাৎস্যন্যায়ের বিশদ বিবরন পাওয়া যায়।
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here