কোল বিদ্রোহ
(KOL BIDROHO/KOL UPRISING)
Set By –Manas Adhikary
কোল বিদ্রোহ| Kol Rebellion.
কোল বিদ্রোহ। হল্কা। চাইবাসার যুদ্ধ। দিকু। বুদ্ধ ভগত। জোয়া ভগত। ঝিন্দরাই মানিক। সুই মুন্ডা।
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো কোল বিদ্রোহ। এই পর্বে থাকছে কোল বিদ্রোহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সাথে অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
কোল বিদ্রোহ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর| About Kol Rebellion and MCQ.
ভারতের অন্যতম একটি আদিবাসী সম্প্রদায় বা উপজাতি সম্প্রদায় হল কোল৷ এই কোল উপজাতি মানুষজনের বাসভুমি ছিল বিহারের ছােটনাগপুর অঞ্চলে। আমরা জানি যে, আদিবাসী মাত্রই অত্যন্ত পরিশ্রমী হয়ে থাকেন। কোলদের ক্ষেত্রেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয় নি। কোলরা যখন বিহারের ছােটনাগপুর অঞ্চলে এসছিলাে, তখন এই অঞ্চলটি দুর্ভেদ্য অরন্য দ্বারা ঘেরা ছিলাে। তারা এই দুভেদ্য জঙ্গল কেটে কৃষিক্ষেত্র তৈরী করে সেখানে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তারা যৌথভাবে অর্থাৎ একসঙ্গে কৃষিকাজ করত এবং নিজেদের পৃথক উপজাতীয় আইন ও বিচারব্যবস্থা দ্বারা নিজেদেরকে স্বাধীনভাবে পরিচালিত করত। ভারতবর্ষে ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রতিটি জনজাতিই পরাধীনতার শিকার হন। আদিবাসী সমাজও এর ব্যতিক্রম ছিলাে না। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল ও অরন্য অধ্যুষিত অঞ্চলে আদিবাসীরা প্রাচীনকাল থেকেই স্বাধীনভাবেই নিজেদেরকে পারিচালিত করত৷ প্রাচীন ও মধ্যযুগের কোন শাসকই তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে তাদেরকে বিব্রত করত না। তারা সর্বদাই স্বাধীনভাবে বসবাস করত। অর্থাৎ, ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে সম্পূর্ন স্বাধীনভাবে নিরুপদ্রবে কোলরা বিহারের ছােটনাগপুর অঞ্চলে তাদের জীবনযাত্রা অতিবাহিত করত।
ভারতের ইতিহাসে শাসনক্ষমতার পরিবর্তন আসলে এই আদিবাসী এলাকাগুলােতেও প্রভাব পড়ে। অর্থাৎ ব্রিটিশ সরকার তাদের অন্যায় অত্যাচার, কোল আদিবাসী উপজাতিদেরও ছেড়ে দেয়নি। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বিশেষত, ১৮২০ দশকের পর থেকেই কোলদের স্বাধীন জীবনধারা ও স্বাধীন সত্ত্বা বিঘ্নিত হয় ঔপনিবেশিক শােষনের শিকার হয়ে ওঠার জন্য। এই জনজাতির উপর ব্রিটিশ সরকার রাজস্ব বৃদ্ধি, কালাে আইন, নারী নির্যাতন, নিজস্ব জমি থেকে কোল আদিবাসীদের উৎখাত প্রভৃতি অত্যাচার চালায়। ব্রিটিশ সরকারের এই নির্মম অত্যাচরের ফল হিসাবে কোলরা বিদ্রোহ সংগঠিত করে। কোল আদিবাসীরা ১৮২০-১৮২১ ও ১৮৩১- ১৮৩২ সাল দুটি পর্যায়ে বিদ্রোহ সংঘটিত করেছিল। এই দুটি পর্যায়ের বিদ্রোহের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়টি ছিল বেশী সংঘটিত। চার্লস মেটাকফের সেক্রেটারি মেজর সাদারল্যান্ডের মতে এটি ছিল দাস বিদ্রোহের মতাে।
কোল বিদ্রোহের কারন সমূহ
ক) রাজস্ব বৃদ্ধি - ১৮২০ সাল থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছােটোনাগপুর অঞ্চলের শাসনভার গ্রহন করে এই অঞ্চলটিকে বিভিন্নভাগে ভাগ করে বাইরে থেকে আগত হিন্দু, মুসলিম, শিখ মহাজনদের ইজারা দেয়৷ কোম্পানির দেওয়ান মাধব সিং অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করলে হতদরিদ্র ও অসহায় কোলরা সর্বস্বান্ত হয়ে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
খ) ব্রিটিশের কালা আইন- ব্রিটিশের বিচারব্যবস্থা ও রাজস্বব্যবস্থায় কিছু ‘কালা আইন’ কোলদের আর্থ সামাজিক জীবনে ছন্দপতন ঘটেয়৷ কোলদের বাধ্য করা হয় ফসলের পরিবর্তে নগদ অর্থে খাজনা দিতে। কিন্তু ফসল বিক্রি করতে গিয়ে কোলরা মহাজন ও ব্যবসায়ীদের হাতে প্রতারিত হয়৷ ফলে তারা বিদ্রোহের রাস্তায় যায়৷
