ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন 1946
Set by- Manas Adhikary
ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন 1946 প্রথম পর্ব। Cabinet Mission, 1946 Part-I.
ওয়াভেল পরিকল্পনা। ক্যাবিনেট মিশন। মন্ত্রী মিশন। সিমলা বৈঠক। ক্যাবিনেট মিশনের সদস। ক্যাবিনেট মিশনের লক্ষ্য। ক্যাবিনেট মিশনের সুপারিশ।
নমস্কার, অভিনব একাডেমিতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই, আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন 1946 । এই পর্বে থাকছে ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন 1946 সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পরবর্তী পর্বে কিছু অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর। পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Competitive exam: UPSC,WBPSC, WBCS, SLST, WBP SI, WBP Constable, SSC, PSC, School Service, Railway exam etc) এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।এছাড়াও আমাদের এই ব্লগে আপনি পেয়ে যাবে Indian History (Ancient, Medieval, Modern), Europe History, Geography, Gk, Bio-logy, Polity, child psychology, Environment Science, Pedagogy ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন 1946 সংক্ষিপ্তরূপ। About Cabinet Mission, 1946.
ওয়াভেল পরিকল্পনা
লর্ড লিনলিথগোর পর 1943 সালের অক্টোবর মাসে লর্ড আর্কিবন্ড ওয়াভেল ভারতের বড়লাট হিসাবে নিযুক্ত হন। ভারতীয়দের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত স্বাধীনতার দাবি সম্পর্কে সচেতন হয়ে লর্ড ওয়াভেল ভারতে রাজনৈতিক সমস্যার সমাসধানে এগিয়ে আসেন। ভারতে রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িক সংকট মীমাংসায় মহাত্মা গান্ধী ও মহম্মদ জিন্না আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়, তা দূর করার জন্য তিনি 1945 সালে খসড়া পরিকল্পনা প্রস্তুত করেন। 1945 সালের 31 শে মে লর্ড ওয়াভেল তাঁর খসড়া পরিকল্পনাটি ব্যক্ত করেন। এটিই ওয়াভেল পরিকল্পনা নামে পরিচিত।
ওয়াভেল পরিকল্পনার সুপারিশ সমূহঃ-
ক) সংবিধান রচনার পূর্বে একটি অন্তবর্তী সরকার গঠন করা।
খ) এই সরকারে হিন্দু মুসলিম এবং অন্যান্য অনুন্নত সম্প্রদায়ের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
গ) গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিলে একমাত্র গভর্নর জেনারেল এবং সেনাধ্যক্ষ ছাড়া আর সকল সদস্যই হবেন ভারতীয়।
ঘ) ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরক্ষার দায়িত্ব বৃটিশ সেনাধ্যক্ষের হাতে থাকবে।
এই প্রস্তাবগুলি আলোচনা করার জন্য লর্ড ওয়াভেল সিমলাতে ভারতীয় নেতৃবৃন্দদের নিয়ে একটি সর্বদলীয় বৈঠক করেন 1945 সালের 25 জুন। ইহা সিমলা বৈঠক নামে পরিচিত। এই বৈঠকে কংগ্রেসের পক্ষে মৌলানা আজাদ এবং মুসলিম লীগের পক্ষে মহম্মদ আলি জিন্না উপস্থিত ছিলেন।
ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন 1946
1945 সালের ইংল্যান্ডের নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেট এটলি বরাবরই ভারতকে স্বাধীনতা দানের পক্ষপাতী ছিলেন। 1946 সালের নৌ-বিদ্রোহের অগ্রগতি লক্ষ্য করে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেট এটলি ভারতের রাজনৈতিক সংকট মোচনের জন্য ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্যোগ নেন। তিনি 1946 সালে 23 মার্চ তিন সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রীসভার একটি দলকে ভারতে পাঠান। এই দলে ছিলেন ভারত সচিব স্যার পেথিক লরেন্স, বানিজ্য সচিব স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস এবং নৌ-সচিব মিস্টার এ. ভি. আলেকজান্ডার। এটি ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন নামে পরিচিত।
ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশনের উদ্দেশ্য ছিল দুটি, যথাঃ-
ক) ভারতকে স্বাধীনতা দান এবং ভবিষ্যৎ সংবিধান রচনার জন্য যে গণপরিষদ তৈরি হবে তার গঠন, পদ্ধতি ও নীতি নির্ধারন করা।
খ) ভারতের সকল রাজনৈতিক দলগুলির বৃহত্তর মতানৈক্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালের জন্য একটি জনপ্রতিনিধি ভিত্তিক সরকার গঠন করা।
