নমস্কার
অভিনব একাডেমীতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। এই পর্বে আমরা জানবো ভুগােলের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ন টপিক ‘পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকা’ সম্পর্কে। বিগত বিভিন্ন চাকুরীর পরীক্ষার প্রায় প্রত্যেকটিতে পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকা থেকে ন্যূনতম একটি প্রশ্ন আসতে দেখা গিয়েছে। তাই এই টপিকটি যেকোন চাকুরীর পরীক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। আমি আমার সাধ্যমতাে চেষ্টা করেছি এই পােষ্টে পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকার সমস্ত দিকগুলি তুলে ধরার। এই পােষ্টের শেষের দিকে এই টপিকের উপর মকটেষ্টের একটি লিংক দেওয়া রইল যার মাধ্যমে আপনি আপনার এই টপিকটির প্রস্তুতির অগ্রগতি সম্বন্ধে একটি ধারনা পেয়ে যাবেন। এছাড়া বিভিন্ন টপিকের উপর মকটেস্ট দিতে নীচে দেওয়া আমাদের টেলিগাম গ্রুপ বা হােয়াটস অ্যাপ গ্রুপগুলির যে কোন একটিতে যােগদান করতে পারেন।
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া যেকোন একটা গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
টেলিগ্রাম গ্রুপ এ যোগদান করার জন্য - Click Here
পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকা
Set By - Manas Adhikary
ভুমিরূপ, শিলালক্ষন, জলবায়ু, নদনদী ও উদ্ভিদের বৈচিত্র্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের মাটি সৃষ্টি হয়েছে৷ উৎপত্তি, গঠন, বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি ও উপাদানের ভিত্তিতে রাজ্যের মাটিকে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।
ক) পার্বত্য অঞ্চলের বাদামী পডজল মৃত্তিকা
খ) তরাই অঞ্চলের ধূসর-বাদামি মৃত্তিকা
গ) মালভূমি অঞ্চলের বাদামী ও লালচে রঙের ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা
ঘ) সমভূমি অঞ্চলের উর্বর পলিমৃত্তিকা
ঙ) উপকূলের লবনাক্ত মৃত্তিকা
পার্বত্য অঞ্চলের বাদামী পডজল মৃত্তিকা
পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে শিলিগুড়ি মহকুমা বাদে সমগ্র দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রাম ও কালচিনি থানা এলাকায় পার্বত্য মাটি রয়েছে৷ এই মাটি পডজল মাটি নামে পরিচিত। অত্যাধিক বৃষ্টিপাতের ফলে উপরি স্থলের লােহা, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়ামের ক্ষার জাতীয় পদার্থ দ্রবীভূত ও অপসারিত হয়ে নিচের স্তরে হার্ড প্যান গড়ে ওঠে। ফলে পৃষ্ঠস্তরে জৈবপদার্থ ও বালি সমৃদ্ধ ধূসর রঙের আম্লিক মাটি গড়ে ওঠে। এই মাটি জৈব পদার্থ ও বালি সমৃদ্ধ অম্লধর্মী। এর উপরিস্তরের বালি অধিক্যের জন্য ধূসর রঙের হয় আবার কখনাে বা হালকা বাদামি রঙের হয়। এই মাটিতে জৈবপদার্থ থাকলেও খনিজদ্রব্য বিশেষ না থাকার জন্য মাটি অনুর্বর। এই মাটির ধৌতক্ষয় ও ধস প্রবনতা অনেক বেশি। এখানে চা, কমলালেবু সিঙ্কোনা, বিভিন্ন মশলা, ফলমূল, তামাক, ভুট্টা, আলু চাষ হয়৷
তরাই অঞ্চলের মৃত্তিকা
পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশে তরাই-ডুয়ার্স অঞ্চলে দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমা এবং আলিপুদুয়ার ও জলপাইগুড়ির উত্তরাংশে এই ধরনের মাটি দেখতে পাওয়া যায়৷ এই মাটিকে তরাই মাটিও বলা হয়ে থাকে। এই মাটি অপেক্ষাকৃত কম আম্লিক হয়৷ উপরের স্তরে খনিজ পদার্থ সিলিকেট ও লােহার অক্সাইড থাকার জন্য এর রঙ গাঢ় ধূসর ও বাদামি রঙের হয়৷ এই অঞ্চলে গভীর বনভূমি থাকার জন্য মাটিতে জৈবপদার্থের পরিমান অপেক্ষাকৃত বেশী ফলে এই মৃত্তিকা পূর্বে উল্লেখিত পডজল মৃত্তিকা অপেক্ষা বেশী উর্বর হয়৷ এই মৃত্তিকার জলধারন কম হয়৷ উর্বরতা বেশী হওয়ার দরুন এই মাটিতে চা, ধান, গম, আলু, কমলালেবু, আনারস, জোয়ার ইত্যাদি চাষ হয়৷