গ) ঐতিহ্যে আঘাত - কোম্পানির শাসনকালে কোল উপজাতি গােষ্ঠির লােকেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদেরকে আফিম চাষে বাধ্য করানাে হয়। এই ঐতিহ্য বিরােধি কাজ তারা মেনে নিতে পারে নি। ঘ) অত্যাচার - সামান্য অপরাধ বা বিনা অপরাধেও কোল পরিবারের পুরুষদের তুলে নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হত। পাশাপাশি কোল পরিবারগুলির মেয়েদেরও অসম্মান করা হত।
এসব কিছু কোলদেরকে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করে তােলে।
প্রথম পর্যায়ের বিদ্রোহ
১৮২০ সালে কোলরা প্রথম বিদ্রোহ শুরু করে। এই সময় পােড়াহাটের করদ রাজা ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্র করে কোলদের কাছ থেকে বলপূর্বক খাজনা আদায় শুরু করলে কোলরা বিদ্রোহে ফেটে পড়ে। এই সময় কোলরা রাজপরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষনা করলে পােড়াহাটের রাজা ইংরেজদের সাহায্য প্রার্থনা করে। এই সুযােগে ইংরেজ কোম্পানি ছােটনাগপুর এলাকায় নাক গলানাের সুযােগ পেয়ে যায়৷ ১৮২১ সালে চাইবাসার যুদ্ধে ইংরেজ সেনাপতি রােগসেস এর কাছে কোলরা পরাজিত হয়। এরপর ছােটনাগপুর এলাকায় কোম্পানির নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কোলদের উপর নেমে আসে জমিদার, মহাজন ও বিদেশী দিকুদের শােষন।
দ্বিতীয় পর্বের বিদ্রোহ
১৮৩১ সালে রাঁচী জেলার মুন্ডা ও ওঁরাও সম্প্রদায়ের কোলরা প্রথম এই বিদ্রোহ শুরু করে। পরে তা সিংভূম, মানভূম, হাজারিবাগ ও পালমৌতে ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ বর্তমান বিহার ও ঝাড়খন্ডের বিস্তীর্ন অঞ্চলে দ্বিতীয় পর্বের কোল বিদ্রোহ সংগঠিত হয়েছিল৷
বিদ্রোহের নেতৃবৃন্দ
কোল বিদ্রোহের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রধান নেতৃবৃন্দরা হলেন - বুদ্ধ ভগত, জোয়া ভগত, ঝিন্দরাই মানিক এবং সুই মুন্ডা। এই নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে দ্বিতীয় পর্যায়ের কোল বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারন করে। তারা নাগারা বাজিয়ে এবং আম গাছের শাখা বা যুদ্ধের তীর বিলি করে কোলদের গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহের বার্তা পৌঁছে দিত। একসময় তারা ঘােষনা করে যে সমস্ত বহিরাগত দিকুদেরকে ছােটনাগপুর অঞ্চল ত্যাগ করতে হবে। দিকুরা এই নির্দেশ অমান্য করলে কোলরা বহিরাগত দিকুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষনা করে এবং তাদের ঘর বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। জমিদার, মহাজন, ব্যবসায়ী, ইংরেজ কর্মচারী, পুলিশ, চৌকিদার দারােগা কেউই কোলদের আক্রমন থেকে রক্ষা পায়নি। লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের আমলে এই বিদ্রোহ দমন করা হয়৷ তীব্র দমন নীতি প্রয়ােগ করে প্রায় দুবছরের চেষ্টায় ১৮৩৩ সালে বিদ্রোহ দমন করেছিল ক্যাপ্টেন উইলকিনসন।
এই বিদ্রোহের ফলে কোলদের জন্য দক্ষিন পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি গঠন করে ব্রিটিশ সরকার কোলদের পৃথক অস্তিত্ব স্বীকার করে নেন। দক্ষিন পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি থেকে মহাজনদের বিতাড়িত করা হয় এবং কোলদের জমি রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এছাড়াও উক্ত অঅঞ্চলে বৃটিশ আইন কানুনের বদলে কোলদের নিজস্ব আইন কানুন প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়৷
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১) কোলদের নিবাস কোথায় ছিল?