ক্যাবিনেট মিশনের রিপোর্টে যে সব সুপারিশের কথা বলা হয়-
ক) বৃটিশ শাসিত ভারত ও আঞ্চলিক রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হবে এবং ক্ষমতা বণ্টন নীতি গৃহীত হবে।
খ) ভারতের হিন্দু অধ্যুষিত প্রদেশগুলি 'ক'; মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশগুলি 'খ' এবং বাংলা ও আসাম প্রদেশকে 'গ' শ্রেণিভুক্ত করা হবে।
গ) এই প্রদেশগুলির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে ভারতের সংবিধান রচনার জন্য একটি গণপরিষদ গঠিত হবে।
ঘ) সাম্প্রদায়িক নীতি ভিত্তিতে গণপরিষদ গঠন ও প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচন হবে।
ঙ) কোনো প্রদেশ ইচ্ছা করলে নতুন সংবিধান রচনা করতে পারবে।
চ) এছাড়া নতুন সংবিধান রচনা না হওয়া পর্যন্ত ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দল সমূহের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অন্তবর্তী সরকার গঠিত হবে।
ক্যাবিনেট মিশনের গুরুত্বঃ-
ক্যাবিনেট মিশন তাঁদের পরিকল্পনায় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করে এক ঐক্যবদ্ধ ভারত গঠনের প্রস্তাব করেছিল। ভারতকে অবিভক্ত দেখে স্বাধীনতা দেওয়ার এটাই ছিল বৃটিশ সরকারের শেষ আন্তরিক প্রয়াস। এছাড়া ক্যাবিনেট মিশন ভারতীয় রাজন্যবর্গকে নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের ভাগ্য নির্ধারনেরও সুযোগ দিয়েছিল। মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাব অনুসারে একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা ছিল বলে মুসলিমগণ সন্তুষ্ট হয়েছিল। এই মিশনে সমস্ত প্রস্তাবে সম্মতি থাকলেও সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে প্রদেশগুলির শ্রেনিবিভাগ ও চিহ্নিত করণ কংগ্রেসের মনঃপুত হয়নি। শেষপর্যন্ত বৃটিশ সরকার কংগ্রেসকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও সংবিধান সভাকে যথাসম্ভব স্বাধীনভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিলে কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব গ্রহন করে।
ক্যাবিনেট মিশন প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়াঃ-
লর্ড ওয়াভেল কংগ্রেস সভাপতি জওহরলাল নেহেরুকে অন্তবর্তী সরকার গঠনের আহ্বান জানালে মহম্মদ জিন্না ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হয়ে পাকিস্তান দাবি আদায়ের জন্য 1946 সালের 16 আগষ্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের ডাক দেন। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ঐ দিনটি শান্তিপূর্নভাবে অতিবাহিত হলেও কলকাতা নোয়াখালি এবং ত্রিপুরায় ব্যাপকভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামা বেঁধে যায়। অসংখ্য জীবনহানি, সম্পত্তি নাশ, লুঠতরাজের মধ্য দিয়ে দিনটি অতিবাহিত হয়। বাংলার দাঙ্গার প্রতিক্রিয়ায় বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব প্রভৃতি স্থানে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের আগুন জ্বলে ওঠে। আইন শৃঙখলার চরম অবনতি হয়। সবচেয়ে লক্ষ্যনীয় ব্যাপার কেন্দ্রের ওয়াভেল সরকার কিংবা রাজ্য লীগ সরকার কেউই এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিবারণে কোনো কার্যকর ভুমিকা নেওয়ার চেষ্টা করেনি।
ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন দ্বিতীয় পর্ব>>>>
ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
প্রতি সপ্তাহের মকটেস্টের জন্য নীচে দেওয়া Telegram গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
টেলিগ্রাম গ্রুপ এ যোগদান করার জন্য - Click Here
পরিবেশের বিভিন্ন টপিকগুলি সম্পর্কে জানতে Click Here
ইউরোপের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্বন্ধে পড়তে - Click Here
মধ্য যুগের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে পড়তে - Click Here
ভারতের ইতিহাসের পিডিএফ ডিটেইলস পেতে Click Here
ওয়াভেল পরিকল্পনা। ক্যাবিনেট মিশন। মন্ত্রী মিশন। সিমলা বৈঠক। ক্যাবিনেট
মিশনের সদস। ক্যাবিনেট মিশনের লক্ষ্য। ক্যাবিনেট মিশনের সুপারিশ।