মালভূমি অঞ্চলের ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা
ল্যাটিন শব্দ ‘ল্যাটার’ কথাটির অর্থ হল ইট। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমদিকে সমগ্র পুরুলিয়া জেলাসহ বর্ধমান, মেদিনিপুর, বীরভূম ও বাঁকুড়া জেলার পশ্চিমদিকের অংশ এবং দক্ষিন দিনাজপুর ও মালদহ জেলার বরেন্দ্রভূমি নিয়ে পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলটি গঠিত হয়েছে। এই অঞ্চলটি নবগঠিত ঝাড়খন্ড রাজ্যের ছােটনাগপুর মালভুমিরই একটি অংশ। এইসব অঞ্চলের যে লাল রঙের মাটি দেখতে পাওয়া যায় তাহাই ল্যাটারাইট মৃত্তিকা নামে পরিচিত। বর্ষাকালে অত্যাধিক বৃষ্টিপাতের ফলে উপরের স্তর থেকে ক্ষারীয় অক্সাইডগুলি নিমস্তরে* স্থানান্তরিত হয়। ফলে এই মাটি অম্লধর্মী হয়৷ এই মাটিতে মােরাম সৃষ্টি হয়৷ জলধারনক্ষমতা কম হয়৷
সমভূমি অঞ্চলের উর্বর পলিমৃত্তিকা
পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিন দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিন ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর প্রভৃতি জেলায় এই উর্বর পলিমাটি দেখতে পাওয়া যায়।এই মাটির গভীরতা খুব বেশি৷ আম্লিক প্রকৃতির হলেও মাটিতে বালি ও পলির পরিমান বেশি থাকে মাটিটি অত্যন্ত উর্বর প্রকৃতির হয়৷ এই মাটি চাষের পক্ষে অত্যন্ত উপযােগী। গঠন, উৎপত্তি ও অবস্থানের ভিত্তিতে এই মাটিকে দুইভাগে ভাগ করা হয়৷
- প্রাচীন পলিমাটি ও নবীন পলিমাটি।
প্রাচীন পলিমাটির রঙ লালচে বা হালকা লাল এবং নবীন পলিমাটির রঙ প্রধানত ধূসর বাদামী রঙের হয়৷ প্রাচীন পলিমাটির তুলনায় নবীন পলিমাটি বেশী উর্বর হয়।
প্রাচীন পলিমাটি- এই মাটি ভাঙ্গর নামে পরিচিত৷ ল্যাটেরাইট মৃত্তিকাতে পরিনত হওয়ার জন্য পলিমাটি অনেকটা লালচে রঙের হয়৷ সূক্ষ্ম বালির সাথে পলির সংমিশ্রন থাকার জন্য এই মাটির জলধারন ক্ষমতা অনেকটাই বেশী। ফলে চাষ করতে জলসেচ ব্যবস্থার প্রয়ােজন হয় না। বীরভূমের উত্তরপ্রান্তে এবং দক্ষিন দিনাজপুর ও মালদহ | জেলার পূর্বপ্রান্তে এই ধরনের মৃত্তিকা দেখতে পাওয়া যায়৷
নবীন পলিমাটি - এই মাটি খাদার নামে পরিচিত। নদী ও সমুদ্রবাহিত পলি থেকে এই মাটির সৃষ্টি। এই মাটিতে বালি ও কাদার ভাগ সমান সমান থাকে। পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয়
সমভূমি ও নদী উপত্যাকার বিস্তৃত অঞ্চলগুলিতে যেমন- মালদহ, মুর্শিদাবাদের কিছু অংশ, নদীয়া, হুগলী, হাওড়া, উত্তর ও দঙিন* ২৪ পরগনা, মেদিনীর জেলার পূর্বাংশ, কোচবিহার ও দিনাজপুরের কিছু অংশে এই মাটি দেখা যায়৷ এই মাটি অত্যন্ত উর্বর প্রকৃতির। এই মাটিতে ধান, গম, পাট, তৈলবীজ প্রভৃতির চাষ হয়৷ এই অঞ্চলকে প্রধানত পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যভান্ডার বলা হয়৷
উপকূলের লবনাক্ত মৃত্তিকা
সুন্দরবন ও কাঁথি সংলগ্ন উপকুলে এই মাটি দেখতে পাওয়া যায়। এই মাটির গভীরতা খুব বেশি৷ মাটির কনাগুলি খুব সূক্ষ্ম হয়৷ এই মাটিতে জোয়ার ভাটার প্রভাব বেশি বলে মাটিতে লবনের পরিমান অত্যাধিক বেশী এবং আর্দ্র হয়। মাটির রঙ সাধারনত কালচে ধরনের হয়৷ এই মাটি অনুর্বর প্রকৃতির। নারকেল, সুপারি চাষ করা যায়।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১) পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকাকে কয়ভাগে ভাগ করা হয়?