- বিহারের ছােটনাগপুর
২) কোলদের বিভিন্ন সম্প্রদায়গুলি কি কি?
- হাে, মুন্ডা, ওরাঁও।
৩) কোল বিদ্রোহ কোথায় দেখা দিয়েছিল?
- ছােটনাগপুর অঞ্চলে এবং রাঁচিতে।
৪) হল্কা কথার অর্থ কী?
- অঞ্চল।
৫) ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার আগে কোলরা আইনের অধিনে ছিল?
-স্বশাসিত
৬) কোল বিদ্রোহ কোন গভর্নর জেনারেলের আমলে দেখা দিয়েছিল?
-উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক।
৭) কোলদের ঐতিহ্য বিরােধি ছিল কোনটি?
- আফিম চাষ করা
৮) কোলরা কিসের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহের সংকেত পাঠাত?
- নাগারা বাজানাে, আম গাছের শাখা পাঠানাে, তীর পাঠানাে
৯) কোল বিদ্রোহের সূচনা হয় কবে?
- ১৮২০-১৮২১
১০) কোল বিদ্রোহ কয়টি পর্যায়ে হয়েছিল?
- দুটি পর্যায়ে।
১১) কোলরা কার বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ ঘােষনা করেছিল?
- পােড়াহাটের করদ রাজা।
১২) কোলরা বিদ্রোহ ঘােষনা করলে পােড়াহাটের করদ রাজা কাদের সাহায্য প্রার্থনা করেন?
- ইংরেজদের।
১৩) কোলদের প্রথম পর্যায়ে বিদ্রোহ থমকে যায় কোন যুদ্ধে কোলদের পরাজয়ের ফলে?
- চাইবাসার যুদ্ধে
১৪) চাইবাসার যুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল?
- কোলদের সাথে ইংরেজদের
১৫) চাইবাসার যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীর নেতৃত্ব দেন কে?
- রােগসাস।
১৬) দ্বিতীয় পর্যায়ের কোল বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?
- ১৮৩১- ৩২ সালে
১৭) দিকু কথার অর্থ কী?
- বহিরাগত
১৮) কাদেরকে দিকু বলা হত?
- ছােটোনাগপুরের নিবাসী সেই অঞ্চলের ইজারাপ্রাপ্ত হিন্দু, মুসলিম ও শিখ এই সকল মহাজনদেরকে দিকু বলত৷ একথায় আদিবাসী এলাকায় শােষনকারী বহিরাগত দিকু নামে পরিচিত ছিল।
১৯) কোল বিদ্রোহ দমনে ব্রিটিশ বাহিনীর নেতৃত্ব কে দিয়েছিলেন?
-ক্যাপ্টেন উইলকিনস।
২০) ছােটনাগপুর অঞ্চল সরাসরি কবে কোম্পানির শাসনাধীনে চলে যায়?
-১৮২০ সালে
২১) দক্ষিন-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি কোন বিদ্রোহের ফলে গঠিত হয়েছিল?
-কোল বিদ্রোহ
২২) কোল বিদ্রোহের কয়েকজন নেতৃবৃন্দের নাম করাে।
- বুদ্ধ ভগত, জোয়া ভগত, ঝিন্দরাই মানিক এবং সুই মুন্ডা
২৩) কার মতে কোল বিদ্রোহ ছিল দাস বিদ্রোহের মতাে?
- চার্লস মেটাকফের সেক্রেটারি মেজর সাদারল্যান্ডের
২৪) কোল বিদ্রোহে কোলরা ছাড়া আর কোন কোন উপজাতি বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেন?
- মুন্ডা, হো, ওঁরাও প্রভৃতি
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
ইউরোপের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here
কোল বিদ্রোহ। হল্কা। চাইবাসার যুদ্ধ। দিকু। বুদ্ধ ভগত। জোয়া ভগত। ঝিন্দরাই মানিক। সুই মুন্ডা।