-পাঁচভাগে।
২) পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের মাটির প্রকৃতি কেমন?
- আর্দ্র ও অম্লধর্মী
৩) হার্ডপ্যান কোথায় দেখা যায়?
- পডজল মাটি
৪) পডজল মাটির রাসয়নিক বৈশিষ্ট্য কী?
-অম্লধর্মী
৫) পডজল মাটির রং কেমন?
- ধূসর।
৬) পার্বত্য অঞ্চলে কোন ধরনের মাটি দেখতে পাওয়া যায়?
-পডজল মাটি
৭) পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পার্বত্যাঞ্চলের প্রধান ফসল কী?
-চা
৮) পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পার্বত্যাঞ্চলের মাটি কয়টি স্তর নিয়ে গঠিত?
- ৩টি
৯) তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলের মাটির প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
-বালি বেশি ও কাদা কম
১০) ল্যাটিন শব্দের ‘ল্যাটার’ কথার অর্থ কী?
-ইট।
১১) মৌচাকের মতাে গঠন কোন মৃত্তিকায় দেখা যায়?
- ল্যাটেরাইট মাটি
১২) ল্যাটেরাইট মাটির রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য কী?
- অম্লধর্মী।
১৩) ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা কোথায় দেখতে পাওয়া যায়?
- সমগ্র পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পশ্চিমাংশ।
১৪) মালভূমি অঞ্চলে কোন ধরনের মাটি দেখতে পাওয়া যায়?
-ল্যাটেরাইট মাটি
১৫) মালভূমি ও রাঢ় অঞ্চলের মাটিকে কী বলা হয়?
- ল্যাটেরাইট মাটি।
১৬) পশ্চিমবঙ্গের কোন জেলায় ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা পাওয়া যায়?
-বীরভূম,পুরুলিয়া, বাঁকুড়া
১৭) পশ্চিমবঙ্গের গনগনি অঞ্চলে কোনধরনের মাটি রয়েছে?
-ল্যাটেরাইট মাটি (এটি পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা শহরের কাছে অবস্থতি)
১৮) পশ্চিবঙ্গের সবথেকে উর্বর প্রকৃতির মাটি কোনটি?
- সমভূমি অঞ্চলের পলিমাটি।
১৯) উৎপত্তি অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলের পলিমাটিকে কয়ভাগে ভাগ করা হয়?
- দুই ভাগে। যথা- প্রাচীন পলিমাটি ও নবীন পলিমাটি।
২০) প্রাচীন পলিমাটি কোথায় দেখতে পাওয়া যায়?
- দুই দিনাজপুর ও মালদহ জেলা এবং বীরভূমের পূর্বাংশ ।
২১) নবীন পলিমাটি কোথায় দেখতে পাওয়া যায়?
- মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিন ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্বমেদিনীপুর
২২) নদী তীরবর্তী নবীন পলিমাটিকে কী বলা হয়?
- খাদার
২৩) নদী তীরবর্তী প্রাচীন পলিমাটিকে কী বলা হয়?
- ভাঙ্গর
২৪) কোন মাটিকে পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যভান্ডার বলা হয়?
-পলি মাটি
২৫) কোন মাটির জলধারন ক্ষমতা সবথেকে বেশী?
- পলিমাটি।
২৬) পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ স্থানে কোন মাটি দেখা যায়?
-পলি মাটি
২৭) নদীয়া জেলায় কোন ধরনের মাটি দেখতে পাওয়া যায়?
-পলিমাটি।
২৮) পশ্চিমবঙ্গের উপকূল এবং সুন্দরবন অঞ্চলে যে মাটি দেখতে পাওয়া যায় তার প্রকৃতি কেমন?
- লবনাক্ত ও ক্ষারকীয়।
২৯) দক্ষিন ২৪ পরগনার দক্ষিণাংশে কোন মাটি দেখতে পাওয়া যায়?
-লবনাক্ত মাটি
৩০) কোন মৃত্তিকায় নারকেল ও সুপারী চাষ বেশ ভালাে হয়?
-লবনাক্ত মাটি
৩১) ভারতের মাটি গবেষনা কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত?
-দেরাদুন
৩২) মৃত্তিকা সম্পর্কিত পড়াশােনাকে কী বলা হয়?
-পেডলজি
ধন্যবাদ
ভালাে থাকবেন,
সুস্থ থাকবেন।
পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকা সম্পর্কিত টপিকটির উপর মকটেস্ট দিতে নীচের পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকা মকটেস্ট সূচক ছবিটিিতে ক্লিক করুন।